এক অন্ধকার শক্তির সামনে বিজ্ঞান
ব্রহ্মাণ্ডের বাড়বাড়ন্তে
নোবেল তিন মার্কিনের

মাদের এই ব্রহ্মাণ্ড আকারে ক্রমশ বড় হয়ে চলেছে এটা জানাই ছিল। কিন্তু এই বেড়ে চলার হারটা যে ক্রমেই বেড়ে চলেছে, এটা জানানোর জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন জন্মসূত্রে মার্কিন তিন বিজ্ঞানী সল পার্লমাটার, ব্রায়ান স্মিট ও অ্যাডাম রিস।
কিন্তু তাঁদের এই আবিষ্কারের কারণেই পদার্থবিজ্ঞান এখন এক বিশাল প্রশ্নচিহ্নের সামনে। কারণ মহাবিশ্বের এই ধরনের আয়তন বৃদ্ধির মূলে যে শক্তি, বিজ্ঞানীরা তাকে বলে থাকেন ‘অন্ধকার শক্তি’। অন্ধকার কারণ, এর সম্পর্কে এখনও বিশেষ কিছু জানা নেই। বিশ্বের প্রতিটি বস্তু প্রতিটি বস্তুকে আকর্ষণ করে, যাকে বলি মহাকর্ষ বল। আর অন্ধকার শক্তির কাজটা ঠিক এর উল্টো।
বহু দূরের ৫০টিরও বেশি সুপারনোভার (বিস্ফোরণ হয়ে চলেছে এমন তারা) আলোর ঔজ্জ্বল্য ও রং বিশ্লেষণ করে সল-স্মিট-রিসরা দেখেছেন, সেগুলি ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত হারের চেয়ে দ্রুত হারে। কিন্তু কেন? এর সম্ভাব্য উত্তরই হল মহাকর্ষের বিপরীতধর্মী ওই অন্ধকার শক্তি। কিন্তু কী ভাবে, কেন ওই শক্তি এই কাজ করে, কেমন তার অন্যান্য ধর্ম এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায় এখন ভাবীকালের বিজ্ঞানসাধকদের।

সল পার্লমাটার

অ্যাডাম রিস

ব্রায়ান স্মিট
মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের মতে, ১৪০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং থেকে এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পর থেকেই এটা ক্রমে বড় হয়ে চলেছে। বয়সে তো বটেই, আকারেও। তারাদের পরিবারগুলি ও আর যা কিছু আছে তারা সবই একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এদের পরস্পরের মধ্যে আবার কাজ করছে মহাকর্ষ বলের আকর্ষণ। সে কারণে ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারিত হওয়ার হারটা ক্রমেই কমে আসছে, এমন একটা ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের মধ্যে। এই ধারণাটাই সত্যি কি না, তা মাপজোক করে দেখার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে শুরু হয়েছিল দু’টি গবেষণা প্রকল্প।
বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সল পার্লমাটারের নেতৃত্বে ১৯৮৮ সালে শুরু হয় ‘সুপারনোভা কসমোলজি প্রোজেক্ট’। এর ছ’বছর পর ‘হাই-জেড সুপারনোভা সার্চ টিম’ শুরু করে অনুরূপ একটি গবেষণা। ওয়েস্টন ক্রিকের অস্ট্রেলিয়ান ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ব্রায়ান স্মিট ছিলেন এর নেতৃত্বে। আর ছিলেন অ্যাডাম রিস। তিনি জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি ও বাল্টিমোরের (মেরিল্যান্ড) স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইন্সিটিটিউটের অধ্যাপক।
সল-স্মিট-রিসদের গবেষণা জানিয়েছে, দু’টি তারার মধ্যে দূরত্ব ২০১০-এ যতটা বেড়েছে, ২০১১-তে বাড়বে তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ আমাদের এই মহাবিশ্ব ক্রমশ দ্রুততর হারে বাড়তে বাড়তে এক সময় অতিশীতল এক ব্রহ্মাণ্ডে পরিণত হবে। মহাবিশ্বের এই প্রকৃতি ও ভবিষ্যৎ জানানোর জন্যই সল-রিস-স্মিটদের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্য বলে মনে করেছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। মোট পুরস্কার মূল্যের (১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) অর্ধেক পাবেন ৫২ বছর বয়সী সল। বাকিটা ভাগ করে নেবেন ৪৪ বছর বয়সী স্মিট ও ৪২ বছরের রিস।
আজ যখন নোবেলপ্রাপ্তির খবর জানাতে ফোন যায় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়, অধ্যাপক স্মিট তখন নৈশভোজে বসতে যাচ্ছেন। সুইডিশ কণ্ঠে খবরটা শুনে এতই বিহ্বল হয়ে যান যে, সামলে নিতে কয়েক চক্কর ঘুরপাক খেয়ে নিতে হয় তাঁকে। এর পর সামলে উঠে জানান, “ঠিক বাবা হওয়ার মুহূর্তটার মতো লাগছিল।” গবেষণার ফল দেখেও এমনই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন স্মিটরা। যেন খুঁজতে বেরিয়েছিলেন রুমাল, কিন্তু পেয়ে গেলেন বেড়াল। তা-ও যে সে বেড়াল নয়, অন্ধকার ঘরের কালো বেড়াল। হেঁয়ালির মতো শোনালেও ব্যাপারটা প্রায় তেমনই। বিজ্ঞানীর দু’টি দল একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমে যে জবাব পেলেন, সেই জবাবটা নিজেই এক প্রশ্নের পাহাড়। বস্তুত, নতুন আবিষ্কারের জন্য সল-স্মিট-রিসদের সম্মানিত করা হলেও অন্য ভাবে বলা যায়, এ বারের নেবেলটা জিতল কিন্তু এক অজানা অন্ধকার শক্তি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.