তাঁর আগে টেলিভিশনের ‘লাভজনক জগতে’ পা রেখে ফেলেছেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, হৃতিক রোশন, সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় কুমার...। একমাত্র ব্যতিক্রম তিনি।
যাঁর ২৩ বছরের অসাধারণ তারকাজীবনের প্রত্যেকটা সিঁড়িই ছিল সিনেমাকেন্দ্রিক। গোটা বলিউডে একমাত্র তিনিই কামড় বসাননি টেলিভিশন নামক অতি লোভনীয় আপেলটায়। বরং সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন অসম্ভব জনপ্রিয় এই মাধ্যমকে। এত দিন পরে এ বার নিজের তৈরি করা রেকর্ড ভাঙছেন তিনি নিজেই।
তিনি, আমির খান। ব্যতিক্রমী পথে হাঁটাই যাঁর অভ্যেস। এ বার আমির বড় পর্দার দূরত্ব ছেড়ে ঢুকে পড়ছেন দর্শকের শোয়ার ঘরে। তাঁর প্রথম টেলিভিশন শো শুরু হবে আগামী বছরের শুরুর দিকেই, স্টার প্লাসে।
বরাবর যে মাধ্যম থেকে নিজেকে সচেতন ভাবে সরিয়ে রেখেছিলেন, সেখানে নিজেই আবার ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। কেন?
শোনা যাচ্ছে, এই শো-এর জন্য ৩০ কোটি টাকা নিচ্ছেন তিনি।
তা হলে টাকাটাই কি আসল কারণ? “না, না, টাকা আমায় কখনওই উত্তেজিত করে না। যেটা করে সেটা হল, টেলিভিশনের জন্য একেবারে অন্য রকমের কিছু একটা করার হাতছানি,” বলছেন আমির।
সিদ্ধান্তটা নিতে একটু দেরি হয়ে গেল না? “দেখুন ভাই, সবাই প্রথম পদক্ষেপের কথা বলেন। ইন্ডাস্ট্রিতে আমিই বোধহয় অন্যতম শেষ লোক যে টেলিভিশন জগতে ঢুকলাম। কিন্তু শেষ পদক্ষেপেরও তো একটা সুবিধে আছে, সেটা তো স্বীকার করবেন,” হাসতে হাসতে বলছিলেন আমির। সাংবাদিক বৈঠকের পরে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যতিক্রমী সত্তাকে যিনি তুলে ধরলেন এ ভাবেই। |
আমিরের মতে, তাঁর জীবনে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাজ হতে চলেছে এটাই। টেলিভিশন শো’য়ে এত দিন চলে আসা অনেকগুলো ছকে বাঁধা ধ্যানধারণাকেও অবলীলায় উড়িয়ে দিচ্ছেন
তিনি। কী ভাবে? “এই শো’টা কোনও আন্তর্জাতিক শো-এর কপি হবে না। একেবারে মৌলিক হবে,” জানাচ্ছেন আমির। কত ক্ষণ শো চলবে, তাতেও কোনও বাঁধাধরা সময় নেই। তাঁর শো কতটা অভিনব, স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন নিজেই, “আমি স্টার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম আমায় ছকে না বাঁধতে। একটা এপিসোড হয়তো দু’ঘণ্টা ধরে চলবে, কিন্তু আমি এটাই চাই। যাতে একটা চলমানতা থাকে পুরো শো-এ। সেটা ওঁরা মেনে নিয়েছেন।”
কিন্তু শো টা কী নিয়ে? নামটাই বা কী?
বলিউডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য-মস্তিষ্ক এই ব্যাপারেও পুরোপুরি সক্রিয়। নাম এবং ফর্ম্যাট, কোনওটাই ভাঙছেন না তিনি। “ফর্ম্যাটটা এমন হবে, যাতে জীবনের নানা পরিসর থেকে উঠে আসবেন অংশগ্রহণকারীরা। আমি তাঁদের সঙ্গে দেখা করব। তাঁদেরই জীবনের গল্প সারা দেশকে অনুপ্রাণিত করবে। এটুকুই বলব এখন। জল্পনা চলতে থাক,” বলছেন আমির।
অনুপ্রাণিত করার মতো জীবন? তার মানে সচিন তেন্ডুলকরও তো আসতে পারেন শো-এ? “অবশ্যই পারে। হয়তো সচিনের সঙ্গে কথা বলব। ও তো বন্ধু,” আমিরের উত্তর।
কোথাও কোথাও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তাঁর শো নাকি অনেকটা ওপরা উইনফ্রের অনুষ্ঠানের মতো হতে পারে? সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে আমির বলেন, “এটা মোটেও ওপরা উইনফ্রের শো-এর মতো হবে না। অণ্ণা হজারেও এই শো-এ আসবেন না। এ সব ফালতু গুজব,” বলছেন তিনি।
শো-এর পরিচালক তাঁর বন্ধু সত্যজিৎ ভাটকাল। প্রযোজক নিজেরই প্রযোজনা সংস্থা ‘আমির খান প্রোডাকশনস’। এখানেও ফের পথিকৃৎ আমির। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানরা টেলিভিশন শো করছেন অনেক দিন। কিন্তু সেই শো নিজেরা প্রযোজনা কখনও করেননি। আমিরের ‘দাদাগিরি’র এখানেই শেষ নয়। তাঁর শো-এর জন্য স্টারের আঞ্চলিক নেটওয়ার্কগুলোর প্রোগ্রামিং-ই আমূল বদলাতে হচ্ছে।
সেটা কী রকম? “আমি চাই দেশের প্রত্যেক প্রধান ভাষাতেই এই অনুষ্ঠানটা হোক। স্টার প্লাসের জন্য আমি হিন্দিতে শো-টা করব। কিন্তু একই সময়ে স্টার জলসায় শো-টা চলবে বাংলায়, প্রবাহতে চলবে মরাঠিতে। এ ছাড়াও একই সময়ে স্টারের সহযোগী নেটওয়ার্কে
কন্নড়, তামিল আর তেলুগুতেও চলবে,” জানাচ্ছেন তিনি।
অন্য রকম কিছু করার ইচ্ছে, সবার শেষে টেলিভিশন জগতে প্রবেশ, ভিন্ন ধারার শো, নিজের সংস্থার প্রযোজনা এতগুলো বিষয়ে যিনি আলাদা, তাঁর টেলিভিশনে আগমনের খবর নিয়ে বিনোদন জগৎ তো মাতামাতি করবেই। শো-এর জন্য সাংবাদিক বৈঠক ডাকার সময়টা নিয়েও চলছে আলোচনা। “শো-এর নাম কী কেউ জানে না, ফর্ম্যাট কী হবে কেউ জানে না, কিন্তু রবিবারে হেডলাইনে থাকবেন আমির খান। সেটা শাহরুখের ‘রা.ওয়ান’-এর পালের হাওয়া অনেকটা কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এটা মার্কেটিং না হলে কোনটা মার্কেটিং? এ জিনিস একমাত্র আমিরের পক্ষেই সম্ভব,” বলছিলেন দেশের বড় এক বিপণন সংস্থার বড়কর্তা।
প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া, জল্পনা তুঙ্গে। ‘র্যাঞ্চোর’ নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। কিন্তু যিনি নিজেই এত দিন বলে এসেছেন যে টেলিভিশন দেখার থেকে তাঁর কাছে অনেক প্রিয় বই পড়া, তিনি কি বোকাবাক্সের কোনও অনুষ্ঠান প্রতিদিন দেখেন? “বিশ্বাস করবেন না হয়তো, কিন্তু যখনই গোবিন্দর ছবি চলে, রিমোটে আমার হাত থেমে যায়। ওটাই আমার স্ট্রেস বাস্টার। বলতে পারেন টিভিতে আমার সবচেয়ে পছন্দের অনুষ্ঠান গোবিন্দর ছবি,” আমিরের সোজাসাপ্টা উত্তর। |