|
|
|
|
পুজো হয় মহিষের রক্তে লেখা পুথির |
শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল • পাড়া |
বহু বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর পাঁচশো বছরের প্রাচীন পাড়া ব্লকের আনাড়া গ্রামের চক্রবর্তী বাড়ির পুজো। এখানে দশভুজা পূজিত হন না। পরিবর্তে পুজো হয় মহিষের রক্তে লেখা তালপাতার পুথির। যার নাম ‘চণ্ডী’। মূর্তিবিহীন পুজোই এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
কত বছর আগে এই চণ্ডীপুজোর সূচনা, তার দিনক্ষণ সঠিক ভাবে জানানো সম্ভব হয়নি চক্রবর্তী পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের পক্ষেও। পরিবারের অন্যতম বয়স্ক সদস্য সৌরীন্দ্রমোহন চক্রবর্তীর কথায়, “পূর্বপুরুষদের মুখে এই পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে শুনেছি। তার ভিত্তিতে এটুকু বলা যায় যে, ন্যূনতম পাঁচশো বছরেরও আগে এই পুজোর গোড়াপত্তন।” স্থানীয় ইতিহাস অনুযায়ী, পঞ্চকোট রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জগদ্দেও সিংহদেও উত্তরপ্রদেশের ধারানগরী থেকে নিয়ে এসেছিলেন বনমালী পণ্ডিতকে। চক্রবর্তী পরিবারের দাবি, তাঁরা বনমালী পণ্ডিতের বংশধর। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
লোক গবেষক সুভাষ রায় জানিয়েছেনস বনমালী পণ্ডিতকে রাজপুরোহিত করেছিলেন জগদ্দেও সিংহদেও। পরে পরিবারের জন্য দান করেছিলেন নিষ্কর জমি। চক্রবর্তী পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌতম চক্রবর্তী, বিধান চক্রবর্তীরা বলেন, “আনাড়া গ্রামের জমিতে প্রথম বসবাস শুরু করেন বনমালী পণ্ডিতের বংশধরেরা। পরে বংশ বড় হওয়ায় পরিবারের সদস্যেরা ছড়িয়ে পড়েন পুরুলিয়া জেলা ও পাশের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়।” ইতিহাস সমৃদ্ধ এই পারিবারিক পুজো আক্ষরিক অর্থেই বহু-বৈচিত্রময়। মহিষের রক্তে তালপাতার পুথিকে পুজো করা যদি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়, তা হলে জিতাষ্টমীর পরে পুজোর বোধন হওয়া অন্য বৈশিষ্ট্য। এই পরিবারের আত্মীয়, প্রবীণ অশোক মিত্রের কথায়, “এ বছর জিতাষ্টমীর পর নবমী থেকে পুজো শুরু হয়ে তা চলবে দুর্গাপুজোর নবমী পর্যন্ত। এই সময় ধরে চলে চণ্ডীর আরাধনা ও নিত্যভোগ।” সন্ধিপুজোর সময়ে হয় ৬৪ যোগিনীর পুজো। তবে শাক্তমতে হওয়া এই পুজোয় নবমীতে পাঁঠা বলি হয়। বহু প্রাচীন যে খড়্গ দিয়ে বলি সম্পন্ন হয়, সেটিকেও পুজোর চার দিন ‘চণ্ডী’র পাশে রেখে পুজো করা হয়। পারিবারিক হলেও এই ক’দিন পুজো চেহারা নেয় সর্বজনীনের। পুজোর জৌলুস, চাকচিক্যের চেয়েও এই পুজো গ্রামবাসীদের টানে তার ঐতিহ্য, প্রাচীনত্ব, রীতি-রেওয়াজ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে। সাদামাটা পুরনো মন্দিরের ভিতরে রাখা ‘চণ্ডী’কে পুজোর সময় ভক্তিতে শ্রদ্ধায় অবনত হন গ্রামবাসীরা। পুজোর শেষ লগ্নেও রয়েছে অভিনবত্বের ছোঁয়া। বিজয়া দশমীতে দেবীকে বিদায় দেওয়ার আগে খেতে দেওয়া হয় পান্তাভাত ও চিতল মাছ পোড়া। |
|
|
|
|
|