|
|
|
|
অনিশ্চয়তার মেঘ মুছে পুজো সরগরম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
চার ফুট চওড়া। ছ’ফুট লম্বা। নীল পলিথিনের টুকরোটা খুব যত্ন করে গুটিয়ে রাখছিলেন। পুজোর বাজার তো শেষ, তা হলে এখনও এত যত্ন? নবদ্বীপ রাধাবাজারের ছোট ব্যবসায়ী ধ্রুব রায়ের মুখ উজ্জ্বল হল। খুশি মুখে বললেন, “এ বার পুজো অন্যরকম। বাজার জমেছে শেষ মুহূর্তে। কিন্তু তারপর থেকে সত্যিই খুব ভাল ব্যবসা হচ্ছে।”
সামগ্রিক ভাবেও ব্যবসায়ীদের কথা তাই। তাঁরা জানাচ্ছেন, সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টি হওয়ায় পুজোর বাজার বেশ মার খাচ্ছিল। ব্যবসায়ী রজত বিশ্বাস বলেন, “আমাদের আশঙ্কা হচ্ছিল আবার না বন্যা হয়। সেই আশঙ্কা ছিল সাধারণ মানুষেরও। তাই যতই পুজোর উন্মাদনা থাকুক, কেউই হাতের টাকা জামাকাপড় কিনে ছেড়ে দিতে চাইছিলেন না। যে কারণে পুজোর বাজার তেমন ভাবে জমছিলও না। কিন্তু তারপরে রোদ উঠতে যেন শরত হেসে উঠল।” কথাটা অতিশয়োক্তি নয় মোটেই। ব্যবসায়ী সমিতিগুলিও বলছে, পুজোর আগে আগে বৃষ্টির ক্ষান্তি, মাস পয়লার মাইনে আর সপ্তাহান্ত পড়ে যাওয়ায় বাজার তেতে ওঠে পঞ্চমী থেকে। শুক্রবার রাত থেকে বাজারে আর পা ফেলার কোনও জায়গা ছিল না। তারপর পঞ্চমী, ষষ্ঠীর পরে সপ্তমীও পুজোর বাজারে কোনও ভাঁটা নেই। পঞ্চমীর দিন থেকে বাজারে যে ঢল নেমেছে, তা এ দিনও অব্যাহত।
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “বৃষ্টি থেমে যাওয়াটাই আসলে বাজার তেতে ওঠার প্রধান কারণ। সকলেই বৃষ্টির ভয় পাচ্ছিলেন। এমনকী ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত টাকা ঢালছিলেন না। জিনিসপত্র কিনে রাখছিলেন না।” ঝকঝকে রোদের ফলে খুশি পুজোর উদ্যোক্তারাও। একটি পুজোর সংগঠক বলেন, “নানা রকম পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে খোলা মাঠে সে সব হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। পরে অবশ্য সে ভয় কেটে গিয়েছে। কারিগরেরাও রাত জেগে কাজ তুলে দিয়েছেন।” তাই পুজো এ বার সত্যিই উৎসবের আকার নিয়েছে। চারদিক ভরভরন্ত। জলে ভরা। সবুজ। নীল আকাশ, সাদা মেঘ। কাশ ফুল। শিউলি। নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ। পাড়ার মোড়ে মোড়ে আড্ডা। পুজোর দিন ফিরে গিয়েছে পুজোর দিনেই।
পুজোর উদ্বোধনের রেশ কাটেনি সোমবার পর্যন্ত। শুরু হয়েছে পঞ্চমী থেকেই। বিধায়ক, পুরপ্রধান থেকে নামকরা শিল্পীরা উদ্বোধনের সময়েই শুরু হয়ে গিয়েছে ঢাকের বোল। আগমনী গানের আয়োজন করেছে কোনও কোনও পুজোর উদ্যোক্তারা। তাতেই নতুন সুর যুক্ত হয়েছে। ষষ্ঠীর দিনেই নবদ্বীপে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত মানুষের ভিড় ছিল। সুচরিতা বিশ্বাস বলেন, “আসলে ভয় পাচ্ছি সেই বৃষ্টিকেই। যদি পুজোর মধ্যে বৃষ্টি নামে, তাই যতটা পারি দেখে নিচ্ছি।”
সব থেকে আশ্চর্যের কথা, বাস ট্রেনে ভিড় কিছুটা কমেছে। ষষ্ঠী থেকে পুজোর ছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। স্কুল কলেজ অফিস কাছারি ছুটি। কিন্তু তাই বলে পরমানন্দে হাত পা ছড়িয়ে যাতায়াত কিন্তু করা যাচ্ছে না। কারণ, নিত্যযাত্রীদের ভিড়টা চলে গেলেও সেখানে থেকে যাচ্ছে পুজো দেখতে যাওয়ার ভিড়। কেউ ব্যান্ডেল থেকে যাচ্ছেন নবদ্বীপ। কেউ কাটোয়া থেকে কৃষ্ণনগর। বাদকুল্লাতে বিপুল ভিড়। পা ফেলাই অসম্ভব। |
|
|
|
|
|