|
|
|
|
|
লড়াই যখন সামনা-সামনি |
বাছাই পর্বের চূড়ান্ত মুহূর্ত। এবং অবশ্যই নিজেকে প্রমাণের শেষ সুযোগ। চাকরির
ময়দানে ইন্টারভিউ ‘যুদ্ধ’ ঠিক কী ভাবে সামলাতে হবে! লিখছেন মেধা রায়। |
একটা বল অফ স্টাম্পের বাইরে। চোখ ধাঁধানো কভার ড্রাইভে সেটা সীমানার বাইরে পাঠানো যায়। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না লাগলে লোপ্পা ক্যাচে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এক সেকেন্ডেরও কম সময়। ঠিক একই রকম উত্তেজনার মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করাই যায় চাকরির প্রথম ইন্টারভিউটিকে। প্রতিটি প্রশ্নে ভাবার সময় ওই রকমই কম। চোখে চোখ রেখে উত্তর দিতে হবে। তোতলানো চলবে না কোনও ভাবেই। উত্তর হবে স্পষ্ট। সংক্ষিপ্ত। স্বতস্ফূর্ত। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী। যুক্তিপূর্ণ। ব্যাস্! বল সোজা মাঠের বাইরে।
প্রথম বার উত্তেজনাটা যে বেশি থাকে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং শেষ পর্যন্ত, জীবনের যাবতীয় ‘ইন্টারভিউকে’ খেলার কৌশলও এটাই। সেটা ‘গ্রুপ ডিসকাশন’ হতে পারে। কিংবা ‘পার্সোনাল ইন্টারভিউ’। ভিড়ের মধ্যে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়ে দেওয়াটাই এখানে চ্যালেঞ্জ। যেটা জেতার চাবিকাঠি আত্মবিশ্বাস, সততা, সাহস ইত্যাদি। তা হলেই হাতে আসবে স্বপ্নের চাকরির নিয়োগপত্র।
|
|
|
২০০৮-এ শুরু হওয়া মন্দার পর গত দু’বছর কর্মী নিয়োগের হার অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল সারা বিশ্বের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি। ভারতও এর ব্যাতিক্রম ছিল না। তার পর ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী মন্দা কাটিয়ে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে এ দেশের বিভিন্ন সংস্থা। এবং চলতি বছরের প্রথম থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। দেশ-বিদেশের সংস্থার হাত ধরে বিনিয়োগ ঢুকছে দেশে। চিরাচরিত নিময় মেনে বাড়তে শুরু করেছে ব্যবসাও। আর তাই এ বার প্রয়োজনের তাগিদেই লোক নিয়োগের পথে হাঁটছে সংস্থাগুলি।
এই বাছাই পর্বে নিজের যোগ্যতাকে পূর্ণ মাত্রায় তুলে ধরার কাজটা আগের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন হয়েছে। সংস্থা সুযোগ দিলে ভাল কাজ করতে পারবে, সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার একমাত্র সুযোগ পাওয়া যায় এই ইন্টারভিউ পর্বেই। এমনকী যে সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রে প্রথমে লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়, সেগুলিতেও ইন্টারভিউয়ের গুরুত্ব এখন আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে।
|
টেবিলের উল্টো দিকে ক’জোড়া চোখ। নিঁখুত ভাবে মাপছে সংস্থার সম্ভাব্য কর্মীটিকে। তীরের মতো ছুটে আসছে একের পর এক প্রশ্ন। পড়াশোনার বিষয় তো আছেই। যাচাই হচ্ছে প্রার্থীর যুক্তি-বুদ্ধি-ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস, প্রত্যুৎপন্নমতি ইত্যাদিও যে কোনও ইন্টারভিউ বোর্ডের খুব চেনা ছবি।
কিন্তু দেখা যায় খুব ভাল পড়ুয়া হয়েও বহু ক্ষেত্রে ইন্টারভিউয়ের গণ্ডি পেরোতে ব্যর্থ অনেকে। বেশির ভাগ পেশা বিশেষজ্ঞেরই তাই মত, প্রথম থেকেই এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষত যখন এই মুহূর্তে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। তুলনায় এ বছর বেশি কর্মী নেওয়ার পক্ষপাতী প্রায় সকলেই। কারণ মন্দা পরবর্তী সময়ে ব্যবসা বাড়তে শুরু করেছে কম-বেশি। কিন্তু যোগ্যতা নিয়ে আপোসে রাজি নয় কেউই। কাজেই চুলচেরা বিচারের পরই চাকরি পাবে অভিজ্ঞ বা অনভিজ্ঞ প্রার্থীরা। ফলে কাজটা অবশ্যই কঠিন।
ইন্টারভিউয়ের জন্য আলাদা করে তৈরি হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সুপর্ণ মৈত্রও। সাধারণত সংস্থাগুলি দু’ভাবে প্রার্থী বাছে। একটি হল ‘ক্যাম্পাসিং’ মারফত। চাকরির বাজারে যারা অভিজ্ঞতাহীন ‘ফ্রেশার্স’। সংস্থাই যাদের গড়েপিটে নেয়। আবার অনেক সময় নির্দিষ্ট সংস্থা বা শিল্পে যুক্ত মানুষও পেশা পরিবর্তন করে। তারা আবার কিছুটা দক্ষতা নিয়েই আসে।
সুপর্ণবাবু জানিয়েছেন, দু’টি ক্ষেত্রেই খুব চেনা একটা ভুল করতে দেখা যায় ইন্টারভিউ বোর্ডে। অনেক সময় প্রার্থী অত্যধিক সঙ্কুচতি হয়ে প্রাণ খুলে কথা বলে না। আবার অনেকে দক্ষতা প্রমাণের চেষ্টায় বেশি কথা বলে। দুটোই ভুল বার্তা পৌঁছে দেয় নিয়োগকর্তার কাছে। প্রাথমিক এই ত্রুটিগুলি দূর করতেই ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতিতে আলাদা সময় দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে।
|
সরাসরি ইন্টারভিউ (জিডি-পিআই) |
সরাসরি ইন্টারভিউ বলতে বোঝায় যেখানে নিয়োগকর্তার সঙ্গে মুখোমুখি পরিচয় ঘটছে প্রার্থীর। এবং সংস্থা তাকে চোখে দেখে যাচাই করতে পারছে। দু’টি ভাগ এর। গ্রুপ ডিসকাশন (জিডি) এবং পার্সোনাল ইন্টারভিউ (পিআই)।
|
গ্রুপ ডিসকাশন |
বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে আয়োজন করে সংস্থাগুলি। কোনও একটি বিষয়ে আলোচনা চলে। সেই সঙ্গে চলে প্রার্থীর নেতৃত্ব প্রদান বা নিজের মত প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা যাচাইয়ের কাজ। অনেক সময়েই দেখা যায়, কারও হয়তো বিষয়টি ভাল জানা। ফলে বেশি কথা বলছে। আবার অনেকে হয়তো চুপ-ই করে আছে। এই বিষয়গুলির ব্যাখ্যা কিন্তু নানা ভাবে হয়। যেমন, কেউ চুপ করে আছে মানেই সে কিছু জানে না, সব সময়ে সেটা না-ও ধরে নেওয়া হতে পারে। কেউ এক জন বেশি কথা না বলে যদি সবাইকে বলার সুযোগ দেয় বা সূত্র ধরিয়ে দেওয়ার কাজটি করতে পারে, তবে সেটা তার নেতৃত্ব দানের ক্ষমতারই প্রকাশ বলে জানান সুপর্ণবাবু। কারণ সে ক্ষেত্রে বেশি কথা না-বলেও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এগিয়ে গিয়ে কাজ সুসম্পন্ন করার মতো পরিণত মনের পরিচয় পাওয়া যায়। |
|
• বিষয়টি পেয়েই গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলি (পয়েন্ট) লেখ।
• মনে মনে গুছিয়ে নাও।
• শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলতে যেও না।
• অন্যদের কথা ভাল মতো শুনে ও বুঝে নিয়ে নিজের মত জানাও।
• অন্যদেরও বলতে সুযোগ দাও।
• সূত্রগুলির উপর ভিত্তি করে বিষয়টি বিশ্লেষণ করো।
|
পার্সোনাল ইন্টারভিউ |
একজনকে যাচাই করেন সংস্থার এক বা একাধিক পদস্থ কর্তা। পড়াশোনার বিষয়টি ছাড়াও যে সংস্থায় বা যে ধরনের কাজের জন্য ইন্টারভিউ হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে। উত্তর তো বটেই, পাশাপাশি পোশাক-আশাক, দাঁড়ানো, বসা, আচার-আচরণ, কথা বলার গতি, উচ্চারণ, স্বরক্ষেপণ, হাত পা নাড়া, তাকানো ইত্যাদি সব কিছু থেকেই প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব বুঝে নিতে চান নিয়োগকর্তারা। সুপর্ণবাবুর মতে, এ ক্ষেত্রে ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বা শরীরী ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাতেই প্রকাশ পায় ব্যক্তির পছন্দ-অপচ্ছন্দ। কাজ করতে সে কতটা উৎসাহী বা দক্ষ। কতটাই বা উদ্যোগী ও উদ্যমী। ফুটে ওঠে অস্থিরতা বা ভয়ও। তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে এমন কিছু করা উচিত নয়, যা কিনা নিয়োগকর্তার মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
|
পেশা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ |
• সময়ের আগেই ইন্টারভিউয়ের জায়গায় পৌঁছে মানসিক প্রস্তুতি নাও।
• হাতের কাছে সব কাগজপত্র রাখো।
• পোশাক হবে পরিষ্কার, রুচিসম্মত, অফিসের রীতিমাফিক।
• সচেতন ভাবে ভয় তাড়াও।
• প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দাও।
• উদ্ধত হয়ো না। তবে বেশি বিনয়ী ভাবও বিরক্তির কারণ হতে পারে।
• স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলো।
• শুনতে না-পেলে যথাযথ ভাবে ফের জিজ্ঞাসা করে নাও।
• বেশি হাত-পা নাড়িয়ো না।
• প্রয়োজনে বাড়ির লোকেদের সামনে বসিয়ে প্রস্তুতি নাও।
• সংস্থা ও তার কাজকর্মের ইতিহাস জেনে রাখো।
• নিজের পড়াশোনার মূল বিষয়টি সম্পর্কে ভাল করে জানো।
• পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে, তারও খুঁটিনাটি ধারণা থাকা জরুরি।
• প্রশ্ন পুরো শুনে উত্তর দাও।
• অনেক সময় জিডি-র পরই ইন্টারভিউ হয়। তাই জিডি-র বিষয় ও সেই প্রসঙ্গে তোমার মত মাথায় রাখো।
• বেশি নির্বিকার বা আগ্রহহীনও থেকো না।
• কোনও কথা পছন্দ না-ই হতে পারে। ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দাও তোমার অপছন্দের কারণ। সেই সঙ্গে নিজের মতামতও জানাও।
• সংক্ষিপ্ত অথচ যথাযথ উত্তর দিতে চেষ্টা করো।
• যে বিষয়টি জানো না স্বীকার করে নাও।
|
ফোনে ইন্টারভিউ |
টেলিফোনে ইন্টারভিউ দেওয়া তুলনায় বেশি কঠিন, মত পেশা বিশেষজ্ঞদের। কারণ এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর সব কিছুই যাচাই হয় কন্ঠস্বর দিয়ে। সেখানে প্রার্থীর নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ অনেকটাই কম। আবার সংস্থার পক্ষেও চট করে ফোনের উল্টো দিকে থাকা ছেলে বা মেয়েটিকে বুঝে নেওয়া মুশকিল। দেশের এক প্রথম সারির ভোগ্যপণ্য সংস্থার কর্তা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই টেলিফোনে ইন্টারভিউ হয় ‘এলিমিনেশন প্রসেস’ হিসেবে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রাথমিক বাছাই হয়। বিশেষত যে সব ক্ষেত্রে অন্য শহরে গিয়ে জিডি বা পিআই-এ অংশ নিতে হয়। কাজেই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। বেশির ভাগ সময়েই সংস্থাগুলি আগে থেকে ইন্টারভিউয়ের দিনক্ষণ জানিয়ে দেয়।
|
পেশা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ |
• ফাঁকা ঘর খুঁজে সময়ের আগেই নিজেকে গুছিয়ে নাও।
• ঘরটিতে যেন কথা স্পষ্ট শোনা যায়।
• মনে করো অফিসেই ইন্টারভিউ চলছে।
• নিজের কণ্ঠস্বর পরিষ্কার রাখো।
• স্পষ্ট উচ্চারণ করো।
• বিছানায় বসে ইন্টারভিউ দিও না।
• ঘরে যেন অনেক লোকজন না থাকে।
• কথা বুঝতে না পারলে বিনীত ভাবে ফের জানতে চাও।
• পুরোটা শুনে মতামত দাও।
• সিভি ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র হাতের কাছে রাখো।
• খাতা ও পেন রাখো।
|
ভিডিও কনফারেন্সিং |
প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে ভৌগলিক ব্যবধানজনিত অসুবিধা ঘোচাতেই এই পন্থা। স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রার্থী ও নিয়োগকর্তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে যার জায়গায় বসে কথাবার্তা চালান। পেশা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। |
পেশা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ |
• সরাসরি ইন্টারভিউ দেওয়ার মতোই তৈরি হও।
• ক্যামেরায় কিন্তু খুঁটিনাটি ধরা পড়ে, তাই সতর্ক থাকো।
• প্রার্থীর আচরণ, ব্যবহার, পোশাক সবই দেখা হয়।
|
তৈরি হও নিজেই |
চাকরির বাজারে প্রার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তাই প্রতিযোগিতাও তীব্র। ক্যাম্পাস বা একেবারে সদ্য পাশ করা প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ে যেমন গুরুত্ব পায় প্রার্থীর পড়াশোনার বিষয়, বিভিন্ন ‘প্রজেক্টে’ তার কাজ, স্বতস্ফূর্ততা, নেতৃত্ব দান বা মিলেমিশে কাজ করার ক্ষমতা। তেমনই আবার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউয়ের ধরন একটু ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে আগের সংস্থায় তার কাজের খুঁটিনটি, তার পছন্দের কাজের ক্ষেত্র, পুরনো সংস্থা ছাড়ার ও নতুন সংস্থায় যোগ দেওয়ার কারণ ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রশ্ন ওঠা অবধারিত। তবে ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিতে আলাদা কোনও ক্লাস করার প্রয়োজন নেই বলেই দাবি সুপর্ণবাবুর।
|
পেশা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ |
১) বাড়ির লোক বা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি হও।
২) প্রয়োজনে নিজেকে মেলে ধরার পদ্ধতি আয়ত্ত করো।
৩) তবে সেটা যেন নিজেকে ‘জাহির’ করা না হয়।
৪) আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভঙ্গি অভ্যাস করো।
৫) চাকরি জীবন থেকে প্রত্যাশা কী, সেটা স্পষ্ট বোঝো।
৬) জানো সংস্থাটির চাহিদাও।
৭) নিজের বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা জরুরি।
৮) উপর উপর নয়, বিষয় সম্পর্কে বিশদে খোঁজ রাখো।
৯) পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলি সম্পর্কে খবর রাখো।
১০) প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে না গিয়ে সংক্ষেপে নিজের মতামত জানানোর বিষয়টি অভ্যাস করো।
১১) ইন্টারভিউয়ে সময়ের আগে পৌঁছতে হবে।
১২) কেন সংস্থাটিকে বাছলে, সেই ধারণা নিজের কাছে পরিষ্কার রাখো।
১৩) তুমি যে রকম, সেই রকমই থাকো। উপর চালাকি করতে যেয়ো না। |
জরুরি কিছু কথা |
|
|
খেয়াল রাখুন |
|
শিক্ষা ও গবেষণার জন্য চিনের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা ইগনু। এগুলি হল ওপেন ইউনিভার্সিটি অফ হংকং, হিউম্যান নর্মাল ইউনিভার্সিটি এবং ক্যুইংডাও টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি ক্যুইংডাও কলেজ। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক বিনিময় করবে ইগনু। অনুসরণ করা হবে পরস্পরের পাঠ্যসূচি। খুলে দেওয়া হবে বিজ্ঞান পড়ুয়াদের জন্য গবেষণার সুযোগ। এ ছাড়া, ইগনুর ছাত্রছাত্রীদের চিনের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, চিত্র, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগও দেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।
|
স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে দু’টি নতুন পাঠ্যক্রম আনতে হাত মিলিয়েছে বিজনেস স্কুল এক্সএলআরআই জামশেদপুর ও অ্যাপোলো হসপিটাল্স এন্টারপ্রাইজ। প্রথমটি, এগ্জিকিউটিভ ডিপ্লোমা ইন জেনারেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হেল্থ কেয়ার। এক বছর মেয়াদের পূর্ণ সময়ের পাঠ্যক্রম। প্রশিক্ষণ দেবেন এক্সএলআরআই ও অ্যাপোলো গোষ্ঠীর ব্যক্তিত্বরা। চালু হবে আগামী মার্চ থেকে। যে কোনও শাখায় স্নাতকরা তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। দ্বিতীয়টি, এক বছরের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেট ইন জেনারেল ম্যানেজমেন্ট। অ্যাপোলো হাসপাতালের কর্মীদের পরিচালন ও নেতৃত্ব প্রদানের প্রশিক্ষণ দেওয়াই এই পাঠ্যক্রমটির লক্ষ্য। ফোন নম্বর: +৯১ ৮২৯২৩৬৩১৫৯। |
ইউজিসি আয়োজিত নেট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। আবেদনের শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর। দেখে নাও ugcnetonline.in ওয়েবসাইট। অন্য দিকে, রাজ্যের কলেজ সার্ভিস কমিশন আয়োজিত সেট পরীক্ষাটি হবে ১১ সেপ্টেম্বর। অনলাইনে এই পরীক্ষার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৪ অক্টোবর। ডাকযোগে দেওয়ার শেষ তারিখ ২১ অক্টোবর। বিস্তারিত তথ্য মিলবে www.wbcsc.ac.in ওয়েবসাইটে।
|
আপনার প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞের উত্তর |
|
|
|
প্রশ্ন: ইংরেজিতে স্নাতক পড়ছি। সাংবাদিকতা পড়ার জন্য এখন থেকে কী ভাবে প্রস্তুত হব? সাংবাদিকতায় এম এ পড়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতগুলি আসন রয়েছে? যাদবপুরে ভর্তির জন্য যে পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেটির ধরন কেমন? রাজ্যের বাইরে আর কোথায় কোথায় বিষয়টি পড়ানো হয়? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
দেবশ্রী দত্ত, বেহালা উত্তর: প্রথমেই জানিয়ে রাখি, স্নাতকোত্তর স্তরে অর্থাৎ এম এ কিংবা পি জি ডিপ্লোমা হিসেবে সাংবাদিকতা (কোথাও বা মাস কমিউনিকেশন নাম দিয়ে) পড়ায়, রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে এমন সব প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির জন্য প্রথমে লিখিত পরীক্ষায় বসতে হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার তিনটি পাঠ্যক্রম আছে।
১) এম এ ইন মাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম,
২) পি জি ডিপ্লোমা ইন মাস কমিউনিকেশন,
৩) পি জি ডিপ্লোমা ইন মিডিয়া স্টাডিজ।
তিনটির ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ইন মাস কমিউনিকেশন কোর্সে ভর্তির জন্য অনার্স নিয়ে স্নাতক পাশ করতে হয়। বয়স হতে হয় ৩০ বছরের কম। মোট আসন ৮৫টি। এর মধ্যে ২৫টি আসন পূর্ণ করা হয় সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে, যারা সাম্মানিক স্নাতক স্তরে ‘জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন’ বিষয়টি পড়ে এসেছে। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একাধিক কলেজেই এখন মাস কমিউনিকেশন বিষয়টি স্নাতক (অনার্স) স্তরে পড়ানো হয়। সেই তুলনায় ২৫টি আসন খুবই কম।
অন্য দিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পি জি ডিপ্লোমা ইন মাস কমিউনিকেশন পাঠ্যক্রমটিতে ভর্তির জন্য যে লিখিত পরীক্ষা হয়, তাতে সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে, ‘মাল্টিপল চয়েস’ ধরনের প্রশ্ন থাকে এবং সাম্প্রতিক বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। মোটের উপর রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়া যায় সেগুলির ধরন আলাদা হলেও, প্রশ্ন থাকে প্রধানত সাধারণ জ্ঞান, সাম্প্রতিক বিষয় ইত্যাদির উপর।
রাজ্যের বাইরে পুণের সিমবায়োসিস ইনস্টিটিউট অফ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন (এস আই এম সি)-এ পড়ানো হয় ‘মাস্টার্স ইন মাস কমিউনিকেশন’ কোর্সটি। এই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হতে গেলে বসতে হয় সিমবায়োসিস ন্যাশনাল অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট বা স্ন্যাপ-এ। এখানে পরীক্ষার বিষয় কিছুটা আলাদা। রিজনিং, গণিত ও ইংরেজিতে বেশি জোর দেওয়া হয়।
রাজ্যের বাইরে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন (আই আই এম সি)-এও সাংবাদিকতা পড়া যায়। নয়াদিল্লি ও ওড়িশার ঢেঙ্কানলে রয়েছে আই আই এম সি-র প্রতিষ্ঠানটি। এখানে পি জি ডিপ্লোমা ইন ইংলিশ জার্নালিজম, পি জি ডিপ্লোমা ইন রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন জার্নালিজম এবং পি জি ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভার্টাইজিং অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স পাঠ্যক্রমগুলির জন্যও আলাদা পরীক্ষা হয়।
দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম এশিয়ান কলেজ অফ জার্নালিজম। চেন্নাই-এর এই প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম’। এ ছাড়া, সর্বভারতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে যে কোনও বিষয়ের স্নাতকরাই ভর্তি হতে পারেন মনোরমা স্কুল অফ কমিউনিকেশন, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানে।
রাজ্যে বর্ধমান, বিশ্বভারতী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকশনে এম এ পড়ার জন্যও যে লিখিত পরীক্ষা হয় সেখানেও জেনারেল নলেজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-এ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সমস্ত প্রবেশিকার ক্ষেত্রেই নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া, সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন পড়া, নিয়ম করে নিউজ চ্যানেল দেখা, সাম্প্রতিক বিষয়ের উপর যে সমস্ত মাসিক পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় সেগুলির উপর নজর রাখা খুবই জরুরি। |
|
প্রশ্ন: টিভি সাংবাদিকতার জন্য নিট্স মিডিয়া অ্যান্ড ফিল্ম স্কুল-এর ফোন নম্বরটি জানাবেন?
সুতানু পাল
উত্তর: নিট্স মিডিয়া অ্যান্ড ফিল্ম স্কুলের ফোন নম্বরটি হল ৯২৩০৫-০৫৭৬৭।
প্রশ্ন: বি এসসি পাস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। স্নাতক হয়ে আমি কোম্পানি সেক্রেটারিশিপ নিয়ে পড়তে আগ্রহী। এই বিষয়ে পড়ার ন্যূনতম যোগ্যতা কী? কলকাতার কোথায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারব?
প্রসেনজিৎ গুপ্ত, কলকাতা
উত্তর: কোম্পানি সেক্রেটারিশিপ পাঠ্যক্রমটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হল ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম, দ্বিতীয়টি এগজিকিউটিভ প্রোগ্রাম এবং তৃতীয়টি হল প্রফেশনাল প্রোগ্রাম। ১০+২-এর পরেই ফাউন্ডেশন প্রোগ্রামে যোগ দেওয়া যায়। আর এগজিকিউটিভ প্রোগ্রাম-এ যোগ দেওয়া যায় ১০+২-এর পর ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পূর্ণ করে। নয়তো স্নাতক হওয়ার পর। এগজিকিউটিভ প্রোগ্রাম সফল ভাবে শেষ করতে পারলে ভর্তি হওয়া যায় তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ প্রফেশনাল প্রোগ্রামে। যদিও এর জন্য নির্দিষ্ট কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেওয়া আবশ্যক। কলকাতায় কোম্পানি সেক্রেটারিশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য যে ঠিকানায় যোগাযোগ করতে হবে আইসিএসআই-ইআরআরসি, ৩এ আহিরিপুকুর ফার্স্ট লেন কলকাতা-১৯। ফোন করে নেওয়া যেতে পারে ২২৮৩-২৯৭৩ /২২৮১-৬৫৪১ নম্বরে। দেখে নাও www.icsi.edu ওয়েবসাইটটি।
প্রশ্ন: মাধ্যমিক দেব। পলিটেকনিক কলেজে ভর্তির জন্য জেক্সপো পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।
দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কদমতলা
উত্তর: মাধ্যমিকের পর রাজ্যের বিভিন্ন পলিটেকনিক কলেজে পড়ার জন্য ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন আয়োজিত জেক্সপো পরীক্ষায় বসতে হয়। এর জন্য মাধ্যমিকে অঙ্ক ও ফিজিক্যাল সায়েন্সে আলাদা আলাদা ভাবে ৩০% নম্বর পেতে হবে। রাজ্যে ৬২টি সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজে ২০১১-এ ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। এর পরেও বেশ কয়েকটি নতুন পলিটেকনিক কলেজ গড়ে উঠেছে। ডিসেম্বর নাগাদ জেক্সপো পরীক্ষাটির বিজ্ঞপ্তি বেরোয়। পরীক্ষা হয় এপ্রিল নাগাদ। অবজেকটিভ ধরনের প্রশ্ন আসে। চার ঘণ্টার পরীক্ষায় দু’ঘণ্টার গণিত (১০০ নম্বরের) এবং দু’ঘণ্টার ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি (১০০ নম্বরের) পরীক্ষা হয়। www.abscte.org ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য মিলবে।
প্রশ্ন: দশম শ্রেণির ছাত্র। ভবিষ্যতে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়তে আগ্রহী। কোথায় কী ভাবে ভর্তি হওয়া সম্ভব তা জানতে আগ্রহী।
সচ্চিদ্দানন্দ বিশ্বাস
উত্তর: ফ্যাশন ডিজাইন প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি হতে সাধারণত ১০+২ পাশ হতে হয়। সরকারি স্তরে যে সমস্ত জায়গায় সর্বভারতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হয় সেগুলি হল এন আই এফ টি এবং এন আই ডি। এন আই এফ টি অর্থাৎ ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে পড়ানো হয় ব্যাচেলর ইন ডিজাইন (অ্যাকসেসরিজ ডিজাইন), ব্যাচেলর ইন ডিজাইন (ফ্যাশন কমিউনিকেশন), ব্যাচেলর ইন ডিজাইন (ফ্যাশন ডিজাইন)-সহ মোট সাতটি পাঠ্যক্রম। বেঙ্গালুরু, ভোপাল, ভুবনেশ্বর, চেন্নাই, কলকাতা, গাঁধীনগর, হায়দরাবাদ, যোধপুর, কাংড়া, কান্নুর, মুম্বই, নিউদিল্লি, পটনা, রায়বেরিলি এবং শিলং-এ নিফটের শাখা রয়েছে। প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় ফেব্রুয়ারি নাগাদ।
অন্য দিকে, আমদাবাদের এন আই ডি অর্থাৎ ন্যাশনাল ইনস্টটিটিউট অফ ডিজাইনে ফ্যাশন ডিজাইনিং নাম দিয়ে কোনও কোর্স না চললেও, টেক্সটাইল ডিজাইন পড়া যায়। এখানেও সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিতে হয়। জানুয়ারি নাগাদ প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়। বিস্তারিত তথ্য মিলবে www.nid.edu ওয়েবসাইটে। এ ছাড়াও ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ায় নিট্স ফ্যাশন স্কুল, আই এন এফ ডি আই ইত্যাদি। |
|
|
|
|
|