|
|
|
|
|
বিশ্বাসের পুজো |
|
ছবি: সমিত ঘোষ |
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা শহর বালুরঘাটের খিদিরপুরের সাহাবাড়ির পুজো বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ বছর এই পুজো ছিয়াত্তর বছরে পা দিল। রয়েছে দুর্গামণ্ডপ। ওখানেই গোপালপুজো হয়। এবং যেখানে দুর্গাপুজো হয়, সেখানেই শিবলিঙ্গ রয়েছে। পুজোর সূচনা করেন সাহা পরিবারের গৃহবধূ কালিদাসী সাহা। দেবী উমার স্বপ্নাদেশে তিনিই পুজো শুরু করেন। ওপার বাংলার ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমার তিল্লি গ্রামের তৎকালীন জমিদার গোপেশ্বর সাহা পুত্রবধূর শক্তি আরাধনায় অভিভূত হয়ে মাতৃপুজোয় সায় দিয়েছিলেন। কালিদাসী সাহা নিজেই স্বপ্নাদেশে পাওয়া মন্ত্র উচ্চারণ করে পুজো করতেন।
বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধি হলেন কার্তিকচন্দ্র সাহা। বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যেও নানা লৌকিক-অলৌকিক কাহিনি জুড়ে থাকে। সাহা পরিবারের কাছ থেকে জানা গেল একদিন সন্ধ্যায় কালিদাসী দেবী তুলসীতলায় সন্ধ্যাপ্রদীপ দিচ্ছিলেন, এমন সময় একটি অপরিচিত মেয়ে তাঁর হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়ে নেয়। বেশ কয়েকদিন তিনি ঘরেই ছিলেন। স্বপ্নে দেবী-মা’র কাছ থেকে মন্ত্রশক্তি লাভ করেন। এর পর অ-ব্রাহ্মণ পরিবারের ওই গৃহবধূ হয়ে ওঠেন দুর্গাদাসী। ভক্তরা অনেকে তাঁকে দুর্গা-মা বলেও ডাকত। কালিদাসী দেবী নিজেই দুর্গাপুজো করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর অবশ্য পুরোহিতের সাহায্যে পুজো হয়ে আসছে।
আলোর রোশনাই, মণ্ডপের জাঁকজমকহীন এই পুজোয় এখনও মানুষের সংস্কার, শ্রদ্ধা জড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস, দেবী মা’র কাছে মানত করে অনেকে ফল পেয়েছেন। অনেক ভক্ত অসুস্থতা কাটিয়ে সুস্থ হয়েছেন, নিঃসন্তানেরা সন্তান লাভ করেছেন। অনেকের অভাবের সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরেছে মায়ের আশীর্বাদে। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আজও নানা প্রান্তের মানুষ পুজোর চার দিন দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্রতী হন। নিষ্ঠা, ভক্তি ও শ্রদ্ধাচার এই পুজোকে পূর্ণতা দিয়েছে।
|
ভুঁইয়াবাড়ির পুজো |
|
ছবি: সুদীপ দত্ত |
জলপাইগুড়ির বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে ভুঁইয়াবাড়ির পুজো অন্যতম। সূত্রপাত ১৯৩১-এ, বাংলাদেশের ঢাকা মানিকগঞ্জের রূপসা গ্রামে। কোনও বছর, পরিবারের কারও মৃত্যুতেও এই পুজো কখনও বন্ধ হয়নি। এক সময় প্রতিমা তৈরির জন্য বাংলাদেশ থেকে কুমোর আসত। পুরোহিতরা বংশপরম্পরায় এ বাড়ির পুজো করে চলেছেন। এক সময় বলিদান প্রথা চালু ছিল। এই পুজোর একটি বিশেষ প্রথা আছে সন্ধিপুজোর সময় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীকে উৎসর্গ করা। এর নাম ‘দীপমালা’। দেবীর গাত্রমার্জনার জন্য ব্যবহৃত উপকরণের মধ্যে থাকে মানস সরোবরের জলও। এই পুজো হয় অত্যন্ত নিয়মনিষ্ঠ ভাবে। বিসর্জনের সময় দেবীর নতুন গহনা খুলে নিয়ে পরানো হয় পুরনো গহনা। নতুন গহনা রেখে দেওয়া হয় পরের বছরের জন্য। বিসর্জনের পর পুজোমণ্ডপে নারায়ণপুজো হয়। বাড়ির সদস্যরা একত্র হয়ে এই পুজো করেন। নিয়মনিষ্ঠার এই পুজো দেখতে পুজোমণ্ডপে ভিড় জমান দূর-দূরান্তের বহু মানুষ।
|
বাড়ি থেকে সর্বজনীন |
|
ছবি: অনিতা দত্ত |
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে পালবাড়ির পুজোর বয়স প্রায় তিনশো বছর। বাড়ির পুজো হলেও এ পুজো এখন সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। গৌরীপ্রসাদ পাল নামে এক জন অবস্থাপন্ন ব্যবসায়ী এই পুজোর সূত্রপাত করেছিলেন। গোপেন্দ্রনারায়ণ পাল ষোড়শোপচারে মায়ের পুজো করতেন। এক সময় পুজোমণ্ডপে গান-বাজনার আসর বসত, হত থিয়েটারও। এই পুজোকে ঘিরে বহু অলৌকিক কাহিনি আছে। যেমন, মোক্তারপাড়ার প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী রাম দত্তের ছেলে রানা দত্তের বয়স তখন সাত/আট বছর। রানা দত্ত একবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় চিকিৎসক করুণাময় দত্ত কোরামিনের শেষ ডোজ দিয়ে অপেক্ষা করছেন। তখন কেউ এক জন বলেছিল যে, পালবাড়ির পুজোর বেদি-ধোওয়া জল খেলে রানা দত্ত সুস্থ হয়ে উঠবে। রানা দত্তের ঠাকুরদা ভিজে কাপড়ে সেই জল এনে ছিটিয়ে দিলে রানা দত্ত সুস্থ হয়ে ওঠে। বালুরঘাটের মানুষের ভক্তি আর বিশ্বাসে মিশে থাকা এই পুজোর গুরুত্বই আলাদা।
|
সাপুড়ে |
ছোটবেলা থেকে বনজঙ্গল তাঁকে টানে। এই টান থেকে সাপদের মেরে ফেলা তাঁর না-পসন্দ। কারণ? তিনি ভালবাসেন ওদের। এই ভালবাসা থেকে জীবনে প্রথমবার একটি কোবরা হাত দিয়ে ধরেছিলেন এবং বাঁচিয়েছিলেন তাকে। ২০০১ থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫০০০ সাপ বাঁচিয়েছেন তিনি। সাপ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রচুর, বোঝেন সাপের মনস্তত্ত্বও। কারও বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়লে ডাক পড়ে তাঁর। মানুষ আর সাপ দু’জনকেই রক্ষা করেন তিনি। কী করেন ধরাপড়া সাপ নিয়ে? জলপাইগুড়ির নয়াবস্তির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস জানান, বিষাক্তগুলোকে জঙ্গলে ছেড়ে দিই, আর যাদের বিষ নেই, তাদের অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায়। দিন-রাত্রি যে-কোনও সময়ে মানুষের ডাকে সাড়া দিতে কোনও ক্লান্তি নেই। সাপ কামড়ায়নি কখনও? একগাল হেসে বিশ্বজিৎ জানান, এখনও পর্যন্ত না।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|