‘টিম’ পর্যুদস্ত হওয়ায় হয়তো অনেকের মনোবল তলানিতে ঠেকেছে। অনেকে এখনও বিষাদে আচ্ছন্ন। তিনি কিন্তু আগামী দিনে ফিরে আসার জন্য মরিয়া। তাই পুজোর ‘ছুটি-ছুটি’ মনোভাবকে এড়িয়ে জনসংযোগ আরও বাড়াতে নিরন্তর ‘প্র্যাকটিস’ চালাচ্ছেন তিনি। কখনও ডাকাতির গুলিতে হত নিরাপত্তা রক্ষীর পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছেন আর্থিক সাহায্য। আবার কখনও সেবক কিংবা এনজেপিতে বস্তি এলাকায় গরিব মানুষজনদের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নিচ্ছেন তিনি।
তিনি মানে অশোক ভট্টাচার্য। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির চার-চারবারের বিধায়ক ছিলেন। মন্ত্রী থাকাকালীন পুজোর কদিন হরিজন বস্তি সহ কয়েকটি পুজোয় তাঁর উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। এখন মন্ত্রী নন। তাতেও সাদরে আমন্ত্রণ করে তাঁকে নিয়ে গিয়েছেন সেই উদ্যোক্তারা। বরং আরও কয়েকটি কলোনি এলাকায় তাঁকে ডেকে সুখ-দুঃখের গল্পগাছা করতেও আগ্রহ দেখা গিয়েছে গরিব-দুঃখীদের। শুধু তাই নয়, এখনও অশোকবাবুর বাড়িতে বিভিন্ন এলাকার লোকজনের আনাগোনা খুব একটা কমেনি। পুর পরিষেবা সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধানের আর্জি জানিয়ে বার্ধক্য ভাতার গ্রাহক কিংবা আবাসন তৈরির কাজে ঢিলেমির অভিযোগ নিয়ে পৌঁছচ্ছেন অনেকেই। কখনও দলের কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতাকে তা জানিয়ে দিচ্ছেন। আবার কখনও অফিসারদেরও অনুরোধ করছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। |
বস্তুত, ভোটে হারের পর থেকেই যে অশোকবাবু হৃত জমি পুনরূদ্ধারে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন তা যেন আরও স্পষ্ট হল এবারের পুজোর আবহে। শহরের নানা প্রান্তে যখন পুজোর উদ্বোধন হচ্ছে, সেই সময়ে অশোকবাবু তিনধারিয়ায় ধস দুর্গতদের পাশে পৌঁছে ওষুধ-পথ্য বিলি করেছেন। পাহাড় চুক্তি নিয়ে নানা এলাকায় সভা-সমাবেশের পাশাপাশি বোধনের দিনেই প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর নতুন বই (দার্জিলিং চুক্তি, সমাধান না সমস্যা?) প্রকাশিত হয়েছে।
মহাষষ্ঠীর দিন অশোকবাবুর গন্তব্য ছিল, শিলিগুড়ির দেবাশিস কলোনির বাসিন্দা তথা ডাকাতদের গুলিতে নিহত নিরাপত্তা রক্ষী দেবকুমার নন্দীর বাড়ি। দলের তরফে দেবকুমারবাবুর পরিবারের হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন পুরমন্ত্রী। পুরসভার তরফে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা হলেও তা মেলেনি বলে পরিবারের লোকজনেরা অশোকবাবুকে জানান। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী দলের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে পুরসভার কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে তাঁদের আশ্বাস দেন।
অবশ্য অশোকবাবু একা নন। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তাঁর পাশে সামিল হয়েছেন দলের প্রায় সকলেই। পুজোর দিনগুলিতে জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য অশোকবাবুর সঙ্গেই আসরে নামতে দেখা গিয়েছে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার, নুরুল ইসলাম, শঙ্কর ঘোষদেরও। মহাসপ্তমীর দিনে একাধিক মণ্ডপে দেখা গিয়েছে পুরমন্ত্রীকে। তারই মধ্যে দলীয় সতীর্থদের নিয়ে ঘুরেছেন সেবক পাহাড়ের বস্তি এলাকায়। সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন আগে যে সব সরকারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল তা হচ্ছে কি না? আবার এনজেপি গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন, যে সব প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে তার কাজকর্ম কেমন চলছে?
সব মিলিয়ে পুজোর দিনগুলিতেও অশোকবাবুরা আগামী দিনের লড়াইয়ের জন্য শক্তপোক্ত জমি তৈরির কাজে ডুবে রয়েছেন। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর সতর্ক জবাব, “এর মধ্যে রাজনীতির কিছু নেই। সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়। পুজোর সময়ও ব্যতিক্রম হয় না। তবে মন্ত্রী না-থাকায় যেমন অনেক গরিব মানুষকে সরাসরি সাহায্য করতে পারছি না। উল্টোদিকে, দেখলে তাঁদের হয়ে লড়াই করে দাবি পূরণের কাজটা ভাল হচ্ছে। যেখানে যতটা পারছি দলের তরফে আর্তিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। পুজোর সময়ে রাজনীতির কথা থাক।” |