|
|
|
|
|
ভোট দিয়ে কী লাভ হল,
ক্ষোভে ফুটছেন জ্যোৎস্নারা
ঈশানী দত্ত রায় • কলকাতা |
|
কাঁধে তির-ধনুক, হাতে টাঙ্গি। মেয়েরা মিছিল করছেন দলে দলে। বছর তিনেক আগে
এমন ছবি
দেখতে শুরু করেছিল জঙ্গলমহল। পরে সেই আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে যায়।
এখন কেমন আছেন সেই মেয়েরা?
কী ভাবছেন? কী করছেন? আনন্দবাজারের প্রতিবেদন। |
দু’ধারে ঘন জঙ্গল। মাঝখান দিয়ে মাটির রাস্তা। ১২ বছরের নেড়া মাথা এক বালক কিছুটা এগিয়ে দিয়ে বলেছিল, বাকি পথের পুরোটাই গাড়ির হর্ন বাজাতে বাজাতে যাবে। হেডলাইটের আলো জ্বালাবে-নেভাবে। হ্যাঁ, এই ভর দুপুরেও। নইলে সমস্যা!
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কুড়াশোল গ্রাম। সেখানকার একটি পাকা ঘরে একটা টেবিল, আলমারি, বেঞ্চ। আর ডাঁই করা ওষুধ এবং ইনজেকশন জ্বর, পেটের রোগ, হজম, ব্যথা কমানোর। সপ্তাহের সাত দিনই এক-এক জন ডাক্তার বসেন এখানে। রোগী পিছু পাঁচ টাকা নেওয়া হয়। যিনি দিতে পারেন দেন। সরকারি নয়, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালায় জনগণের কমিটি। আশপাশের অন্তত ১০-১৫টি গ্রামের লোক আসেন সেখানে দৈনন্দিন ওষুধ নিতে। সেখানেই দেখা জ্যোৎস্না মাহাতোর সঙ্গে। নারী ইজ্জত বাঁচাও কমিটির অন্যতম সংগঠক।
কৌশলগত কারণে জনগণের কমিটির নতুন মুখ সন্ত্রাসবিরোধী মঞ্চ সম্প্রতি গড়ে উঠেছে জঙ্গলমহলে। তারই শাখা সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে নারী ইজ্জত বাঁচাও কমিটি। মেয়েদের নিয়ে আন্দোলনের এক নতুন চেহারা। জ্যোৎস্নারা যার নতুন মুখ।
ঝাড়গ্রাম থানার গড়শালবনী, ন্যাদাবহরা, পাটাশিমূল এলাকায় আপাত সীমাবদ্ধ এই কমিটির দাবি কী কী? গত বছর জুনে সোনামুখীতে তল্লাশির নামে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করা ছাড়াও যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার, ছত্রধর মাহাতো-সহ
বন্দিদের মুক্তি, ‘মিথ্যে’ মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছে এই নতুন কমিটি। জ্যোৎস্নার অভিযোগ, তিন মাসের মধ্যে জঙ্গলমহলের উন্নয়ন বা অপরাধীদের গ্রেফতার করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নতুন সরকার কোনওটাই রাখেনি। তাই নতুন মঞ্চ গড়ে তারা চাপ দিতে চান। কিন্তু মাওবাদীদের হাতে তো খুনের ঘটনা ঘটছেই। যৌথ বাহিনী তোলা হবে কোন যুক্তিতে? জ্যোৎস্নার যুক্তি, ‘যারা খুন করেছে’, তাদের ধরা হোক। ‘জনগণ’ কিছু করেনি। তাদের ধরা হচ্ছে কেন?
স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব জ্যোৎস্নারই উপরে। মাসে ১৫০০ টাকা পান। বোন-ভাই-মায়ের সংসার চালান সেই টাকায়। ভাই বড়পালে গাড়ি চালানো শিখছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কী ভাবে কাজ করতে হয়, তা শেখার জন্য ‘পাড়ার দাদারা’ তাঁকে ওড়িশাও পাঠিয়েছিলেন। এই আন্দোলনে তাঁর হাতেখড়ি কী ভাবে? জ্যোৎস্না জানান, গ্রামে উন্নয়ন নেই। হাসপাতাল নেই। শাল পাতা তুলে বিক্রি করে লোকে দু’পয়সা পায়।
স্ফূলিঙ্গের অপেক্ষা? জল নেই, জ্যোৎস্না, সবিতা, অনিতাদের চোখ এখানে বড় কঠোর।
|
(শেষ) |
|
|
|
|
|