কাজেই কাটে পুজো
রোজ রাত জাগেন ওঁরা। মণ্ডপে ঘোরেন। কিন্তু ঠাকুর দেখেন না! দেখেন মানুষ! শহরের বাসিন্দারা যাতে নিবিঘ্নে, শান্তিতে পুজোর ক’টা দিন উপভোগ করতে পারেন, তা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন দিনভর। প্রতিদিনই বাড়ি ফেরেন ভোরের আলো ফোটার পর। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকার মত ব্যস্ততম শহরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে ডিএসপি, আইসিরা এই ভাবেই পুজোর দিনগুলি কাটিয়ে দেন। আর তাঁদের পরিবার! ক্ষোভে, অভিমানে মন ভরে উঠলেও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁরা মেনে নিয়েছেন-স্বামী বা বাবাকে পাওয়া যাবে না এই কটা দিন। তাঁরা নিজেদের মত করেই পুজো দেখেন, আত্মীস্বজনদের সঙ্গে সময় কাটান। শুধু শিলিগুড়ি কেন? গোটা রাজ্যের পুলিশ কর্মীদের পরিবারের পুজো কাটে বাড়ির ‘কর্তা’কে বাদ দিয়েই। নিজেদের মত করেই। বলছেন, তাঁদের পরিবারের লোকেরাই। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগির দুই বছরের ছোট্ট মেয়ে প্রতিষ্ঠা। সাত সকালে ছাড়া বাবা’র ক’দিন দেখাই পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠা। এএসপি’র স্ত্রী কৃপা পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে পুজো দেখেছেন তিনি। এএসপি বলেন, “পুজোর সময় ব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে বার হওয়ার সুযোগ কম থাকে। তা ছাড়া অন্য পুলিশ কর্মীরা রাতদিন ডিউটি করছেন। তাঁদের পাশে থেকেই মনোবল বাড়তে হয়। স্ত্রী, মেয়ে নিজের মত পুজো কাটায়।” গত ২৬ বছর ধরে পুজোর এই রুটিনে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলছেন শহরের ডিএসপি (ক্রাইম) প্রদীপ পালের স্ত্রী মনিকা দেবী। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রীতম ইঞ্জিনিয়ার। পুজোয় বাড়িতে এসেছে। ছোট্ট মেয়ে প্রার্থনা। বহুবার বাবা’র কাছে পুজো দেখানোর বায়না ধরেও নিরাশ হতে হয়েছে ভাই বোনকে। মনিকাদেবীর কথায়, “অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজো দেখতে যাই। আসছি আসছি বলে ওঁ আর আসে না। রাগ হয়। দুঃখ হয়। মেনে নিয়েছি।” শিলিগুড়ি থানার আইসি পিনাকী মজুমদার। দুই মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। বিভিন্ন এলাকায় ফোর্স মোতায়েন। ট্রাফিকের কাজে সাহায্য। মণ্ডপে নজরদারি ছাড়াও শিলিগুড়ির শহরের রোজকার থানার আইন শৃঙ্খলার দেখভাল। পুজোয় হাঁফ ছাড়ার সময় নেই পিনাকীবাবুর। মেয়েরা, স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই অভ্যস্ত নিজেরাই পুজো দেখায়-বলছেন আইসি। তাঁর কথায়, “ওঁদের জন্য খারাপ লাগে। কিন্তু কী করব? ওঁরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। এই আর কী!” একই অবস্থা এনজেপি রেল পুলিশের আইসি অচিন্ত্য গুপ্তের। তার উপরে পুজোয় মরশুমে ট্রেনের সময়সূচির অস্বাভাবিক পরিবর্তনে অচিন্ত্যবাবুর রাত কাটছে স্টেশনই। স্ত্রী শর্মিলা গুপ্ত, পেশায় চিকিৎসক। সাড়ে চার বছরের ছেলে রেশম। পুজোর দিনগুলি তাই বাদ দিয়ে সময় বার করে একসঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করেন তাঁরা, বলছেন শর্মিলা দেবী। তাঁর কথায়, “অন্য পরিবারগুলিকে দেখে মনটা খারাপ লাগে ঠিকই। তবে আমরা দু’জনেই আপৎকালীন পরিষেবার সঙ্গে জড়িত। তাই মেনে নিতে হয়েছে। ওঁকে তো পাওয়াই যায় না। আমি আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় পেলে কাটাই। বছরের অন্য সময় তাই আমরা একসঙ্গে ঘুরতে চাই।” সাদা পোশাকে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ডিউটি থেকে নানা কাজে ব্যস্তও থাকতেন। ত স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে সময় বার করে পুজোও দেখাতেন। কিন্তু প্রধাননগর থানার দায়িত্বে আসার পর দিনের ২৪ ঘন্টা সময় কম পড়েছে আইসি দীপঙ্কর সোমের কাছে। পরিবারের সঙ্গে পুজো দেখা তো দূরের কথা। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলার ফুরসৎ নেই। দীপঙ্করবাবুর কথায়, “কী যে বলি। এটাই আমাদের জীবন। বাড়ির লোকেরা নিজের মতো করেই পুজো কাটান।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.