জলমগ্ন গ্রাম, হারিয়ে গিয়েছে পুজোর আনন্দ
শভূজার আগমনে আনন্দে ভাসছে গোটা রাজ্য। কিন্তু এ বার সেই আনন্দ মুছে গিয়েছে স্বরূপনগরের বেশ কিছু গ্রামের মানুষের। কারণ, পুজোই হচ্ছে না।
অগস্টের গোড়ায় ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপের জোড়া ধাক্কায় প্লাবিত হয়েছিল স্বরূপনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা। টিপি, মোল্লাডাঙা, বারঘরিয়া, নলাবড়া, ঘোলা, খদ্দর সিংহ, শ্রীরামপুর-নিশ্চিন্তপুর, পোলতা-ভূমিতলার মতো বেশ কিছু গ্রামের বিঘার পর বিঘা খেত নষ্ট হয়। জল নামতে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। পুজোর আয়োজন নিয়ে যখন আলাপ-আলোচনা চলছে, তখন ফের ধাক্কা। মহালয়ায় ইছামতীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে জল ঢুকে ফের প্লাবিত হল ওই সব গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে শেষমেশ পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
সগুনা পঞ্চায়েতের প্রধান কনকচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “নদী-খাল সংস্কার করা হয় না। ফলে, জমা জল সহজে বের হতে পারছে না। বেশ কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। জলবন্দি হয়ে পড়ায় গ্রামবাসীরা চরম বিপদে পড়েছেন।”
নিজস্ব চিত্র।
কাঁটাবাগান, টিপি, মোল্লাডাঙার প্লাবিত এলাকার অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। এখনও ওই এলাকার কয়েকশো মানুষ ত্রাণ শিবিরে বা অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। দরগাঘাটে অন্তত ৫০টি পরিবার রাস্তায় পলিথিনের ছাউনির নীচে বাস করছেন। আজ, অষ্টমীতে মা দুর্গাকে অঞ্জলি দেওয়ার কথা ভাবতেই পারছেন না দুর্গতেরা। মোল্লাডাঙার উজ্জ্বল মণ্ডলের কথায়, “জলে নষ্ট হওয়ায় ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। বাচ্চাদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। পাড়ার পুজোটাও হচ্ছে না। কিছুই ভাল লাগছে না।”
কাঁটাবাগান গ্রামে নিউ তরুণ সঙ্ঘের পুজোর দুর্গাবেদিটাই যা আছে। প্রতিমা নেই। সপ্তমীর সকালে সেই ফাঁকা বেদির সামনেই দেখা গেল কয়েকটি কচিকাঁচাকে। তাদের মধ্যে রতন মণ্ডল, কাজল হালদার, কাকলি হালদারদের বক্তব্য, “প্রতি বছর এখানে বড় করে পুজো হত। আমরা কত আনন্দ করতাম। এ বার পুজো হচ্ছে না। নতুন জামাও হয়নি। আমাদের কারও মন ভাল নেই।”
অন্যান্য বার পুজোর সময়ে দম ফেলার ফুরসত থাকে না কাঁটাবাগানের তপন মণ্ডল, মধুসূদন সরকার, সুকুমার ঘোষদের। প্রতিমার বায়না করা, মণ্ডপ তৈরি, পুজোর তোড়জোড় প্রবল ব্যস্ততায় চারটি দিন যে কোথা দিয়ে কেটে যেত তা তাঁরা টের পেতেন না। কিন্তু এ বার হাতে প্রচুর সময়। তাঁদের কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে জলবন্দি হয়ে রয়েছি। চাষের দফারফা। এখনও অনেকে ত্রাণ শিবিরে। কী ভাবে পুজোর আয়োজন করব?’’ অষ্টমীতে অঞ্জলি দিতে পারবেন না বলে হতাশ ওই গ্রামেরই রত্না সরকার, শিপ্রা ঘোষরা।
স্বরূপনগরের ঘোলা বারোয়ারিতলা, শ্রীরামপুর বটতলা, কপিলেশ্বরপুর, পূর্বপাড়া, পশ্চিম পোলতা, চাকদহ-ঘোষপাড়া, মহামায়া কলোনি-সহ অন্তত ১২-১৪টি জায়গায় এ বার পুজো বন্ধ। রাস্তা জলের তলায় চলে যাওয়ায় অনেক গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কোথাও কোথাও নৌকাও চালাতে হচ্ছে।
তবে স্বরূপনগরে পূর্ব দিক উঁচু হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। সেখানে যথারীতি পুজো হচ্ছে। তবে পশ্চিম দিকের দুর্গত এলাকার মানুষেরা সেখানে বড় একটা যাচ্ছেন না। এখানে বড় বাজেটের পুজো করেছে ডাকবাংলো গ্রামবাসীবৃন্দ। ইসকনের মন্দিরের আদলে ৬০ ফুট উঁচু মণ্ডপ, প্রতিমা আবং আলোকসজ্জা দেখতে পঞ্চমীর রাত থেকেই ভিড়। হিঙ্গলগঞ্জের রমেন্দ্রনগর পল্লি উন্নয়ন সংস্থার পোড়ামাটির মণ্ডপ দর্শনার্থীদের তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। এখানে ‘রামচন্দ্রের অকাল বোধন’ দেখতে ভিড় উপচে পড়ছে। টাইগার ক্লাব এবং ঘোষপাড়া বিনয়-বাদল-দীনেশ স্মৃতি সঙ্ঘের মণ্ডপ হয়েছে মন্দিরের আদলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.