পুজোয় ফুলিয়ার উপহার
তাঁতের জমিতে পাটের শিল্পকর্ম
তাঁতের কাপড়ে পাটের কাজ।
পাটের ব্যবহারে বৈচিত্র আনতে পরীক্ষা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। এ বার শাড়িতে পাটের ব্যবহার শুরু করলেন ফুলিয়া ও শান্তিপুরের তাঁতশিল্পীরা। বাজাতে তার চাহিদা দেখেও প্রথম শরতেই অবাক হয়ে গিয়েছেন শিল্পীরা। জোগান দিতেই হিমসিম খাচ্ছেন তাঁরা।
তাঁতের কাপড়ের বাজারে নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীরা প্রতি বছরই নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। ফি বছর অজস্র নয়া-নকশা আঁকেন ফুলিয়ার শিল্পীরা। এ বার তার সঙ্গে মিশেছে পাটের কাজ। মুর্শিদাবাদের মটকা আর ফুলিয়ার টাঙ্গাইল মিশিয়ে একত্রে তৈরি হয়েছে রেশম কোটা। কিংবা তসরের শাড়ির উপর জরির কাজ। রঙিন তসর। তাঁতে তৈরি সিল্কের জামদানি। কিংবা তাঁতে বোনা সিল্কের উপর জারদৌসির কাজ এ বার ফুলিয়া ও শান্তিপুরের বিশেষ আকর্ষণ।
কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে পাটের কাজ করা ঢাকাই জামদানি। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শুধু পাড় আর আঁচলই নয়, তসর ও সিল্কের উপর পাটের কাজ করা এই শাড়ি এ বার পুজোর বাজারে চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। দাম আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। ফুলিয়ার তাঁত শিল্পী স্বপন বসাক বলেন, “স্থানীয় ভাবেই আমরা পাট সংগ্রহ করছি। এই ক্ষেত্রে একটু ‘রাফ’ পাটই প্রয়োজন। তাতে কাজটা টেকে বেশি।” তিনি আরও বলেন, “গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে আমরা শুরু করেছিলাম। সামান্য কিছু বানানো হয়েছিল। তাতেই বুঝে ছিলাম এই কাপড়ের চাহিদা হবে। দেখছি ভাবনাটা মিথ্যে নয়!”
একই কথা বলেছেন শান্তিপুর তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক দাস। তিনি বলেন, “তাঁতের কাপড়ে পাটের ব্যবহার অভিনবই বলতে পারেন। প্রথম বারই বাজারে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছে।” তিনি বলেন, “তবে চাহিদার তুলনায় জোগান খুবই কম। খুব কম সংখ্যক শিল্পীই এ বার এটা বানাচ্ছেন। তবে এটা পরিষ্কার যে, আগামী দিনে এই কাপড়ের বাজার অনেকটাই বাড়বে। তবে তাঁত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি উপকৃত হবেন পাট চাষিরাও।”
সূক্ষ্ম কাজের জন্য ফুলিয়ার শিল্পীরা বিখ্যাত। বলা হয়, তাঁদের মতো করে সরু সুতো দিয়ে কাপড় বুনতে অন্যরা পারেন না। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে চলে আসা এক ঝাঁক শিল্পী দেশ ভাগের পর ফুলিয়ায় এসে বসবাস শুরু করেছিলেন। মূলত তাঁদের জন্যই ফুলিয়া রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়। বাংলা তথা ভারতের তাঁতের কাপড়ের বাজারে একটা বিরাট অংশ দখল করেছে ফুলিয়ার শিল্পীরা।
সরু সুতোর সূক্ষ্ম কাজের পাশাপাশি নিত্যনতুন বৈচিত্র ফুলিয়ার প্রধান আকর্ষণ। তবে কী শুধু বৈচিত্র আনতেই পাটের ব্যবহার শুরু করেছেন শিল্পীরা? মানতে রাজি নন বিখ্যাত শিল্পী বীরেন পাল। তিনি বলেন, “বৈচিত্র নিয়ে সব সময়ই আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এ বারই আমরা ৪০ রকমের নতুন ধরনের শাড়ি তৈরি করেছি। কিন্তু পাটের ব্যবহারে বিষয়টি একটু আলাদা।” তিনি বলেন, “প্রতি বছরই দেখি পাট চাষিরা সমস্যায়। পাটের ব্যবহার দিন দিন কমে আসছে। আমরা চাইছি যে, কাপড়ে পাটের ব্যবহার শুরু হলে পাট চাষিরা উপকৃত হবে। আবার, আমরাও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারব।”
বাজারের চাহিদা থেকে শান্তিপুর-ফুলিয়ার তাঁত ব্যবসায়ীদের অনুমান, শাড়িতে পাটের ব্যবহার আগামী দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এ বার অনেক ব্যবসায়ী নতুন এই পদ্ধতিতে ঝুঁকি নিতে না চাইলেও আগামী দিনে যে তাঁরা আর সে ভুলটা করবেন না সেটা তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন। ফলে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছেই যে, আগামী দিনে পাট চাষিরা কি সত্যিই সুদিনের মুখ দেখতে চলেছেন?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.