|
|
|
|
বরাদ্দ বাড়িয়ে সহায় প্রকল্পে গতি আনতে চাইছে রাজ্য |
নুরুল আবসার • কলকাতা
|
‘সহায়’ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে দিল সরকার।
প্রকল্পটিতে দু’বেলা খাওয়ার জোগাড় করতে পারেন না, এমন সহায়-সম্বলহীন গরিব মানুষদের এক বেলা রান্না করা খাবার দেওয়ার কথা। এ জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল ১৬ টাকা। অক্টোবর মাস থেকে এই বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের যুগ্ম সচিব দিলীপ পাল বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণেই গরিব মানুষদের খাওয়ানোর জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়াতে হল। তা ছাড়া, পুষ্টিকর খাবারও দিতে হবে। বাড়তি টাকায় প্রতিটি মানুষকে যাতে অন্তত আধখানা করে ডিম দেওয়া হয় সে দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।” পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুজোর পরে ব্লক পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক করে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা যায়, সে চেষ্টা হবে।”
তবে এ পর্যন্ত প্রকল্পটিতে মাথাপিছু বরাদ্দ চার বার বাড়ানো হলেও এর সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যে প্রকল্পটি চালু হয়েছে ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে। প্রথমে মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল ৭ টাকা। পরবর্তীকালে তা বেড়ে হয় ১০ টাকা। তৃতীয় দফায় ১৬ টাকা। কিন্তু বার বার বরাদ্দ বাড়ানো সত্ত্বেও এখনও রাজ্যের বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রকল্পটি চালু করা যায়নি।
২০০৫-২০০৬ সালে এ রাজ্যে যে গ্রামীণ পরিবার সমীক্ষা হয় তাতে দেখা যায়, মোট ৩.৫ শতাংশ পরিবার এক বেলার খাবার জোগাড় করতে পারেন না। ১৬.৫ শতাংশ পরিবার দু’বেলার খাবার জোগাড় করতে অক্ষম। মূলত তাঁদের জন্যই সহায় প্রকল্পটি চালু করার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। প্রকল্পটি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট জেলা গ্রামোন্নয়ন ‘সেল’-কে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে ‘সেল’-এর আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাজ্য জুড়ে ব্লক পর্যায়ের আধিকারিক এবং পঞ্চায়েতের কর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় ‘সহায় বন্ধু’। ঠিক হয় তাঁরাই গরিব মানুষদের রান্না করা খাবার খাওয়াবেন। তাঁদের সাহায্য করবে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি।
কিন্তু এত কিছুর পরেও অনেক জেলাতেই ‘আসল’ কাজ শুরু হয়নি। পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় সাড়ে তিন হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র ৭৪৯টিতে প্রকল্পটি চালু হয়েছে। খাওয়ানো হচ্ছে ৫০ হাজার মানুষকে। হাওড়া জেলাতে তো প্রকল্পটি চালু নেই। এই জেলার ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে রয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার গরিব মানুষ যাঁরা দু’বেলা খেতে পান না। কিন্তু প্রকল্পটি চালু করা হয় মাত্র একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে। কিছু দিন চলার পরে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। জেলা গ্রামোন্নয়ন ‘সেল’ থেকে জানা যায়, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘কেটারার’ দিয়ে গরিব মানুষদের খাওয়ানো হয়েছিল। এটিকে ‘বেনিয়ম’ হিসাবে উল্লেখ করে খাওয়ানোর টাকা পঞ্চায়েতকে দেওয়া হয়নি। টাকা না পেয়ে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে দিলীপবাবু বলেন, “হাওড়ার জেলাশাসক এবং সভাধিপতিকে আমরা বার বার বলছি প্রকল্পটি শুরু করার জন্য। সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না।” জেলা সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, “পাঁচটি ব্লকের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রকল্পটি চালু হয়েছিল।” তবে তিনি স্বীকার করেন, “কিছু অসুবিধার কারণে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। পুজোর পরে সব প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
রাজের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে পঞ্চায়েতগুলিকে আগেই খরচ করতে হয়। জেলা পরিষদের কাছে হিসাব দাখিল করলে তবেই তারা টাকা পায়। আগে থেকে টাকা খরচ করতে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির একাংশের ‘অনীহা’ রয়েছে। এ ছাড়া, পঞ্চায়েত এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাস করা গরিব মানুষদের একত্র করে খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও অসুবিধা হচ্ছে বলে দাবি করেছে কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত। এ কথা মানতে নারাজ দিলীপবাবু। তাঁর প্রশ্ন, “তা হলে বেশ কিছু পঞ্চায়েতে প্রকল্পটি চলছে কী করে?” তাঁর বক্তব্য, “মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকল্পটি চালাতে হবে। প্রশিক্ষণে পঞ্চায়েত কর্তা এবং স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এ কথাই বলছি। টাকার তো আর অভাব হচ্ছে না।”
|
মহোৎসবে আপাতত ফাঁড়া কাটল বিদ্যুতের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এ বার পুজোর মুখে বিদ্যুতের রেকর্ড চাহিদা দেখে ব্যাপক সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। দেবীপক্ষের সূচনায় পরপর বেশ কয়েক দিন লোডশেডিং হওয়ায় সেই আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল। তবে মহাসপ্তমীতে পৌঁছে দেখা গেল, সিইএসসি এবং বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি, দুই সংস্থাতেই পুরো চাহিদাই মেটানো গিয়েছে। বিদ্যুৎকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত পুজোয় বিদ্যুতের ফাঁড়া কেটেই গেল। সিইএসসি-র ক্ষেত্রে ২৯ সেপ্টেম্বর, দ্বিতীয়ার দিন বিদ্যুতের চাহিদা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৭০৩ মেগাওয়াটে পৌঁছে যায়। বস্তুত, এই প্রথম সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৭০০ মেগাওয়াট ছাড়াল। ৩০ সেপ্টেম্বর, তৃতীয়ার দিন চাহিদা সামান্য কমে হয়ে যায় ১৬৯৭ মেগাওয়াট। তার পর থেকেই অবশ্য বিদ্যুতের চাহিদা পড়তির দিকে। বণ্টন কোম্পানির এলাকায় ২০১০ সালে পুজোর মরসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল পঞ্চমীর দিনে। এ বারেও সেই ধারা বজায় তো ছিলই, কিছুটা বেড়েও গিয়েছিল। গত বছর পঞ্চমীতে ওই সংস্থার এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪০২৭ মেগাওয়াট। এ বার সেটা বেড়ে ৪৩৯৯ মেগাওয়াট হয়ে যায়। অর্থাৎ ৩৭২ মেগাওয়াট বেশি। তার পর থেকে বণ্টন কোম্পানির এলাকাতেও বিদ্যুতের চাহিদা নিম্নমুখী। জেলায় জেলায় পুজোর সংখ্যা এ বার বেড়েছে অন্তত ৪৪৭টি। এ বছর ২১,৮৮৮টি পুজো মণ্ডপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ২০,৬৪১। এ বছর কেবল পুজো মণ্ডপেই সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ লেগেছে ১৫৪ মেগাওয়াট। |
|
|
|
|
|