আপনার দেখা ভয়ঙ্করতম ফরোয়ার্ড কে?
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের কাছে একটাই নাম আছে, “জেভিয়ার পায়াস।”
জেভিয়ার পায়াস না আই এম বিজয়ন?
সুব্রত ভট্টাচার্য ও সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় আশ্চর্যজনক ভাবে একমত, “আমি সব সময় আমার দলে বিজয়নের বদলে জেভিয়ার পায়াসকে নেব। ও-ই কেরলের সেরা ফুটবলার।”
সেই জেভিয়ার পায়াস অন্ধকার থেকে হঠাৎই আবার আলোয়।
কলকাতায় তাঁর সমসাময়িকরা যখন দীর্ঘ দিন কোচিং করিয়ে এখন প্রায় অস্তগামী, তখন এত দিন বাদে অকস্মাৎ নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কোচিং জগতে হাজির পায়াস। প্রাথমিক লক্ষ্য, আই লিগে খেলতে নামা। চূড়ান্ত লক্ষ্য, কেরল ফুটবলের পুনর্জন্ম ঘটানো।
এবং তাঁর লক্ষ্যপূরণের জন্য এই বয়সে যে পরীক্ষায় পায়াস নেমেছেন, তা সত্তর দশকে তাঁর বিখ্যাত সমসাময়িকরা এড়িয়ে গেছেন ভয়ে। |
নতুন কোচিং যুদ্ধে পায়াসের সঙ্গী কেরলের সবচেয়ে পরিচিত কোচটি কে চাত্তুণ্ণি। কোচির চার বছরের নতুন ক্লাব জসকো এফসি-তে পায়াস কোচ, চাত্তুণ্ণি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। পায়ের সমস্যার জন্য মাঠে নেমে কোচিং করাতে পারেন না চাত্তুণ্ণি। তিনিই সুপারিশ করেছেন পায়াসের নাম। কেরলের বিখ্যাত সোনা ব্যবসায়ী সংস্থা জসকো। গত বার আই লিগে অল্পের জন্য তারা আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে এক ধাপ উঠতে পারেনি।
কোচিং করানোর জন্য পায়াস এতটাই সিরিয়াস যে হাঁটুর বয়সি গৌতম ঘোষ, শঙ্করলাল চক্রবর্তী, সত্যব্রত ভৌমিক, প্রশান্ত চক্রবর্তীদের সঙ্গে এএফসি ‘বি’ লাইসেন্স পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি। সত্তরের বাঙালি তারকারা ছোটদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে নারাজ। কিন্তু ক’দিন আগে তামিলনাড়ুর হোসুরে গডফ্রে পেরিরা, নৌশাদ মুসা, ইউসুফ আনসারিদের সঙ্গে এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স পরীক্ষায় বসেছেন বছর ছাপ্পান্ন-র পায়াস। সত্যব্রত, গৌতম, শঙ্কর, প্রশান্তরাও ছিলেন সেখানে। এএফসি-র পরীক্ষক, চার্চিলের প্রাক্তন কোচ ভিনসেন্ট সুব্রহ্মণ্যম সেখানে বলেছেন, “পঞ্চাশের উপর বয়স হলে ওদের পাস করা মুশকিল। ফিটনেস সমস্যা।” পায়াস তাতে আদৌ রণে ভঙ্গ দেননি তাঁর কলকাতার সমসাময়িকদের মতো।
কোচির জসকো এফসি কর্তারা ‘এ’ লাইসেন্স কোচ করার কথা ভেবেই পায়াসকে নিয়েছেন। ‘এ’ লাইসেন্স না পেলে পায়াসকে রাখা হবে কি না প্রশ্ন থাকছে। সম্ভবত তাই জসকো ক্লাবের কোচিং নিয়ে কথা বলতে দ্বিধায় পায়াস। ফোনে বললেন, “দিন সাতেক পরে এ নিয়ে কথা বলতে পারব। এখনও ব্যাপারটা চূড়ান্ত হয়নি।” সাত দিন পরে ‘এ’ লাইসেন্সের ফল। সম্ভবত সে কথা ভেবেই একটু অস্বস্তিতে পায়াস। তিনি বরং কলকাতার কথা তুললে হাত ধরেন স্মৃতিমেদুরতার। “কলকাতার পুজো কী জিনিস আমি জানি। অনেক দিন কাটিয়েছি পুজোয়। দু’বছর আগে জামশেদপুরে কোচিং পরীক্ষা দিতে গিয়ে শেষ বার গেছি ওখানে। লোকে মনে রেখেছে দেখে ভাল লাগে।”
শেষ কবে কোচিং করিয়েছেন? জেভিয়ার পায়াস প্রশ্নটা শুনে ভাবতে সময় নেন। “চেন্নাইয়ে চাকরি করার সময় স্টেট ব্যাঙ্কে কোচিং করিয়েছি। তার পরে কোচিং আর হয়নি।” চাত্তুণ্ণি নিজে সেটা গুরুত্ব দেন না, “পায়াস কেরলে প্রথম কোচিং করতে নামল। তবে খুব সিরিয়াস কোচিংয়ে।” তাঁর আশ্বাস, ‘এ’ লাইসেন্স কোচিংয়ের উপর নির্ভর করছে না জসকো এফসি-তে পায়াসের স্থায়িত্ব।
চোখ বুঁজলেই কলকাতার অনেক ফুটবলপ্রেমী বলে দেবেন জেভিয়ার পায়াসের দৌড়। সুব্রতর মনে পড়ছে, একাশির লিগে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে জোড়া গোল। মানস ভট্টাচার্যের মনে পড়ছে, ডুরান্ডের কিছু ম্যাচ। “হাবিবদা, সুভাষদা, শ্যামদার সব পাস বোঝা যেত। পায়াস কোথায় পাস দেবে, বোঝা যেত না। ওর মতো দু’পা ব্যবহার, ডিফেন্ডারের মাথা টপকে বল কেউ আগে দিতে পারেনি।” সত্যজিতের মনে পড়ছে, ঊনআশি শিল্ড ফাইনালে তাঁর দুর্দান্ত ফুটবল। সাতাত্তরের সন্তোষ ট্রফি সেমিফাইনালে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ। ছিয়াশিতে, খেলা ছাড়ার এক বছর আগে লিগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তাঁর শিল্প। ওই প্রসঙ্গ তুললে পায়াস চিরলাজুক, “এ সব কথা মনে রাখিনি। এত বছর আগের কথা...। আপনি বলছেন বলে মনে পড়ছে। এখন কোচিং নিয়ে ভাবনা।” পায়াসের সমালোচকরা বলেন, দুর্দান্ত প্রতিভা সত্ত্বেও কিলার ইন্সটিংক্ট না থাকার জন্যই আরও নাম করতে পারেননি পায়াস। এত দিন পরে সেই কিলার ইন্সটিংক্টের খোঁজে তিনি। |