কখনও এনজেপি স্টেশনে পর্যটকদের সমস্যা নিয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য হাজির হয়েছেন। পরমুহূর্তে দেখা গিয়েছে মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘুরছেন। রাস্তাঘাটে গর্ত দেখে পুরসভার অফিসার, মেয়র পারিষদকে ফোন করে তা সারানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার কখনও দর্শনার্থীদের নানা অসুবিধের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং পুলিশের কর্তাদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন। সব মিলিয়ে মহাসপ্তমীর দিন সকাল থেকে প্রায় গভীর রাত পর্যন্ত এমনই চরকি-পাক খেলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
বস্তুত, মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পরে এটাই প্রথম পুজো! স্বভাবতই তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশ্যার পারদ আকাশছোঁয়া। গৌতমবাবু বলেন, “বহু পুজো কমিটি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। অনেকেই চাইছেন, যাতে আমি অন্তত একবার মণ্ডপে যাই। সে চেষ্টাই করছি। আসলে সকলের আনন্দে সামিল হতে চাইছি। সারাদিন ঘুরছি অথচ কোনও ক্লান্তি বোধ হচ্ছে না। আমারও খুব ভাল লাগছে। এ ছাড়া আমার কর্তব্য সবাই যাতে ভালভাবে পুজো দেখতে পারে সেটা দেখা। তাই ঘুরে দেখছি কোথাও কোনও অসুবিধে হচ্ছে কী না।” |
এদিন সকাল ৮টাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন মন্ত্রী। প্রথমেই তিনি চলে যান এনজেপিতে। সেখানে পর্যটকদের জন্য ‘হেল্প-ডেস্ক’ চালু করেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রক। সেখান থেকে পর্যটকদের ঠিকঠাক তথ্য দেওয়া হচ্ছে কী না? পর্যটকরা গাড়ি পাচ্ছেন কী না? সে ব্যপারে খোঁজখবর নেন। সেখানে ইর্স্টা হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্র্ী ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সানা্যালও সকাল তেকে তদারকি করছিলেন। সম্রাটবাবুরা মন্ত্রীকে জানান, দার্জিলিং ও সিকিমের পেলিং যাওয়ার জন্য প্রচুর পর্যটক এনজেপিতে ট্রেন থেকে নেমে রওনা হয়েছে। তাঁদের হেল্প-ডেস্ক থেকে সাহায্য করা হয়েছে। কজন পর্যটকও গাড়ি নিয়ে সমস্যার কথা মন্ত্রীকে জানান। তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে পর্যটকদের যাওয়ার ব্যবস্থা করিয়ে দেন। সেখান থেকে মন্ত্রী চলে যান ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে ৮টি গাড়িতে এলাকার বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের প্রতিমা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জনশীল শর্মা। সেটি উদ্বোধন করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি রওনা হন শালুগাড়ায়। সেখানে গোর্খা সম্প্রদায়ের ফুলপাতি উৎসবে যোগ দেন মন্ত্রী। গোর্খা টুপি, খাদা পড়ে শোভাযাত্রায় সামিল হন।
শালুগাড়া থেকে মন্ত্রী যান ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানেও কাউন্সিলর নিখিল সাহানি বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের পুজো ঘোরানোর আয়োজন করেন। মন্ত্রী গাড়িতে উঠে সকলের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরই যান সুভাষপল্লির শিবমন্দির রোডে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত একটি পুজো মণ্ডপে। সেখান থেকে কাচারি রোড যুবক সঙ্ঘের পুজোয়। সেখানে দুঃস্থ মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন তিনি। মাইকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমাকে মন্ত্রী হিসেব ভাববেন না। আপনজন হিসেবে ভাববেন।”
এর পরেই মন্ত্রী ছোটেন আশ্রম পাড়ার একটি পুজো মণ্ডপে। সেখানেও মন্ত্রী বস্ত্র বিতরণ করেন। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে ৫ হাজার টাকা দান করা হয়। এর পরেই ফের যান শালুগাড়ায়। সেখানে বিবেকানন্দনগরে বাবু সিংহ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন করেন। এলাকার মানুষ মন্ত্রীকে পেয়ে খুশিতে আপ্লুত হয়ে উঠেন। কয়েকজন বলেন, “মন্ত্রী কেন, কোনদিন পুজোতে একজন বিধায়ক পর্যন্ত উপস্থিত হননি।” দার্জিলিং মোড়ের কাছে গিয়ে একটি রেস্তোরাঁর উদ্বোধনেও যোগ দেন মন্ত্রী। এরই ফাঁকে, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বাড়ি বানানোর কাজে কারা বাধা দিচ্ছেন শুনে মন্ত্রী ছুটে যান সেখান। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সব শুনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। পুজোয় সব ঠিকঠাক আছে কী না তা নিয়েও কথা বলেন পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে। বিকাল যখন গড়িয়ে পড়ছে মন্ত্রী ফেরেন বাড়িতে। কিছুক্ষণ কাটিয়ে তিনি রওনা হন ফুলবাড়ির পথে। |