বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তেজস্বিনী সাওয়ন্ত মনে করেন, অলিম্পিকের যোগ্যতামান পেরোতে পারলে তিনি লন্ডন থেকে পদক নিয়েই ফিরবেন। ভারতের প্রথম মহিলা হিসাবে রেকর্ড গড়া বিশ্বের সেরা শুটার বলে দিলেন, “লন্ডনের পদকের দিকে লক্ষ্য রেখেই এখন আমি তৈরি হচ্ছি।”
চোখ ধাঁধানো পুণে স্পোর্টস কমপ্লেক্সে দেশের সবথেকে ভাল শুটিং রেঞ্জ রয়েছে। সেখানে অলিম্পিকের যোগ্যতামান পেরোনোর লক্ষ্যে অভিনব বিন্দ্রা থেকে গগন নারাং, অঞ্জলী ভাগবত থেকে তেজস্বিনী সব শুটাররাই অনুশীলন করছেন। পুণের রেঞ্জ থেকে সামান্য দূরেই তেজস্বিনীর বাড়ি। গাড়িতেই আসা যাওয়া করতে পারেন। পুজোয় বেশ কয়েকবার কলকাতায় তাঁর ব্যক্তিগত কোচ বাংলার আর এক নামী শুটার কুহেলি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এসেছেন ঠাকুর দেখতে। ফোনে বলছিলেন, “ঠাকুর আর মণ্ডপ দেখতে আমার খুব ভাল লাগে।” তেজস্বিনীর এ বার অবশ্য কলকাতায় আসা হয়নি দোহার প্রস্তুতির জন্য। তাতে অবশ্য আপশোস নেই ঝকঝকে মেয়ের। তেজু বললেন, “জানুয়ারিতে দোহায় এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তৈরি হচ্ছি। আমি যে দুটো বিভাগে লন্ডনে নামব বলে ঠিক করেছি সেগুলোতে আশা করছি সুযোগ পাব। আমি অনুশীলনে যা মারছি তাতে অলিম্পিকের যোগ্যতা এবং পদক দুটো পাব আশা করছি। তবে শুটিংয়ের পদক পাওয়াটা যেহেতু নির্ভর করে সে দিনের আবহাওয়া-সহ নানা পরিস্থিতির উপর। দেখা যাক কি হয়।”
ম্যাঞ্চেস্টারে ৫০ মিটার এয়ার রাইফেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও অলিম্পিকে তেজুর লক্ষ্য দুটো ইভেন্ট। ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিসন এবং ১০ মিটার এয়ার রাইফেল। ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েই কুহেলির আশার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “ওই দুটো ইভেন্টে তেজু যা মারছে তাতে পদক পেতেই পারে। কারণ দু’বছর আগে মিউনিখ বিশ্বকাপ এবং চার বছর আগে মেলবোর্ন কমনওয়েলথ গেমসে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে। যেটা ওকে পদকের দিকে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করছে।” কোলাপুরে বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তীব্র মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়েও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তেজস্বিনীর একাগ্রতা ও মানসিক জোর দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। অভিনন্দন জানিয়েছিলেন । “আমার বাবা চাইতেন আমি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হই। সে জন্যই সে বার টুর্নামেন্ট ছেড়ে চলে আসিনি। তা ছাড়া দু’বছর ধরে অনুশীলন করেছিলাম ওই পদকটার জন্যই।” বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে দুটো রুপো এবং ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর এবং অভিনব বিন্দ্রার অন্ধ ভক্ত। সোনা পাননি। কেন? শুটিং রেঞ্জে এবং বাইরে ঠান্ডা মাথার জন্য তেজুকে পছন্দ করেন সবাই। বলছিলেন, “কমনওয়েলথের আগে মাত্র এক মাস অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি। না হলে গোটা তিনেক সোনা পেতামই। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টারের মতো লন্ডনের জন্য অনেক সময় নিয়ে তৈরি হচ্ছি। তা ছাড়া আমার মতে বিশ্বকাপের চেয়ে অলিম্পিকের পদক জয় সহজ। কারণ এখানে বিভিন্ন দেশের বাছাই করা সেরারাই আসে। তাদের নিয়েই ভাবতে হয়। সবাইকে নিয়ে নয়।” লন্ডন থেকে এ বার শুটাররা অনেক বেশি পদক আনবে বলেও তিনি আশাবাদী।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাঁর স্পনসরের অভাব নেই। আপাতত অলিম্পিক গোল্ড কোয়েস্ট বা ও জি কিউ এবং সহারা তাকে স্পনসর করছে। বিভিন্ন কোম্পানি তেজুকে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। কিন্তু স্পোর্টস অথরিটি অব মহারাষ্ট্রের অফিসার তেজু এখনই মডেল হতে রাজি নন। বছর উনত্রিশের তেজু বলছিলেন, “অলিম্পিকের পদকটা পাওয়ার পর দুটো কাজ করব। মডেল হব এবং বিয়ে।” পাত্র কি ঠিক আছে? ঝকঝকে চেহারার তেজস্বিনীর তেজ বেরিয়ে পড়ে। “কোনও শুটার বা অ্যাথলিটকে বিয়ে করব না। কারণ আমার ইচ্ছে আছে গগনের মতো একটা অ্যাকাডেমি করার। সেটা নিয়ে থাকব। স্বামী বাড়ির দায়িত্ব সামলাবে।” |