টুকিটাকি কুড়িয়েই
পুজো কাটল নানকির

মা কী দিল এ বার? কেমন কাটল পুজোর তিন দিন?
উত্তর দেয় না ১৪ বছর বয়সী নানকি। শিলিগুড়ি জংশনের কুলিবস্তির এক কোণে বসে ‘সম্পত্তির’ হিসেব কষতে থাকে। সে কত কিছু! পেপসির বোতল ২৮৭টি। থার্মোকলের কাপ ৩২৭। কোক-ডিউ-টিউ মিলিয়ে ক্যান-এর সংখ্যা ১৩০০। সামনে পড়ে আছে আরও কত হাবিজাবি। নানা ফেলে দেওয়া জিনিসপত্তর। কথা বলার ফুরসৎ কোথায়!
সেই ষষ্ঠী থেকে শুরু। সন্ধ্যা থেকে রাতভর ঢাউস থলে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হিম-টিম লেগে নাক থেকে জল গড়াচ্ছে। বারবার নাক টানতে হচ্ছে। ফুটপাত থেকে কেনা লাল-সাদা চেক ফুল চেক শার্টের হাতা কালচে হয়ে গিয়েছে। হবে না কেন? গোড়ায় তো নাকটা মুছছিল ওই শার্টের হাতা দিয়েই। অবশেষে গোনা শেষ হলে সংসার প্রবীণ নানকু তাকায়। সামনে বসে থাকা বুড়া, বিপলা, বিট্টু, ছক্কাকে বলে, “সব জিনিস গুনে দিয়েছি। নেপালদার গুদামে পৌঁছে দিবি। যা টাকা দেবে তা নিয়ে হিলকার্ট রোডে ওই ব্যাঙ্কটার সামনে চলে আসবি।”
সাতসকালে ব্যাঙ্কের সামনে কী হবে?
ওখানে আমরা লুচি-তরকারি খাব! রোজ সারা রাত আমরা ‘কাজ’ করি। আপনাদের ফেলে দেওয়া ক্যান, বোতল, কাপ, প্লেট কুড়িয়ে আনি। তার পরে তা ভোরে গোডাউনে পৌঁছে দিই। নেপালদা একদম হিসেব করে পয়সা দিয়ে দেয়। কোনও বাকির কারবার নেই। সেই টাকা পেলে আমরা সকালে এক এক জন ভরপেট লুচি-তরকারি খাই। তার পরে শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের সামনে ডেরায় যাই। রেলের কলে স্নান-টান করে প্ল্যাটফর্মের ফ্যানের তলায় ঘুমিয়ে পড়ি।
দুপুরে খাস কোথায়?
গ্র্যান্ড হোটেলে।
গ্র্যান্ড মানে? আরে মাংস-ভাত। মাত্তর ২০ টাকায়! কোনও দিন মহানন্দা সেতুর নিচের হোটেলেও খাই। ‘গ্র্যান্ড হোটেল’টা জংশনের কাছে! সে কী!
কাজের অবসরে ঠাকুর দেখা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
চৌদ্দ বছর বয়স হলে কী হবে, নানকি শর্মার অভিজ্ঞতা যেন চৌদ্দ যুগের! হাসতে হাসতে বলল, “আরে মাংস মানে ছাঁট মাংস। বিধান মার্কেটের মুরগি হাটায় যে ছাট পড়ে থাকে, তা এনে গ্র্যান্ডের মালিক ভুবন মাতাল রান্নাবান্না করে। রাতে মদের ঠেকে ওরা ওই মাংস ১০ টাকা প্লেট বেচে। আমরা ওটা দিয়ে মাংস-ভাত খাই।”
নানকিরা সব মিলিয়ে ১০-১২ জনের একটা দল। সারা বছর প্লাস্টিক সহ নানা আবর্জনা কুড়িয়ে গুদামে জমা দিয়ে কোনও মতে চলে ওঁদের। কখনও-সখনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন ধরেবেঁধে নিয়ে গেলেও সুযোগ পেলেই সেখান থেকে হাওয়া হয়ে যাওয়া ওদের সকলের স্বভাব। নানকির কথা ধরা যাক। ছোটবেলায় এক পুজোর দিনে শিলিগুড়ি জংশনে বসে কাঁদতে দেখে কয়েকজন মিলে থানায় জমা দিয়েছিল। থানা থেকে আশ্রম, কয়েক হাত ঘুরে নানকি ফের সেই স্টেশনেই।
এক পুলিশ অফিসার জবরদস্তি কিছুদিন পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন বলে নানকি নিজের নামটা লিখতে পারে। হিসেবটা কষতে পারে। নানকি বলে, “আমার সেই পুলিশ চাচা বদলি হয়ে গিয়েছে। আমাকে বলে গিয়েছে, স্টেশনটা চাড়বি না।”
কোনও স্মৃতি নেই তোর? কোনও চিহ্ন? তাবিজ-কবচ?
ডান কপালের উপরে বড় মাপের তিল দেখিয়ে নানকি বলে, ‘এটাই আমার চিহ্ন’!
পুজোয় ঠাকুর দেখিস না?
নানকি যেন উদাস হয়ে যায়। বলতে থাকে, “দুগ্গা ঠাকুরের দিকে তাকালে আমারে মায়ের মুখ মনে পড়ে যায়।”
রাতে পাহাড়ে ইতিউতি বৃষ্টি হয়েছে। কুলিপাড়ার পাশের মহানন্দায় জল বেড়েছে। তাতে যেন মিশে গেল আরও কয়েক ফোঁটা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.