এই চার দিন ফিরি শৈশবে
পুজো মানে অন্য রকম আনন্দ। অন্য অনুভূতি। বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোনো। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা। অষ্টমীতে অঞ্জলি।
পুজো এলে এখনও সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। আমার বাড়ি পিংলার রঘুনাথচকে। ছোটবেলা কেটেছে সেখানেই। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। তবে আমাদের গ্রামে সেই সময় কোনও পুজো হত না। ঠাকুর দেখতে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে যেতে হত। অনেকটা পথ। তবু পুজোর আনন্দে সে সব কষ্ট গায়েই লাগত না। আমরা ৬ বোন। আমি সেজো। ছোটবেলায় বোনেদের সঙ্গেও ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। সঙ্গে সহপাঠীরা তো থাকতই।
বাবা নারায়ণগড়ের মদনমোহনচক হাইস্কুলের শিক্ষকতা করতেন। এক সময় আমার দাদুও এই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির পাঠ শেষ করেই মদনমোহনচকে চলে আসি। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হই। স্কুলের আবাসনেই আমরা থাকতাম। পুজোতে এখানেও বেশ আনন্দ হত। স্কুল ক্যাম্পাসেই সর্বজনীন পুজো হয়। ফলে, খুব কাছ থেকে পুজোর প্রস্তুতি দেখতাম। একটা পুজো পেরোলেই মনে হত, আবার কবে পুজো আসবে। সবাই মিলে কত আনন্দ করব। সহপাঠীরা আসবে। কত মজা হবে। সেই সময় রঘুনাথচকের কাছাকাছি পুজো বলতে দুজিপুর। দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। এখানে সর্বজনীন পুজো হত। গ্রামে থাকাকালীন পুজো দেখতে দুজিপুর, তেমাথানি প্রভৃতি এলাকায় গিয়েছি। তখন অবশ্য আমার বয়স অল্পই। স্কুলের পাঠ শেষ করে পালপাড়া কলেজে ভর্তি হই। কলেজে পড়ার সময়ও পুজোর দিনগুলোয় কত আনন্দ করেছি। সেই সব দিনের কথা মনে পড়লে এখনও মন কেমন করে। মনে হয় সেই শৈশবে ফিরে যাই!
সেই অর্থে কলেজে পড়ার সময়ই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। বড় হয়ে রাজনীতি করব, এমন কোনও ইচ্ছে ছিল না। আমার বাবাও সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করেননি। তবে বামপন্থী আদর্শ আমার ভাল লাগত। ১৯৯৮ সালে প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। সিপিএমের প্রার্থী হই। গ্রামের মানুষ আমায় সমর্থন করেন। সহজেই ভোটে জয়ী হই। তখন পিংলা জুড়ে এক অন্য পরিস্থিতি। চার দিকে সন্ত্রাসের আবহ। কেশপুর-গড়বেতাও সন্ত্রাসের আগুনে দ্বগ্ধ। আজ এ গ্রামে লুঠপাট হলে, কাল ও গ্রামে। ঘরছাড়া মানুষগুলোকে দেখে খুব কষ্ট হত। ভোটে জিতেই পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হই। রাজনীতি করার ইচ্ছে না থাকলেও ছোট থেকেই ভাবতাম, বড় হয়ে মানুষের কাজ করব। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াব। সংসদীয় রাজনীতিতে আসার ফলে সেই কাজ আরও সহজ হল। ২০০৩ সালে ফের পঞ্চায়েত ভোটে জিতে সভাপতি হই। টানা দশ বছর সভাপতি থেকে যতটা পেরেছি পিংলার উন্নয়ন করেছি। সব পেরেছি বলব না। তবে উদ্যোগের কোনও অভাব ছিল না। আমি পিংলার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা সব সময়ই আমার পাশে থেকেছেন। উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করেছেন। শেষ পঞ্চায়েত ভোটে জিতে জেলা পরিষদের সভাধিপতি হই। আমার মেয়ে অস্মিতা এখন মেদিনীপুরের এক স্কুলে পড়ে। ক’দিন ধরেই বলছে, পুজো দেখতে গ্রামে যাব। ওর নতুন জামা কেনা হয়েছে। এখন অবশ্য রঘুনাথচকে সর্বজনীন পুজো হয়। আশপাশের ৪-৫ টি গ্রামের মানুষের উদ্যোগ ২০০৮ সাল থেকে এখানে পুজো শুরু হয়েছে।
তবে পুজো এলে এখনও শৈশবকে বড্ড মিস্ করি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.