|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
আমার তো বিরহ লগ্নেই জন্ম |
তাই কি প্রেমের সব গানই হিট? ‘অটোগ্রাফ’এর পর ‘২২শে শ্রাবণ’-এও ছক্কা। এক গানেই
শেষ সমালোচনার জবাব দিতে পারলেন অনুপম রায়? উত্তর খুঁজলেন সংযুক্তা বসু |
পত্রিকা: আপনি নিরামিশাষী?
অনুপম: না তো। (অবাক হয়ে) কেন? কেন? হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
পত্রিকা: না, আপনার গানে ‘পেঁয়াজকলি’, ‘নতুন আলুর খোসা’, ‘ও বেলার ডাল ভাত’ এই সব উপমা। মাছ মাংসের কথা তো দেখছি না....
অনুপম: (খুব হেসে) একেবারেই নিরামিষাশী নই। খাওয়াদাওয়ার বেলায় প্রচণ্ড আমিষ। যত রকমের মাছ মাংস হয় সব খাই।
পত্রিকা: আপনার গানে অদ্ভুত সব উপমা আর ভিশু্যয়াল থাকে। ‘যে ভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত’, কিংবা ‘দেওয়াল ঘড়ির কাঁটায় তুমি লেগে আছ’। ঠিক কোন মানসিকতা থেকে এই ধরনের লাইন মাথায় আসে?
অনুপম: আমি খুঁজে খুঁজে আটপৌরে জীবন থেকে শব্দ বা এক্সপ্রেশন তুলে নিয়ে গানে বসাতে ভালবাসি। যেমন ধরুন সকালে উঠে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো, কিংবা আয়নায় মুখ দেখা, ভাত খেতে বসা, এ সবই আমাদের রোজকার দিনের ঘটনা। এগুলো গানে থাকলে মধ্যবিত্ততার কাছাকাছি বলে মনে হয়।
পত্রিকা: ভাঁড়ারে এখন গানের সংখ্যা কত?
অনুপম: ১৭৫ খানা তো হবেই।
পত্রিকা: তা এই ১৭৫টা গানের পুঁজি নিয়ে শেষমেশ পাকাপাকি কলকাতায়? বেঙ্গালুরু আর ফিরছেন না তা হলে?
অনুপম: হ্যাঁ। চাকরিতে
ইস্তফা দিয়েছি। কোম্পানি মুক্ত করে দিয়েছে আমাকে।
খুব আনন্দে আছি।
পত্রিকা: যে বাজারে সুরকার, গীতিকারদের একটা গান হিট করাতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে সেখানে পর পর দু’টো অ্যালবাম সুপার হিট। তাও আবার সিনেমার গান...
অনুপম: আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু সেই আনন্দে ভেসে যাইনি। যতটুকু আনন্দ হওয়া উচিত ততটাই হচ্ছে।
|
|
পত্রিকা: ধরুন যদি ‘অটোগ্রাফ’ হিট না করত? কলকাতা আসতেন?
অনুপম: সৃজিতদা আমায় বলত ‘তুই দেবুদাকে (সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র) অ্যাসিস্ট করবি? তা হলে তুই কলকাতায় আসতে পারবি। মাসে তুই এত টাকা করে পাবি।’ আমি বলেছিলাম আমার পোষাবে না গো। আসলে আমি নিজেই কিছু একটা করার পথ খুঁজছিলাম। যদি ‘অটোগ্রাফ’ হিট না হত, তা হলে বেঙ্গালুরুতে থেকে নিজের অ্যালবাম বের করার চেষ্টা করতাম। কাঁড়িকাঁড়ি টাকা খসত নিজের। ‘অটোগ্রাফ’ না চললে সৃজিতদা যখন পরের ছবি করত সেখানে হয়তো আমার একটা বা দু’টো গান থাকত। আর শিল্পী হওয়ার সংগ্রামটা চলতেই থাকত। বেঙ্গালুরুতে কী না করেছি! হিন্দি নাটকে মিউজিক দিয়েছি। বাঙালি রেস্টুরেন্টে গান গেয়েছি। অভিনয় করেছি। চিরদিনই খুব কাজ ভালবাসি। ছুটি একদম পছন্দ নয়। ঘুমোলেও মনে হয় সময় নষ্ট হচ্ছে। আট-দশ ঘণ্টা অফিসে প্রাণপণে কাজ করতাম। ফুটবল খেলতাম এক ঘণ্টা। তারপর বেরিয়ে পড়তাম, এই নাটকের রিহার্সাল, ওই গানের রিহার্সাল।
পত্রিকা: কিন্তু টালিগঞ্জে সংগ্রাম তো করলেন না সে ভাবে। সৃজিতের বন্ধু। কাজ পেলেন। প্রথম ছবির গান হিট। পরের ছবিও তাই... ‘ওয়ান সং ওয়ান্ডার’-এর সমালোচনার জবাব দিতে পারলেন কি?
অনুপম: কী বলছেন! এগুলো যা বললাম
স্ট্রাগল নয়?
পত্রিকা: ‘চলো পাল্টাই’ সে রকম হিট গান দেয়নি। তার মানে হিট শুধু সৃজিতের ছবিতে?
অনুপম: ‘চলো পাল্টাই’এর ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’ পুরো হিট। ‘ক্লাসরুম’ গানটাও খুব চলেছে। তবে এটা ঠিক যদি অন্য কোনও পরিচালকের ছবিতে কাজের সুযোগ না পাই তা হলে সৃজিতদার ছবির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য সামনেই আমার একটা একার অ্যালবাম বেরোচ্ছে, তাতে আটটা গান আছে। দেখা যাক...
পত্রিকা: যে তিনটে ছবিতে পরপর সুর করলেন, প্রত্যেকটাতেই মুখ্য চরিত্রে প্রসেনজিৎ। তিনটেই ভেঙ্কটেশের। অর্থাৎ গানের প্রচারটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অন্য নায়ক, অন্য ব্যানারে সফল হবেন?
অনুপম: আমি তো এই জগতে একেবারে নতুন। বুম্বাদা সব নতুনদেরই খুব আপন করে নেন। আর ভেঙ্কটেশ ফিল্মস যে ভাবে গানগুলির প্রচার করেছে, সেটা অন্য কোনও প্রযোজক হলে হত কিনা জানি না। যেমন ধরুন ‘রঙমিলান্তি’। এই ছবিটাতেও আমার একটা গান আছে। কিন্তু সেটা প্রায় অজানাই থেকে গেল। কোনও প্রচারই হল না। তাই সন্দেহ থেকে যায় অন্য কোনও প্রযোজকের গান হলে প্রচার কী হবে?
পত্রিকা: ‘অটোগ্রাফ’এ দেবজ্যোতি মিশ্র নাকি আপনাকে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। এ বার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত কেমন?
অনুপম: দেবুদার (দেবজ্যোতি মিশ্র) সঙ্গে কাজ করার সময় ভালই লেগেছিল। তখন বেঙ্গালুরুতে ছিলাম। কলকাতায় কখন কী হচ্ছে বুঝতে পারতাম না। ‘অটোগ্রাফ’এর মিউজিকে আমার কোনও কনট্রোল ছিল না। নবাগত ছিলাম তো! আসলে আমার হাত থেকে কনট্রোল চলে গেলে খুব অশান্তি হয়। গান লেখা, সুর করা, থেকে রিহার্সাল, মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট, রেকর্ডিং প্রতিটা মুহূর্তে আমি থাকতে চাই। ইন্দ্রদীপদা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন ‘২২শে শ্রাবণ’এ। ওঁর সঙ্গে কাজ করে ভালই লেগেছে।
পত্রিকা: পুরুষ গায়ক বাংলা থেকে বাছলেও মহিলা কণ্ঠের বেলায় শুধু শ্রেয়াই কেন?
অনুপম: এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়। নায়িকার কণ্ঠে শ্রেয়া ঘোষালের গলা ভাল মানাবে বলেই সৃজিতদা তাঁকে নিয়েছে।
পত্রিকা: সিচুয়েশন অনুযায়ী গান লেখেন না। আপনার গান ছবির প্রয়োজন অনুযায়ী বসিয়ে দেওয়া হয়। এই উলট-পুূরাণটা স্বাভাবিক বলে আপনার মনে হয়?
অনুপম: সিচুয়েশন অনুযায়ী গান লেখা মানে তো গানের সিকোয়েন্সের খাঁচার মধ্যে বন্দি হয়ে যাওয়া। তাই মেজাজমর্জি মতোই গান লিখি। সে গুলোই ছবির মুড সং হলে ভাল লাগে। তবে ‘চলো পাল্টাই’ ছবিতে বা ‘বিকেলে ভোরের সর্ষেফুল’ নাটকে সিচুয়েশন অনুযায়ী গান লিখেছি। ভবিষ্যতে যদি কেউ সিচুয়েশন অনুযায়ী গান লেখার ফরমায়েশ করেন অবশ্যই চেষ্টা করব।
পত্রিকা: সুরকার হিসেবে যখন কাজ করছেন তখন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বা ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তরা নিশ্চয়ই আপনার প্রতিযোগী?
অনুপম: এঁরা প্রত্যেকেই উচ্চ মানের সুরকার। প্রতিযোগিতার কোনও প্রশ্ন নেই। বড় জোর বলা যায় আমরা এক সময়ে কাজ করছি। তা ছাড়া অন্য গীতিকার, অন্য সুরকারের জন্য গানও তো গেয়েছি বীরসা দাশগুপ্তর পরের ছবির জন্য।
পত্রিকা: মূল ধারার বাংলা ছবি করবেন? স্বপন সাহা, অঞ্জন চৌধুরী ঘরানার ছবি...
অনুপম: ওঁদের ছবি দেখিনি। এখনও তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করিনি। কিন্তু করব না এমনটাও নয়। ‘চলো পাল্টাই’ ছিল অন্য রকম ছবি। এ রকম তো হতেই পারে যে, আমরা সবাই মিলে কাজ করে অন্য একটা ধারার ছবিকেই আস্তে আস্তে মূল ধারা করে তুলব।
পত্রিকা: অনুপম রায়ের ফ্যান তো প্রচুর। মহিলা ফ্যানের সংখ্যা কেমন?
অনুপম: জানিই না ক’জন মহিলা ফ্যান।
পত্রিকা: সে কি! ফোন-টোন করে না কেউ?
অনুপম: না।
পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন। ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটায় যদি সবাই বিশ্বাস করতে আরম্ভ করে...
অনুপম: যে এটা করবে তার গালে ঠাস করে একটা চড় মারা উচিত। সারাক্ষণ নিজেরটা গোছালাম সেটা হয় না। তা ছাড়া এটা আসলে একটা প্রেমের গান। সেটা নিয়ে এখন অনেক ব্যাখ্যা হচ্ছে।
পত্রিকা: তা আপনার প্রায় সব গানেই দেখি প্রেমের উথালপাথাল ...
অনুপম: আমি আসলে সব সময় প্রেমে থাকি। প্রেমে থাকতে চাই।
পত্রিকা: তা হলে এত বিরহ কেন?
অনুপম: আমার তো বিরহ লগ্নেই জন্ম বলে মনে হয়। (হাসি) বিরহ না থাকলে গান লিখব কী করে? (হাসি)
|
ছবি: সুদীপ আচার্য |
|
|
|
|
|