|
|
|
|
দেদার ভাড়া হাঁকছে গাড়ি, বাদ নেই রিকশাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দুই শহরের দূরত্ব মেরেকেটে ১১-১২ কিলোমিটার হবে। দুই শহর ঘুরে পুজো দেখলে বড় জোর সেটা গিয়ে পৌঁছবে ৫০ কিলোমিটারে। কিন্তু পুজোর মরসুমে সেই পথ যেতেই চার চাকার বড় গাড়ি ভাড়া হাঁকছে ৪ হাজার টাকা! কোথাও কোথাও তা ৪ হাজার ৩০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজারও ছাড়াচ্ছে। অন্য সময় মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত বাস ভাড়া করলেও এর থেকে তিনগুণ কম টাকা লাগে।
রিকশার ভাড়াও আকাশছোঁয়া। শুরুই হচ্ছে ২০০ টাকা দিয়ে। তা দিয়ে ৫-৬টি মণ্ডপ ঘোরা যাবে। এরপর মণ্ডপের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই বাড়বে ভাড়া। বড় গাড়িতে তা-ও চাপাচাপি করে ১০ জন বসা যায়। কিন্তু রিকশায় তো বড়জোর ৩ জন, তা-ও এক জন বাচ্চা হলে। সব মিলিয়ে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে শহরবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। অনেকে তো ভাড়া শুনে আঁৎকে ফের বাড়িমুখো পা বাড়াচ্ছেন। গাড়ি ব্যবসায়ী বা রিকশা চালকদের অবশ্য সাফ কথা, “এই তো মওকা। এক শ্রেণির মানুষ তো খরচ করার জন্যই বসে আছে। এই সময় সকলের কথা ভাবার সময় নেই।” এমনিতে মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুর যাতায়াতের জন্য ছোট গাড়িগুলি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া নেয়। ৫-৬ ঘন্টা সময় কাটালে আর একটু বেশি পড়ে। বছর তিনেক আগেও পুজোর সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতে ছোট গাড়ি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়া নিত। এখন ছোট ইন্ডিকার মতো গাড়িই ভাড়া চাইছে ২১০০ থেকে ২৫০০ টাকা। গ্যাস চালিত মারুতি ওমনি গাড়ি ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা! আর বোলেরো, টাটা সুমো, স্করপিও-র মতো গাড়ি ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ঘণ্টা বাড়লে ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে।
তা-ও এই ভাড়া সারা দিনের নয়। গোটা দিনটাকে চার ভাগে ভাগ করেছেন গাড়ি ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একটা ভাগ। দুপুর ১২টা থেকে ৬টা একটা, সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১২টা আর রাত ১টা থেকে ভোর পর্যন্ত আর একটা ভাগ। পুজো দেখার ভিড়ে কলকাতা বা অন্যত্র যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া মিলছে না। এক ব্যবসায়ীর কথায়, “এই সময় কলকাতা ভাড়া গেলে কত টাকা পাব? বড় জোর ৩০০ কিলোমিটার যাতায়াত হবে। কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকার বেশি চাওয়া যাবে না। সারা দিন খেটে ৩ হাজার টাকা পাব। কিন্তু সারা দিনে আমি ৩ বার পুজোর ট্রিপ করলে ১২ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।”
দুই শহরেই এই চিত্র। পরিস্থিতি সাধারণ মধ্যবিত্তের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও গাড়ি চেপে ঠাকুর দেখার জো থাকছে না। গাড়ি ব্যবসায়ী অসিত পাল, সরোজ অধিকারীদের কথায়, “পুজোর সময় কিছুই করার নেই। একটু বেশি লাভ করব না। তাছাড়াও পুজোর ভিড়ে সব সময় ব্রেক ও ক্লাচে পা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। ফলে পুজোর ভাড়া খাটার পরই গাড়ির কাজও করাতে হয়।” রিকশা চলক সত্য মুদির কথায়, “পুজোর সময় মানুষ হাত খুলে খরচ করে। আমরাও এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। এই সময় না নিলে, অন্য সময় কেউ বেশি ভাড়া দেবে। ২ টাকা বেশি ভাড়া বললে, আধঘন্টা তর্ক করবে, কিন্তু তা দেবে না।” পুজোর মরসুম যেন এদের সকলের পৌষ মাস। |
|
|
|
|
|