|
পাহাড়-সমুদ্রের দেশ বিশাখাপত্তনম
পুজোর মরসুমে কোথায় বেড়ালেন? দেখলেন মরুভূমি না তুষারদেশে
ভূমিকম্প? কাটোয়ার
ভূতনাথ তলা রোড থেকে আজ লিখছে
পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির ছাত্র
ইন্দ্রায়ুধ মুখোপাধ্যায় |
|
সমুদ্র ও পাহাড়ের সহাবস্থান দেখতে হাওড়া থেকে এক দুপুরে চেপে বসলাম করমণ্ডল সুপারফাস্ট ট্রেনে। সঙ্গে বাবা-মা। গন্তব্য বিশাখাপত্তনম। বঙ্গোপসাগরের তীরে বন্দর শহর বিশাখাপটনম বা বিশাখাপত্তনম। একাদশ শতাব্দীতে অন্ধ্র প্রদেশের রাজা বারাণসী যাত্রার সময় বিশ্রাম নিয়েছিলেন এখানে। সেই সময় তিনি কার্তিকের (বিশাখা) মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করেন। সেই থেকেই জায়গার নাম বিশাখাপত্তনম। ১৭৬৮ সালে এর দখল নেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইংরেজরা বিশাখাপত্তনম না বলে ভিজাগপটনাম বা ভিজাগ বা ভাইজ্যাগ বলতে শুরু করে।
তখন ভোর চারটে। নামলাম বিশাখাপত্তনম স্টেশনে। নির্ধারিত হোটেলে গিয়ে উঠলাম। তার পরেই তৈরি হয়ে নিলাম চটপট। ভাড়া গাড়িতে চেপে সকাল ৭টার মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম আরাকু ভ্যালির উদ্দেশে। বিশাখাপত্তনম থেকে নব্বই কিলোমিটার পথ। পাহাড়ের পর পাহাড় ডিঙিয়ে আমাদের গাড়ি যখন বোরা কেভ পৌঁছল, তখন বুঝলাম কেন কাতারে কাতারে মানুষ এখানে আসেন। লক্ষাধিক বছরের পুরনো চুনা পাথরের এই গুহায় অদ্ভুত সব প্রাকৃতিক ভাস্কর্য। স্ট্যালাগমাইট ও স্ট্যালাগটাইট পাথরের প্রাকৃতিক স্থাপত্যে এই গুহার যে কী অপরূপ সৌন্দর্য তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
এর পরে আরাকু ভ্যালি। বোরা থেকে দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। কফি বাগান দেখতে যাওয়া যাবে পূর্বঘাট পর্বতমালার এই সুন্দর উপত্যকায়। এর পরে রয়েছে আদিবাসী মিউজিয়াম। আদিবাসী গ্রাম দেখে সাপরাইল নামের এক পাহাড়ি নদীকে দেখলাম কেমন চালাকি করে পাহাড়ের পাশ দিয়ে নেমে যাচ্ছে। ওই নদীর জলে খেলা করছেন পর্যটকেরা। আরাকুর পার্ক দেখে পাহাড়ি পথ বেয়ে আমরা হোটেলে ফিরলাম রাত ৮টা নাগাদ। |
|
পরের দিন যাত্রা শুরু করলাম সকাল সকাল। সমুদ্রকে ডান দিকে রেখে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে শুরু করলাম পথ চলা। কোথাও সমুদ্র আলতো করে পাড় ছুঁয়ে যাচ্ছে, কোথাও আবার ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ে। ভিমমুনিপত্তনম যাওয়ার রাস্তায় লাল মাটির পাহাড়ের কাছে ঝাউ বনে শেষ হয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের ঢেউয়ের তাণ্ডব। গোস্থানি নদীর মোহনায় ভিমমুনিপত্তনম বা ভিমলি বিচ। এখানে নানা দেবদেবীর মূর্তি ও সন্ন্যাসীদের মূর্তি রাখা আছে। মাঝ দরিয়াতে বেসামাল নৌকাকে মৎস্যজীবীরা কী ভাবে সামাল দেন, তার একটি মূর্তি বড় রাস্তার মাঝে শোভা পাচ্ছে। সুন্দর পরিবেশে জেলেদের গ্রাম। শুধু সারাদিন নাকে লেগে থাকল, শুঁটকি মাছের গন্ধ।
ঋষিকোন্ডা বিচে আসার পথে পড়বে লাল মাটির পাহাড়। এখানে সিনেমার শু্যটিং হয়। প্রথমে ইন্দিরা গাঁধী জুওলজিক্যাল পার্ক ও তার পরে থোতলাকোন্ডা। এর পরে উঠলাম পাহাড়ে। নাম কৈলাশ গিরি। সুন্দর শিব দুর্গার বড় মূর্তি আছে এখানে। সমুদ্রকে এখান থেকে নানা ভাবে দেখা যায়। ভিউ পয়েন্ট থেকে বিশাখাপত্তনম শহর খুবই সুন্দর। ভিইউডিএ পার্ক, বিশাখা মিউজিয়াম ছাড়াও ঘুরে দেখলাম বিখ্যাত কুরসুরা সাবমেরিন। সাবমেরিনটি প্রায় ৯২ মিটার লম্বা ও ৮ মিটার চওড়া। এখানে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৪০ টাকা। তবে ক্যামেরার জন্য ৫০ টাকার টিকিট লাগে। সেখান থেকে এলাম রামকৃষ্ণ বিচে। বিচের পাশ দিয়ে গিয়েছে সুন্দর রাস্তা। বন্দর শহর ইয়ারাডা বিচ দেখলাম। প্রকৃতির শোভা এখানে দেখার মতো। নারকেল বাগানের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে লাল মোরামের রাস্তা। পাশেই রয়েছে বোটিংয়ের ব্যবস্থা। ডলফিন নোজ থেকে শহর দেখার আনন্দই আলাদা।
একই সঙ্গে সমুদ্র আর পাহাড় দেখা হল। হাওড়া ফিরলাম রাতের ট্রেনে। এখনও ভিমলি বিচের জেলে কলোনির সেই গন্ধ যেন গায়ে লেগে। আর চোখে লেগে আছে বিশাখাপত্তনমের সেই সুন্দর মনোরম সমুদ্র।
|
সঙ্গের ছবিটি লেখকেরই পাঠানো
|
লিখুন অনধিক ৩০০ শব্দে। খামে ‘পুজো এক্সপ্রেস’ লিখে পাঠিয়ে দিন
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি,
সিটি সেন্টার,
দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬
অবশ্যই দেবেন ছবি (নিজেদের বাদে)। ছবি মেল করতে চাইলে: durgapuredit@abp.in
(লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয় বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত) |
|
|