|
|
|
|
পরাজিত পুজো |
একাকীত্বের পুজো ভাল লাগে না গৌরীবাবুর |
গৌরব বিশ্বাস • করিমপুর |
বড্ড একা হয়ে গেলেন গৌরীশঙ্কর মণ্ডল!
বাবা মা মারা গিয়েছেন বহুদিন আগে। বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছে সেজ ভাই। মাস তিনেক আগে মারা গেলেন তাঁর সেজ বৌদিও। বড় আদরের ভাইপোটা চলে গেল মামার বাড়ি। করিমপুরের নতুনপল্লীর বাড়িতে পড়ে রইলেন শুধু তিনি।
সপ্তমীর দুপুর পুজোর চেনা মেজাজে মজে গেলেও নতুনপল্লীর মণ্ডলবাড়িতে গৌরীশঙ্করকে দেখলে কে বলবে পুজো লাগল। বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সর্বজনীন পুজো। মাইকে দাপাচ্ছে পুজোর গান। ঢাকের আওয়াজ। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ। কিন্তু বচ্ছরকার দিনেও সে সব থেকে আপ্রাণ দূরে থাকতে চাইছেন ৬৩ বছরের প্রৌঢ়।
বছর দুয়েক আগে করিমপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে খুন ও ডাকাতির ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন অরুণ মণ্ডল। তিনি ওই ব্যাঙ্কের জেনারেটর চালাতেন। অরুণবাবুর বড় দাদা গৌরীশঙ্কর বিয়েথা করেননি। নতুনপল্লীতে পাশাপাশি বাড়িতেই থাকতেন দুই ভাই। এখন অবশ্য অরুণবাবুর বাড়িটা তালা বন্ধ। অরুণ মারা যাওয়ার পর ওই বাড়িতে থাকতেন স্ত্রী অসীমাদেবী ও একমাত্র ছেলে অভিনব।
সপ্তমীর দুপুরে শুকনো পাট ঘরে তুলতে তুলতে গৌরীবাবু বলেন, ‘‘অরুণ মারা যাওয়ার পর অভিনব একেবারে অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে মাকে আঁকড়ে ধরে সে ক্রমশঃ স্বাভাবিক হচ্ছিল। আর অভিনবকে আঁকড়ে ধরে আমিও বাঁচতে চাইছিলাম।” কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। মাস তিনেক আগে কিডনির অসুখে মারা গেল ‘বৌমা’ও। “তারপর ভাইপোও চলে গেল মামার বাড়ি’’, দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন গৌরীবাবু। বলেন, ‘‘খুব করে বলেছিলাম, আমার কাছেই থাকুক । দু-জনে দুবেলা দু’মুঠো ভাত ঠিক ফুটিয়ে খেয়ে নিতে পারব। পড়াশোনাটাও এখানেই করুক কিছু জমি জায়গাও রয়েছে অসুবিধা হবে না। কিন্তু ভাইপো বলল যে, ওর মা বলে গিয়েছে সে যেন মামার বাড়িতেই থাকে। আমিও আর বাধা দিতে পারলাম না।’’
পুজো দেখতে বেরোবেন না? প্রশ্নটা যেন শুনতেই পেলেন না গৌরীবাবু। আপন মনে বলে চলেন,‘‘ গত বছর মন খারাপ করে বসে ছ্লি ছেলেটা। কিছুতেই ঠাকুর দেখতে যাবে না। শেষে আমিই জোর করে নিয়ে গেলাম বাজারের ঠাকুরগুলো দেখে দুজনে বাড়ি ফিরেছিলাম। এ বার ছেলেটা কি করছে কে জানে?” ধুতির খুঁটে চোখ মোছেন গৌরীবাবু। |
|
|
|
|
|