|
|
|
|
|
আত্মপ্রত্যয়ই সুঁটেদার পেস
চুনী গোস্বামী |
|
সুঁটেদা’র জন্মশতবর্ষের দিন আনন্দবাজারে ওঁকে নিয়ে লেখাটা পড়তে পড়তে পুজোর উৎসবের মধ্যেও মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। কেমন আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম! কত স্মৃতি সুঁটেদাকে নিয়ে মনের ভেতর রিওয়াইন্ড হচ্ছে।
আমার ক্রিকেট জীবনের শেষের দিকে সুঁটেদার সঙ্গে একবার অসমে খেলতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। কম্বাইন্ড বাংলা দলে বেশিরভাগই সিনিয়র ক্রিকেটার। দাত্তু ফাড়করের মতো অনেকে। সুঁটেদার তখন অনেক বয়স। কিন্তু ওই বয়সেও ওঁর মধ্যে যেটা আমাকে সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছিল সেটা হল, সুঁটেদার আত্মপ্রত্যয়। প্রতিটা কথায় যেন ধরা পড়ে। তখনকার দিনে উত্তর কলকাতার খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম আর বেড়ে ওঠা সুঁটেদা বিয়ে করেছিলেন এক জন আইসিএস-এর মেয়েকে। এই ঘটনার থেকেও বোঝা যায়, নিজের ওপর কতটা প্রত্যয় ছিল ওঁর। অথচ নিজের তথাকথিত শিক্ষাগত ডিগ্রি তেমন ছিল না। তা সত্ত্বেও তখনকার দিনে সাহেব ঘেঁসা পরিবারের মেয়ের সঙ্গে সুঁটেদা’র বিয়ের ঘটনায় বোঝা যায়, মানুষটাকে সবাই কী প্রচণ্ড ভালবাসত। এক-এক সময় মনে হয়, সুঁটেদা’র আত্মপ্রত্যয়ই এ শহরের আরও অনেক মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস জুগিয়েছে। আমরাও পারি। |
|
শতবর্ষে সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মাল্যদান দেশবন্ধু পার্কে। সোমবার ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস। |
সুঁটেদা একটা না দু’টো টেস্টের প্লেয়ার। চারটে না পাঁচটা উইকেটে পেয়েছিলেনএগুলো দিয়ে ওঁর ক্যারিশমার বিচার করা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভব। দেশবন্ধু পার্কে এ দিন সুঁটেদা’র মূর্তিতে সিএবি কর্তাদের মালা দেওয়ার খবরটা পেয়ে আমার অন্য একটা কথা মনে হচ্ছে। একটা টেস্ট খেলা কোনও ক্রিকেটারের তো আর মূর্তি বসানো যায় না! কিন্তু সুঁটে বন্দোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে সেটাও হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, মানুষটা কোন মাপের ক্রিকেটার! বাদলদা’র (পি বি দত্ত) মতো ঝকঝকে ক্রিকেটারের সঙ্গে আমার যখনই সুঁটেদাকে নিয়ে কথা হয়, উনি একটা বলেনই‘সুঁটেদা ওয়াজ ডিফারেন্ট!’ সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য জাতের ক্রিকেটার! আর আমার মনে হয়, শুধু উত্তর কলকাতাতেই সুঁটেদার মূর্তি সীমাবদ্ধ থাকাটা উচিত হয়নি। তবে দেশবন্ধু পার্কের ওই মূর্তি দেখে নিশ্চয়ই এখানকার অনেক উঠতি প্রতিভা বড় ক্রিকেটার হয়ে ওঠার উৎসাহ পাবে।
অসমের সঙ্গে খেলতে যাওয়ার সেই দিনটায় আমাদের সঙ্গে সুঁটেদা সস্ত্রীক গিয়েছিলেন। তাঁর প্রথম প্রেমিকা। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, যৌবনে তাঁকে বিয়ে করতে পারেননি সুঁটেদা। অনেক পরে বিয়ে করে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আজ মনে হচ্ছে, ত্রিকেটার সুঁটেদা’র ওপর প্রচুর বঞ্চনা, অবহেলা হলেও নিজের জীবনসঙ্গিনীকে সুঁটেদা বঞ্চনা করেননি! সুঁটেদা ওয়াজ ডিফারেন্ট! |
|
|
|
|
|