পরিবর্তনের হাওয়ায় বদলে গেল দুর্গা পুজোর আয়োজনের জাঁকজমকের সমীকরণ। গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে কোচবিহার জেলার বক্সিরহাটের জোড়াই মোড় সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি বিগ বাজেটের পুজোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে দুর্গোৎসব কমিটির পুজো ‘সিপিএমের পুজো’ বলেই পরিচিত। এ বার ২৯ তম বর্ষের ওই পুজো হচ্ছে নিতান্ত সাদামাটা ভাবে। অন্যদিকে, দেড়শো মিটার দূরেই জোড়াই মোড় সর্বজনীন দুর্গা পুজা কমিটির পুজোয় জাঁকজমক রয়েছে। চতুর্থ বর্ষের ওই পুজো এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ‘তৃণমূলের পুজো’ বলেই বেশি পরিচিত। সব মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতির মতো দুর্গাপুজো কমিটির আয়োজনেও কার্যত একতরফা শৌর্য প্রদর্শনের খণ্ডচিত্রই যেন ফুটে উঠেছে জোড়াই মোড়ে। তবে পুজো ঘিরে সৌহার্দ্য ও মিলেমিশে চলার উপরেই জোর দিয়েছেন যুযুধান দুই শিবিরের পুজো উদ্যোক্তারা।
জোড়াই মোড় সার্বজনীন দুর্গাপুজা কমিটির পুজোয় এবার মণ্ডপ সজ্জার থিম পাতাল ভৈরবী। গুহা মুখের কৃত্রিম প্রবেশ পথ পেরিয়ে দর্শনার্থীদের ওই মণ্ডপে যেতে হবে। বিশাল এলাকা জুড়ে কয়েক ফুট মাটি কেটে তৈরি কৃত্রিম পাতাল চত্বরে দেখা মিলবে দেবী প্রতিমার। আর ওই পাতালের চারদিকের দেওয়াল জুড়ে থাকবে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপত্যের মূর্তি। হিংস্র বন্যজন্তুদের ডাক আলোকধ্বনির মাধ্যমে দর্শনার্থীদের কাছে পাতাল পুরীর পরিবেশটা জীবন্ত করে তুলবে। চন্দননগরের আলোকসজ্জার নজর কাড়বে অন্তত ১৪ ফুট উচ্চতার বিশালাকার দৈত্য কিং কং-এর অঙ্গভঙ্গি। ওই পুজো কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীতে আছেন তৃণমূলের ভানুকুমারী-২ অঞ্চল কমিটির সভাপতি দেবেন মণ্ডল। পুজো কমিটির সম্পাদক রামু বর্মন, সভাপতি বীরেন প্রধান, সকলেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত।
দেবেনবাবু বলেন, “পুজো কমিটিতে সব দলের সদস্যরাই আছেন। তার পরেই আমাদের পুজোকে তৃণমূলের পুজো বললে কী করার আছে। আগে সিপিএমের নেতারা এলাকার বড় পুজোর তদারকি করতেন। এখন মানুষ আমাদের সঙ্গে বলে বড় পুজোতে আমরা তদারকি করছি। তবে পুজোর সঙ্গে রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। পুজোর সময় দলমত নির্বিশেষে সবাই আনন্দের পরিবেশ রাখতে হবে।” জোড়াই মোড় সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোক্তারা জানান, মন্দিরের ধাঁচে মণ্ডপ হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পীর তৈরি প্রতিমা থাকবে। আলোকসজ্জা, বস্ত্র বিতরণের মতো কর্মসূচিও তালিকায় নেই। ওই পুজোর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তথা সিপিএমের ভানুকুমারী-২ লোকাল কমিটির নেতা প্রিয়নাথ বর্মন বলেন, “তৃণমূল নেতাদের তদারকিতে পুজো হচ্ছে। আমরাও বড় পুজো করলে বাসিন্দাদের চাঁদার বাড়তি চাপ হতো। সেটা এড়াতেই সাদামাটা পুজো করা হয়েছে।” ওই পুজোর কর্মকর্তা সিপিএমের প্রাক্তন প্রধান অনন্ত বর্মন বলনে, “সবই পরিবর্তনের জের। শান্তিরক্ষাই মূল কথা।” |