ব্যবসায় দুয়ার এঁটে ভেসে গেল উত্তরবঙ্গ
স্কুল কলেজের পাশাপাশি সরকারি দফতরে ছুটি তো ছিলই। নবমীর দুপুর থেকে উত্তরবঙ্গ জুড়ে দোকানপাটেও ঝাঁপ পড়ল।
গলির মুখে পান-বিড়ি আর ছড়ানো ছিটানো রোল-চাউমিন, মোমোর সদ্য গজিয়ে ওঠা দোকানগুলো ছাড়া সব বন্ধ। কেন? রোদ পড়তেই কারণটা স্পষ্ট হয়ে গেল। পুজোর শেষ সন্ধেয় দোকান বন্ধ করে সকলেই ভেসে গিয়েছেন পুজো-স্রোতে। মালদহ থেকে রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, কিংবা জলপাইগুড়ি চেহারাটা ঠারেঠারো এক। পাট ভাঙা পোশাকে শেষ বিকেলের আশ্বিনে শুধুই জনস্রোত।
রায়গঞ্জে যেমন, দিনের সাত সকালের সব্জি, মাছের কাঁচা বাজারটুকু বেলা বাড়তেই সেই যে মুছে যেতেই প্রায় বন্ধের চেহারা নিয়েছে সদর মফস্সল। সুদর্শনপুর, অমর সুব্রত, শাস্ত্রী সঙ্ঘের মতো বড় বাজেটের মণ্ডপে পিল পিল করছে মানুষ। ভিড় ঠেলে মণ্ডপে ঢুকে বিরক্তি কোথায়, জনস্রোত বলছে, ‘যাক ঠাকুরটা দেকা তো গেল!’ নিউ মার্কেট এলাকার দোকান বন্ধ রেখে ছুটে আসা এমনই এক ছোট-ব্যবসায়ী জয়ন্ত সরকার বলেই পেললেন, “অষ্টমী পর্যন্ত পুজোর কেনাকাটা চলেই। আজ আর পরিবারের লোকেদের ফাঁকি দিতে চাইনি। দোকান বন্ধ করেই রাস্তায় নেমেছি। যত রাত হোক, সবকটা মণ্ডপ দেখেই ফিরব।”
দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আরও একটা চেনা ছবি রায়গঞ্জের আনাচে কানাচে চোখে পড়েছে প্রায়ই, দল বেঁধে আদিবাসীদের সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন ধামসা, মাদল নিয়ে। রাস্তা থেকে মণ্ডপ, এ গলি ছেড়ে ও গলি দাপিয়ে বেড়ালেন তাঁরা। বালুরঘাটের মণ্ডপগুলিতেও দুপুর থেকে ভিড়। বিকেল থেকেই ভিড় জনজোয়ারের চেহারা নেয়। আছড়ে পড়ে বিপ্লবী, সঙ্কেত ক্লাব, নিউটাউন, অভিযাত্রী, সৃজনীর মণ্ডপে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালুরঘাট যদি দখল করে রাখেন গ্রামের লোকেরা তবে রাত বাড়ার পরে তা চলে যায় শহরের বাসিন্দাদের দখলে। ব্যবসায়ী ভোম্বল দাস বলেন, “ব্যবসার কারণেই এত দিন বেরোতে পারিনি। আজ আর পারলাম না। দোকান বন্ধ রেখেই বেরিয়েছি।”
বালুরঘাটের প্রাচ্যভারতী ক্লাবে সন্ধিপুজো। অমিত মোহান্তর তোলা ছবি।
ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে মালদহের সবর্জয়ী ক্লাব, শান্তিভারতী পরিষদ, শিবাজী সংঘ ও অনীক সংঘের পুজো উদ্যোক্তাদের। অনীক সংঘের পুজো কমিটির এক কর্তা মনোজ ভকত বলেন, “এ বারের ভিড় সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।” প্রবাল পল্লির শিবাজী সংঘের চিড়িয়াখানা দেখতে ছোটদের প্রবল উৎসাহ। ক্লাব সম্পাদক মনোরঞ্জন শিকদার বলেন, “আরে ওদের জন্যই তো এই ব্যবস্থা।” প্রতিমা ও হেলিকপ্টার দেখতে বিশাল লাইন পড়েছিল পুড়াটুলি সদরঘাট সবর্জনীন পুজো মন্ডপে। প্রতি বছরের মতো এ বারেও বিনয় সরকার রোডের সানরাইজ ক্লাবের দশ মাথা, দশ হাতের দেবী দুর্গা দেখতে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ছৌ নাচকে সামনে রেখে পুরুলিয়ার গ্রামের রেপ্লিকার আদলে পুড়াটুলি স্পোর্টিং ইউনিয়ন পুজো মন্ডপ এবং ছোটদের প্লাস্টিকের বল দিয়ে তৈরি দিলীপ স্মৃতি সংঘের সন্ত্রাস মুক্ত পৃথিবীতেও ভিড় উপচে পড়েছে।
রাজ-শহর কোচবিহারেও দুপুর থেকেই গ্রাম ভেঙে পড়েছে। শহরের সংহতি ক্লাব, গাঁধীনগর লীলাস্মৃতি ভবানী মন্দির, টাকাগছ কিশোর সঙ্ঘ, বিশ্বসিংহ রোড সর্বজনীন, চালতাতলা যুব সঙ্ঘ, বেলতলা ইউনিটে সেই ভিড়টা দুপুর থেকে। তুফানগঞ্জের কলেজ পাড়া আরজি পার্টি সংস্কৃতি এক্সপ্রেসের আদলে মণ্ডপ। উত্তর অন্দরান ফুলবাড়ি সর্বজনীনের মরুতেশ্বর মন্দিরের আদলে মণ্ডপসজ্জা দেখতে লাইনে দাঁড়িয়ে ভেঁপু বাজিয়ে চলেছে বাচ্চা ছেলেটি। একটুও বিরক্তি নেই।
আলিপুরদুয়ারে ভিড়টা থমকে থেকেছে হোয়াইট হাউসের সামনে। উপলমুখর ক্লাব, দত্তপট্টি স্বামী বিবেকানন্দ ক্লাব, ষ্টেশন পাড়াতেও একই ছবি। বন্ধ দোকানে তালা লাগানোর ফাঁকে স্থানীয় এক গাড়ির ডিলারের আক্ষেপটাই বোধহয় সত্যি, “কোন ফাঁকে যে পুজোটা পেরিয়ে যাই টেরই পাই না। দোকানটা খুলেও তাই বন্ধ করে দিচ্ছি। আর নয়...নবমীটা এনজয় করতেই হবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.