জি-২০ সম্মেলন শুরু হতে এখনও তিন দিন বাকি। তার আগে এখন থেকেই ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক দৌত্য শুরু করে দিল ভারত।
সেই দৌত্যের একটি দিক যেমন মন্দার ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত ইতালির বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে ভারতীয় কর্তাদের দফায় দফায় বৈঠক (যেখানে ইতালির সঙ্কটমোচনে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে দিল্লি), অন্য দিকে তেমনই ফরাসি অর্থমন্ত্রীকে লেখা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের চিঠি। সেই চিঠিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, কর ফাঁকি সংক্রান্ত তথ্য আদানপ্রদানে ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে সহায়তা করা হোক। বস্তুত, কালো টাকা পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এ বার জি-২০-র মঞ্চে রাখতে চলেছে দিল্লি। সেই প্রস্তাব যাতে অন্য দেশগুলি সমর্থন করে, সে ব্যাপারেও দৌত্য শুরু করেছে সাউথ ব্লক।
আর্থিক মন্দার ধাক্কায় বেশ নাজেহাল ইউরোপ। কানে জি-২০ মহাসম্মেলনের আগে সেই দেশগুলির অনেকের সঙ্গেই দৌত্য শুরু করেছে ভারত। ইতালিও রয়েছে সেই তালিকায়। বস্তুত, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইতিমধ্যেই ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বিশ্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ার কাজে সদর্থক ভূমিকা নিতে চায় মনমোহন সরকার। গত মাসে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে প্রণববাবু জানিয়েছিলেন, মন্দা মোকাবিলায় গোটা বিশ্বকে একজোট হতে হবে। ভারত এই ঐকমত্য তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। দ্বিপাক্ষিক স্তরে বাণিজ্য বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে কিছুটা চাঙ্গাও করতে পারে। সেই লক্ষ্যেই আসন্ন কান সফরে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ববৈঠক চাইছে ভারত। এখনও পর্যন্ত অবশ্য ওই বৈঠক চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত ঠিক রয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক হবে। ইতালির সঙ্গে আর আলাদা করে বৈঠকের প্রয়োজন নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। কেন না, সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী রোমানি সম্প্রতি একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ভারতে হাজির। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা, নগরোন্নয়নমন্ত্রী কমল নাথ, ভারী শিল্পমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁরা। উদ্দেশ্য, বস্ত্রশিল্প, চামড়া, ফ্যাশন, ব্যাঙ্কিং এবং গাড়ি শিল্পের মতো ক্ষেত্রে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করা। রোমানির কথায়, “এর ফলে দু’দেশই উপকৃত হবে। আমরা ভারতে পণ্য রফতানি বাড়াতেও চাই।” তাঁর আরও বক্তব্য, ভারত এবং ইতালির বিভিন্ন সংস্থা যৌথ উদ্যোগেও কাজ করতে পারে। শুল্ক-জনিত সমস্যা-সহ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সব বাধা রয়েছে, সেগুলি সরিয়ে দিতে এর মধ্যেই ভারতীয় কর্তাদের কাছে তাঁরা আবেদন করেছেন। ইতালির নেতাদের বক্তব্য, ভারতের কাছ থেকে যথেষ্ট ইতিবাচক বার্তা পাওয়া গিয়েছে।
ইতালিতে ভারত বছরে ২ লক্ষ টন কফি রফতানি করে। সে দেশের আর্থিক মন্দায় মার খাচ্ছে ভারতের বাণিজ্য। কমবেশি একই অবস্থা অন্য ইউরোপের দেশগুলির ক্ষেত্রেও। এই অবস্থা সামলাতে একজোট হওয়ার কথা বলছে ভারত।
অর্থ মন্ত্রকের এক যুগ্মসচিবের কথায়, “ইউরো-জোনের প্রধান সমস্যাটা কিন্তু রাজনৈতিক। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মিলে ইউনিয়ন তৈরি করেছে। তৈরি হয়েছে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো। কিন্তু নামেই এটি ইউনিয়ন। প্রত্যেকটি দেশের আর্থিক নীতি ভিন্ন, সরকার এবং তার রাজনৈতিক লক্ষ্যও ভিন্ন। কর আদায়ের ধারণধারণও আলাদা। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয়েছে দ্বন্দ্ব।” আগামী ৩ নভেম্বর জি-২০-এর বৈঠকে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন মনমোহন। প্রয়োজনে আর্থিক ভাবে দুর্বল দেশগুলি ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গিয়ে কিছুটা অক্সিজেন পেতে পারে কি না, সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখার পরামর্শও দেবেন বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্তাদের। তার আগে কূটনৈতিক দৌত্যে নেমে সেই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে দিল নয়াদিল্লি। |