পুজোয় ‘উধাও’ বহু চিকিৎসক, সঙ্কটে রোগীরা
পুজোর ছুটিতে অসুখেরও ছুটি!
আর তা যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে বেঘোরে প্রাণ যাওয়া কিংবা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকা ছাড়া গতি নেই। কারণ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় সব হাসপাতালেই অধিকাংশ চিকিৎসক ছুটিতে। এমনকী পাড়ায় প্র্যাকটিস করেন যে চিকিৎসকেরা, তাঁদেরও চেম্বারে তালা।
কোনও মতে হাসপাতালে গিয়ে একটা শয্যা জোগাড় করতে পারলেও পুজোর সময় চিকিৎসকের দেখা পাওয়াটা প্রায় লটারি পাওয়ার সমান হয়ে পড়ে। এই পরিচিত ছবিতে কিছুটা বদল আনতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর দিনে সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগে কে, কোন দায়িত্ব থাকছেন, সেই তালিকা চেয়েছেন তিনি। উদ্দেশ্য, দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করা। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যাতে দায় এড়াতে না পারেন, সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে পুজোর চার দিন থাকবে ওই তালিকা।
বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিকা চিকিৎসকদের জানিয়েও দিয়েছেন। কিছু হাসপাতাল আবার কোন বিভাগে কত ডাক্তার ছুটিতে, আর ক’জন ডিউটিতে, তার তালিকাও পাঠিয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলির কর্তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে যে গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে, সেটা চিকিৎসকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরে সবাই নিজের বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী কাজ করবেন।
তাতেও হাল ফিরছে কি?
দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের প্রভাব সরকারি ক্ষেত্রে থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপরে কার্যত কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতালেই ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ চিকিৎসক ছুটিতে চলে গিয়েছেন। রোগী ভর্তি হচ্ছেন ঠকই, কিন্তু চিকিৎসা মিলছে না। এমন অভিযোগ উঠছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
ইএম বাইপাসে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর ছেলে সুজিত ভট্টাচার্য বলেন, “বাবার ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে। তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। পঞ্চমীতে চিকিৎসক এসেছিলেন। কিন্তু ষষ্ঠী থেকে বাবা বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন। ওই চিকিৎসকের মোবাইলও বন্ধ। কোনও যোগাযোগ করতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও হাত তুলে দিয়েছেন।” ওই হাসপাতালের সিইও স্বরাজব্রত পুরকায়স্থের কথায়, “আমি রোজ হাসপাতালে আসছি। অন্য বিভাগের কর্মীদেরও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকদের উপরে নিয়ন্ত্রণ নেই আমাদের। তাঁদের বেশির ভাগই ছুটিতে। অনেকে ছুটি কাটাতে বিদেশেও চলে গিয়েছেন। রোগীদের কথা কেউ ভাবছেন না, এটাই দুর্ভাগ্যজনক।”
প্রশ্ন উঠেছে, কেন প্রতি বার পুজোর সময়ে এই সমস্যা হবে। কেন আগে থেকে ‘ডিউটি রোস্টার’ হবে না, যাতে রোগীদের ভোগান্তি কম হয়? এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ ঘোষ অবশ্য বলছেন, “ডিউটি রোস্টার সময় মতোই করা হয়। তার পরেও কিছু সমস্যা তৈরি হয়ে যায়।”
তৃণমূল বিধায়ক তথা বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। শোভনদেববাবুরও অভিযোগ, পুজো শুরু হতে না-হতেই হাসপাতাল কার্যত চিকিৎসক-শূন্য। তাঁর কথায়, “পুজোর সময়ে কারও অসুস্থ হওয়ারও যেন অধিকার নেই। মানুষ কত অসহায় হয়ে হাসপাতালে আসেন, সেটা অধিকাংশ চিকিৎসকই বোঝেন না।” অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে ঘটনাটি সবিস্তার জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। শোভনদেববাবুর কথায়, “উনি নিজেও হয়তো জানেন। পাশাপাশি আমাদের অভিজ্ঞতার কথাও বলব। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে এক অব্যবস্থা।”
ঢাকুরিয়ার ওই হাসপাতালের তরফে সুমন ঘোষ দাবি করেন, চিকিৎসকদের অনেকে ছুটিতে গেলেও নার্স, টেকনিশিয়ানরা রয়েছেন। তাঁর কথায়, “ধরা যাক, আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন কার্ডিওলজিস্ট রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন ছুটিতে। কিন্তু পাঁচ জন তো রয়েছেন। কোনও রোগী তাঁর পছন্দের ডাক্তারকে হয়তো পাবেন না, কিন্তু একই অভিজ্ঞতার অন্য কোনও চিকিৎসককে পাবেন।”

হাসপাতালে আগুন, আতঙ্ক
বিধাননগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের তৃতীয় তলে আগুন লাগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ। প্রবল ধোঁয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রোগী, রোগীর পরিজন এবং হাসপাতালের কর্মীরা। জানালার কাচ ভেঙে ধোঁয়া বের করেন তাঁরা। জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের একটি ইঞ্জিন। তবে তার আগেই আগুন নিভে যায় বলে জানান হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু। তিনি বলেন, “আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ওই তলার রোগীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.