|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
গড়ে ওঠে জীবন ও সময়ের অপরূপ দৃশ্যভাষা |
সম্প্রতি আকৃতি গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল ‘ওপেন উইন্ডো’ দলের সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
ওপেন উইন্ডো দলটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। তার পর থেকে তারা প্রতি বছর নিয়মিত একসঙ্গে প্রদর্শনী করেন। যে সব শিল্পী এই দলে রয়েছেন তাঁদের রূপ ভাবনা ও প্রকাশভঙ্গি স্বভাবতই স্বতন্ত্র। এই স্বাতন্ত্র্যের মধ্যেও একটি ঐক্যের কেন্দ্র আছে।
আকৃতি আর্ট গ্যালারির উদ্যোগে সেখানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল এই দলের সম্মেলক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘অবজেকটিভ কোরিলেটিভস’। ১৪ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে দু’জন ভাস্কর-- জনক ঝংকার নার্জারি ও গোপীনাথ রায়। দু’জনেই ভাস্করের প্রচলিত রূপপদ্ধতিকে অতিক্রম করে রূপের নতুন বিন্যাস নিয়ে ভেবেছেন। স্থাপত্যচেতনা ও আধ্যাত্মিকতাকে দু’জন দু’ভাবে প্রসারিত করেছেন।
নার্জারির দুটি কাজ ছিল। একটির শিরোনাম ‘একোলজিকাল লিভিং’। একটি লোহার কড়াই সদৃশ সবুজ পাত্রের ভিতর নীল জল। তার মধ্যে দুটি সাদা ডিম। বৃত্তাকারে ছড়িয়ে লাল রঙের মাছ। উপরে প্রান্তরেখা ঘিরে বিচরণ করছে নানা রকম পশু ও পাখি। প্রতীকী রচনা। এই বিশ্বে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে জীববৈচিত্র, তারই বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনার প্রকাশ এখানে। দ্বিতীয় কাজটির শিরোনাম ‘দ্য আননোন আইল্যান্ড’। একটি প্রস্তরখণ্ডের উপর আর একটি প্রস্তরখণ্ড নিয়ে স্থাপত্যধর্মী রচনা। |
|
শিল্পী: জনক ঝংকার নার্জারি |
গোপীনাথ সিরামিকসে কাজ করেছেন। শিরোনাম ‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’। পাহাড় ও নদী নিয়ে নিসর্গ। অভিনবত্বে উজ্জ্বল।
ছবিতে একেবারে বিমূর্ত কাজ করেছেন চার জন শিল্পী। সুনীল দে-র অনামা অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটিতে তিনটি জ্যামিতিক রূপের সহাবস্থান-- বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র ও বৃত্ত। বুনোটের সূক্ষ্ম কারুকাজ উঠে এসেছে। নৈঃশব্দ্যের স্তব্ধ আলোড়ন। সেই স্তব্ধতাকে যেভাবে বাঙ্ময় করেছেন, তাতেই তাঁর প্রকাশের অন্তর্লীন আধ্যাত্মিকতা। হিরণ মিত্রের সাদা কালো ও ধূসরে স্তিমিত সুরের নিবিড় মায়ার মধ্যে একটি মাত্র লালের ঝংকার এসে যে আলোড়ন তোলে তা বহু দূর পরিব্যাপ্ত হয়ে যায়। প্রদীপ রক্ষিত তাঁর অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসে নিসর্গকে বিমূর্তায়িত করেছেন সূক্ষ্ম ছায়া-প্রচ্ছায়ার সহাবস্থানে। সমীর আইচের অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটির শিরোনাম ‘ডাস্ক’। তাতে অবশ্য গোধূলির আলোছায়ার মায়া নেই। সাদা প্রেক্ষাপটে ধূসর রেখার বুননে কিছু বিচিত্র রূপবন্ধ ছড়িয়ে আছে। এক প্রান্তে রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো বৃত্তের সমাহারে গড়া একটি জ্যামিতিক রূপ। নিম্নাংশে একটি আয়তাকার ক্ষেত্রে লালিমার আভা ছড়িয়ে আছে।
অমিতাভ ধরের ছবিতে মূর্ত ও বিমূর্তের সহাবস্থানের ভিতর দিয়ে যে স্মৃতির পরিসর রচনার প্রয়াস তাতে বাস্তবতার করুণাদীর্ণ এক আলেখ্য ভেসে ওঠে। শিরোনাম ‘মেমোরি স্পেস’। প্রভাত বসুর ‘নমস্তে ইন্ডিয়া’ ক্যানভাসটিতেও মূর্ত ও বিমূর্তের সমাহার। রেখার প্রাধান্যে গড়ে ওঠা ছবিটিতে গ্রাম ও শহরের জীবনের নিহিত সংঘাতকে রূপায়িত করার চেষ্টা করেছেন। তাপস কোনারের ‘ইন্ডিয়ান সামার অ্যান্ড ওয়াটারমেলন ইটার্স’ ছবিটিতে লৌকিক রূপের সারাৎসার নিয়ে আধুনিক জীবনের গ্রটেস্ক বা কিমাকার কল্পরূপ গড়ে তোলার প্রয়াস। এই লৌকিকেরই শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনায় উজ্জ্বল কে. মুরলীধরনের ‘সিলভার বার্ড’ ছবিটি। ফুলের অলঙ্করণে একটি প্যাঁচার রূপায়ণ। প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত এঁকেছেন শহরের একটি দেওয়ালের ছবি। শিরোনাম ‘দ্য ওয়াল উই লেফ্ট’। দেওয়ালের গায়ে ঝোলানো অজস্র লেটার বক্স।
দীপ্তীশ ঘোষ দস্তিদারের ‘বাই বাই গ্র্যানমা’ ছবিটিতে নিম্নবর্তী ভূমি থেকে দেখা উপরে অবস্থিত এক যুবতীর যাত্রার দৃশ্য রূপায়িত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই পার্সপেকটিভের উপস্থাপনা তাঁর রূপবিন্যাসে বিশেষ মাত্রা সৃষ্টি করেছে। দীপালি ভট্টাচার্যের অনামা মিশ্রমাধ্যমের ছবিটিতে নারীর অতীতের স্মৃতিমেদুরতা আভাসিত হয়েছে। এ বারের ছবিটি নান্দনিক সংহতিতে উজ্জ্বল। সুদেষ্ণা হালদার ‘টক শো’ ছবিটিতে আদিমতার অনুষঙ্গে মানবীরূপকে বিকৃত করে সংহত শক্তিকে বের করে এনেছেন। |
|