ফের ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হল বুনো হস্তিশাবকের। সোমবার রাত প্রায় ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে শিলিগুড়ির অদূরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া ডুয়ার্সগামী ব্রডগেজ রেল লাইনে। সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ ওই ট্রেনটি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার গতিতে যাচ্ছিল। শাবকটিকে ধাক্কা মারার পরে ট্রেনটি প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত দেহটি টেনে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পরে ট্রেনের গতি স্তব্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের সুকনার রেঞ্জ অফিসার কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বনকর্মীরা সেখানে যান। দেহটি লাইন থেকে সরানো হলে দুর্ঘটনার প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। মঙ্গলবার বনকর্মীরা পশু চিকিৎসককে নিয়ে গিয়ে মৃত স্ত্রী শাবকটির দেহের ময়না তদন্তের পরে পুড়িয়ে দেন। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা বলেন, “রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” ২০০৪ সালে এই ট্রেন লাইনটি ব্রডগেজে উন্নীত হওয়ার পরে একের পর এক দুর্ঘটনায় বুনো হাতির মৃত্যু ঘটেই চলেছে। রেল এবং বন দফতরের তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও সেবকের ওই দুর্ঘটনার পরে তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। রাতে ওই রুটে ট্রেন চালানো বন্ধ করার দাবিও ফের উঠেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বনকর্মী ও রেলের অফিসারদের মনিটরিংয়ের কী হল প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম সচ্চিদানন্দ সিংহের বক্তব্য, “বন ও রেলের মনিটরিংয়ের কাজ চলছে। তাতে লাভও হচ্ছে। তবে যোগাযোগ আরও বাড়ানো দরকার।” হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু কিন্তু সাফ বলেন, ‘‘ট্রেনে কাটা পড়ে বুনো হাতির মৃত্যু ঠেকাতে যে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার সেগুলি নেওয়া হচ্ছে না। যেগুলি নেওয়া হয়েছে তা পুরোপুরি ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এমন হলে বনের পরিবেশই আরও বিঘ্নিত হবে।” এ মুহুর্তে মহানন্দার জঙ্গলে ৩৫টি বুনো হাতির পাল ঘোরাঘুরি করছে। মৃত শাবকটিও ওই দলের। রাতে সেটি কোনও ভাবে ট্রেন লাইনে ওঠে আসে। দ্রুত গতির ট্রেনটি সামনে চলে আসার পরে শাবকটি দিশেহারা হয়ে পড়ে বলে অনুমান করছেন বনকর্মীরা। রাতেই বন্য জন্তু জঙ্গলের আড়াল থেকে বার হয়। তাহলে রাতে কেন জঙ্গলে এত দ্রুত গতিতে ট্রেন চালানো হবে সেই প্রশ্ন উঠেছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম সচ্চিদানন্দ সিংহের বক্তব্য, “যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে ওই এলাকায় ৪৫ কিমি গতিতে ট্রেন চালানোর অনুমতি রয়েছে। চালক কিছু ভুল করেননি। চালকের মুখ থেকে যতটুকু জানা গিয়েছে, শাবকটি আচমকা ট্রেন লাইনে উঠে পড়ে। চালক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ঘটনাস্থলে হাতির পাল ছিল না।”
|
জঙ্গল থেকে বার হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়া হস্তিশাবককে ঘিরে মঙ্গলবার সকালে চাঞ্চল্য ছড়াল ডুয়ার্সের মালবাজারে। এদিন সকালে বছর চারেকের ওই স্ত্রী হাতিটি গুডহোপ চা বাগানে ঢুকে পড়ে। লোকজন শাবকটিকে দেখেই ভিড় করেন। লোকজন দেখে শাবকটি কুমলাই চা বাগানে ঢুকে পড়ে। সেখানেও লোকজন ছুটে গেলে শাবকটি ডামডিম চা বাগান হয়ে চেল টপকে কাঠামবাড়ির জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বনকর্মীদের অনুমান, পথ ভুলে শাবক লোকালয়ে চলে আসে।
|
পশু পাখি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে বাজার থেকে কিনে বদরি পাখি জঙ্গলে ছাড়লেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। মঙ্গলবার বিশ্ব পশু দিবসে সেবক রোডের সাত মাইলে পিপলস ফর অ্যানিম্যাল সংস্থার পক্ষ থেকে ১০টি বদরি পাখি ছাড়া হয়। ছাড়া হয় শিলিগুড়ি শহরের নানা এলাকা থেকে উদ্ধার ৭টি গোখরো সাপও। সংগঠনের সম্পাদক সুজয় দত্ত বলেন, “পাখি ঘরে পোষা শখ যাঁদের তাঁরা যে সেগুলিকে কষ্ট দিচ্ছেন সেটা মাথায় রাখেন না। সে জন্যই এ উদ্যোগ।” |