|
|
|
|
|
আগমনীর গানের আসর
জমত রাজবাড়ির বারান্দায়
জগদীশকিশোরলাল সিংহদেও
পঞ্চকোট রাজবংশের উত্তরসূরী |
|
পুজো মানেই আমাদের কাছে নস্টালজিয়া। পুজো ছেড়ে কখনও বাইরে যাইনি। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছিলাম। ছুটি পড়ার আগে থেকেই পুজো নিয়ে কত পরিকল্পনা করতাম।
পুজো মানেই আমার কাছে আনন্দ করা, খাওয়া-দাওয়া আর ঘোরা ছিল। আমাদের রাজবংশের কূলদেবী রাজরাজেশ্বরীর মন্দির দেবীবাড়ি বলে পরিচিত ছিল। জিতাষ্টমীর পরের দিন থেকেই এখানে পুজো শুরু হয়। প্রতিদিন ভোগ রান্না হত। সাত-আট রকমের ভাজা, মাংস, ভাত-সহ অন্নভোগ। অনেক লোকের রান্না হত। ঠাকুর, পুরোহিত, মালাকার, অতিথি- সবে মিলে প্রসাদ খেতাম। রত জনের যে রান্না হত হিসেব নিকেশ থাকত না।
রাজবাড়ির দক্ষিণ বারান্দায় আগমনী গানের আসর বসত। উপরে ঝাড় লণ্ঠন জ্বলত। পাখোয়াজের বোলে কথকরা শুরু করতেন আগমনী, ‘জয় দুর্গে মুরদিগম্য রূপিনী....’। গান শুরু হলেই শরীরের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হত। পুজোর সময় ঘরে আর কত ক্ষণই বা থাকতাম! কাকা-জেঠুরা এ সময় বকাবকি করতেন না। ফলে, অন্য রকম স্বাধীনতা উপভোগ করতাম। বিজয়া এলেই তাই মন খারাপ করত। মনে মনে বলতাম, যেওনা নবমী নিশি।
তবে, বিজয়াও অন্য একটা বার্তা আনত। গোধূলি লগ্নে প্রতিমার বিসর্জন হত কাঁহারদের কাঁধে। সে প্রথা এখনও রয়েছে। রাজবাড়ির দরবার হলে বিজয়ার রাতে পান-দরবার বসত। সেখানে চারটে ঝাড় লণ্ঠন জ্বলত। রাজাকে সবাই প্রণাম করতে যেতাম। রাজা সবার হাতে পান তুলে দিয়ে আশীর্বাদ করতেন। তার আগে বিকেলে রাজা হাতির পিঠে চেপে ঠাকুরবাড়িতে যেতেন। সেখান থেকে কূলদেবতা শ্যামরঘুবর বিজয়যাত্রায় বের হতেন। যাওয়া হত ছাতামাড়া বা বেজাবিঁধা ময়দানে। সেখানে তিরন্দাজি (বেজাবিঁধা) হত। যে লক্ষ্যভেদ করতে পারতেন, তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হত।
দেবীর পছন্দের রঙ বাসন্তী। তাই, পুজোর সময় রাজবাড়ির ছেলেরা বাসন্তী রঙের ধুতি পরতাম। সেটাই রীতি। আজ সবই রয়েছে। পুজো হয়, বলিও হয়। কিছু দিন আগেও আমি আগমনী গানের আসর বসাতাম। তবু কোথায় যেন মনে হয়, সে দিন গুলো ফেলে এসেছি। স্মৃতি বড় নাড়া দেয়। |
অনুলিখন: প্রশান্ত পাল। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
|
|
|
|
|