|
|
|
|
কাঠামোয় মাটি পড়া দেখে
বুঝতাম, পুজো আসছে
প্রদ্যোৎ চট্টোপাধ্যায়
পুরুলিয়া শহরের অন্যতম প্রাচীন পারিবারিক পুজোর বংশধর |
|
|
আমাদের পরিবারের দুর্গাপুজোর সঙ্গে সঙ্গীতের অঙ্গাঙ্গী সর্ম্পক রয়েছে। নবমীর দিনে প্রতি বছরই আমাদের মণ্ডপের সামনে গানের আসর বসে। পুজোতে আমাদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। আগে কবিগান হত। এখন সব ধরনের গান হয়। এই আসরে এক সময় সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, অংশুমান রায়-সহ কত গায়ক-গায়িকা গান গেয়েছেন। আমিও গান গাইতাম। এখনও গান গাই। শারদোৎসব মানে আমাদের কাছে যেন সঙ্গীতের উৎসব।
আমাদের গ্রামের বাড়ি বর্ধমানের মানকর থানার অমরাগড়ে। পরিবারের বয়স্কদের কাছে শুনেছি, পেশাগত কারণে তাঁরা পুরুলিয়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। পুজোর সময় গ্রামে যেতেন। পুরুলিয়া থেকে গরুর গাড়িতে ডিসেরগড় ঘাট। সেখান থেকে বরাকর নদী পেরিয়ে ট্রেন ধরতে হত। যাতায়াতের ঝক্কির জন্য পরে ঠাকুরদা পুরুলিয়াতেই পুজো শুরু করেন।
কত স্মৃতি। সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল), চিত্র পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়েরা আমার মামা। তাঁরাও পুজোয় আমাদের বাড়িতে আসতেন। খুব আনন্দ হত।
তবে, পুজোর মজা শুরু হত অনেক আগে থেকেই। মন্দিরে ঠাকুর গড়া হত। আমরা বাড়ির ছোটরা ঠাকুর গড়া দেখতাম। কাঠামোয় মাটি পড়া, রঙ করা দেখে বুঝতাম, পুজো এগিয়ে আসছে। মুচি খবরের কাগজের উপরে পা ফেলে জুতোর মাপ নিত। রোজ দেখতে যেতাম, জুতো তৈরি কতটা এগোলো। মনে আছে, নতুন জুতো পায়ে দিতেই ফোস্কা পড়ত। পুজোর বাকি দিনগুলো আর সেই জুতো পরা যেত না। দামু দার্জি আমাদের জামা-প্যান্ট তৈরি করত। বাড়ি এসে সে মাপ নিয়ে যেত। একই কাপড় দিয়ে সব ভাইদের জামা তৈরি হত। প্যান্টও তৈরি হত একই কাপড় কেটে। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা হাফ প্যান্ট পরতাম। তার আগে ফুট প্যান্ট পরা, চা পান করা যেত না। এমন অলিখিত বিধি ছিল আমাদের বাড়িতে। ছেলেবেলায় পুজোর কাজ অবশ্য আমাকে কিছুই করতে হত না। আমি ফুলবাবু ছিলাম। কাজ ছিল শুধু রঙিন কাগজের মালা তৈরি করা।
পুজো এলেই স্মৃতিতে ছেলেবেলার দিনগুলো বেশি করে ভেসে আসে। |
অনুলিখন: প্রশান্ত পাল। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
|
|
|
|
|