চেন্নাই সুপার কিংসকে আরও একটা হার হজম করতে হল। সেটাও দুর্বল ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর হাতে। টি-টোয়েন্টিতে যে ধরনের দল দেখতে আমরা অভ্যস্ত, ক্যারিবিয়ান টিমটা সে রকম নয়। স্বভাবতই কথা উঠতে শুরু করেছে, ধোনির ঠিক কী হয়েছে? ধোনি কি ওর সেই যা ছোঁয় সেটাই সোনা হয়ে ওঠা-র ভাগ্য হারিয়ে ফেলেছে? না কি ধোনি নিজের খেলাটা হারিয়ে বসেছে? আমি ভীষণ ভাবে বিশ্বাস করি, এ সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সময় এখনও আসেনি। ধোনির একটা কঠিন সিরিজ গিয়েছে ইংল্যান্ডে। আমি সব সময় মনে করে এসেছি যে, ভারতীয় ক্যাপ্টেনদের আসল পরীক্ষার জায়গা হল যখন তারা বিদেশের মাঠে দলকে নেতৃত্ব দেয়। আমি আশা করব, ধোনি ভাল অধিনায়ক নয় এ রকম কিছু বলেছি ভেবে আমাকে যেন ভুল বোঝা না হয়। এক জন অধিনায়ক ততটাই ভাল, যতটা ভাল তার দলটা।
এমএসডি-র এই মুহূর্তে পুরো শক্তির দলটা ফিরে পাওয়া জরুরি। বিশেষ করে বিদেশ সফরের জন্য ওর বোলিং বিভাগটাকে। এক জন অধিনায়ক ততটাই ভাল, যতটা ভাল তার দল এই ব্যাখ্যাটা পন্টিংয়ের ক্ষেত্রে ভীষণ ভাবে প্রযোজ্য। টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে ওকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। একটা ভাগ যখন ও ম্যাকগ্রা, ওয়ার্ন, ল্যাঙ্গার, গিলক্রিস্ট, হেডেন শুদ্ধু অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। দ্বিতীয় ভাগটা এই চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটাররা অবসর নেওয়ার পর। দু’টো সময়ের রেজাল্টের পার্থক্যটা দুধ আর ঘোলের মতো।
চেন্নাই সুপার কিংসের ফলাফলে আমি অবাক নই। চিপকে সব সময় ভাল ক্রিকেটের উইকেট থাকে। ভাল বাউন্স থাকে। স্ট্রোক প্লে খুব সাহায্য করে। কিন্তু গত দু’মরসুম ধরে সেটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পিচ স্লো। সিমার বা স্পিনাররা যদি বলের ওপর আঙুলগুলো স্রেফ ‘রোল’ করে ছেড়ে দেয়, ব্যাটসম্যানের শট খেলা মুস্কিল। ধোনির ২২ বলে ৭ রান করাতেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। ধোনি ওর সবচেয়ে খারাপ ফর্মেও এর চেয়ে তাড়াতাড়ি রান করবে। স্লো উইকেটই চেন্নাইয়ের লোয়ার অর্ডারকে বড় শট খেলার স্বাধীনতা দেয়নি। এত দিন ওরা সাফল্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এ কারণেই ধোনি ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের এক দিনের সিরিজের দল নির্বাচনের আগে বিশ্রাম চেয়েছিল। ওর বিশ্রামের আর্জি নামঞ্জুর হওয়াটা এটাই বোঝাচ্ছে যে, ভারতীয় ক্রিকেট এই মুহূর্তে কতগুলো চোট-আঘাতের মধ্য দিয়ে চলেছে। যার জন্য জাতীয় দলে অনেকগুলো নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচকেরা ঠিকই বুঝেছেন যে, ওয়ান ডে ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ধোনির উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য ওকে দলে রেখে ঠিক কাজই করেছেন। তবে একটা পরিস্থিতি আসবে যখন নির্বাচকদের ধোনিকে বিশ্রাম দিতেই হবে। এবং সেই সময়টা খুব তাড়াতাড়ি আসছে। ধোনিকে বিশ্রাম দেওয়ার উপযুক্ত সময় হতে পারে এর পরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। ক্রিকেট থেকে কিছু সময়ের জন্য ওকে দূরে রেখে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য তাজা রাখা। আমি নিশ্চিত আগামী এক মাসের মধ্যে একঝাঁক সিনিয়র ক্রিকেটার ফিট হয়ে উঠে দলে ফিরে আসবে। আর তার ফলে নির্বাচকেরা ধোনিকে ওর কাম্য বিশ্রামটা দিতে পারবেন।
যে-ই খেলুক আর না খেলুক, ঘরের মাঠে ভারত বেশির ভাগ সময় অপরাজেয়। তবে ভারতীয় ক্রিকেটের আসল পরীক্ষা হবে বছর শেষে অস্ট্রেলিয়া সফরে। ওই সিরিজে ভারতের দরকার এক জন ফিট এবং তাজা অধিনায়ক। যে সব ধরনের ম্যাচ খেলতে চায়।
এই শতকের গোড়ায় ভারতীয় ক্রিকেটের লক্ষ্য ছিল বিদেশ সফরে খুব ভাল করা। গত ১০-১১ বছরের ভাল ফলের পর সদ্য ইংল্যান্ড সফরে ভয়ঙ্কর ভাবে হারতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও এক ব্যাপার ঘটলে এ দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ধাক্কা খাবে। সুতরাং ধোনিকে নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে, তারা নিশ্চিত ভাবে খুব তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে উঠেছে। ধোনির ক্ষমতা বিচারের সময় এখনও আসেনি। আমি নিশ্চিত, ধোনি নিজেও বিদেশের মাঠে ভারতের ভাল ফলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ওকে যদি অতি দরকারি বিশ্রামটা দেওয়া হয়, ও সেটার পুরো ফায়দা তুলবে। লক্ষ্যের প্রতি ফোকাস রেখে। এবং বুঝতে পারবে এটা ওর থেকেই শুরু হওয়া দরকার ছিল। |