সম্পাদকীয় ২...
এত লালবাতি কেন
গাড়ির মাথায় লাল-বাতি লাগাইয়া নগর পরিক্রমার সাধে আবার বাদ সাধিয়াছে কলিকাতা হাইকোর্ট। আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়াছে, কলিকাতার পুলিশ কমিশনার ব্যতীত অন্য কোনও পুলিশ অফিসার গাড়িতে লাল-বাতি লাগাইয়া ঘোরাঘুরি করিতে পারিবেন না। তালিকায় কেবল পুলিশ অফিসাররা নাই, আছেন এমন সকলেই, লালবাতির সুবিধা যাঁহাদের প্রাপ্য নয়। তাঁহারা নিজেদের ভি আই পি ভাবিতে পারেন, তাঁহাদের অনুরাগী ও অনুগামীদেরও তাহা ভাবিতে দোষ নাই, কিন্তু আইন অনুযায়ী প্রাপ্য না হইলে লালবাতি ব্যবহার নিষিদ্ধ। আদালত এ জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তিরস্কারও করিয়াছে, কেন যাবতীয় হরিপদ কেরানিরাও আকবর বাদশার ন্যায় গাম্ভীর্য ও ওজন লইয়া ঘুরিবে, কেন যাহাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থাগ্রহণ করার কথা, সেই পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকিবে, উপরন্তু পুলিশেরই ছোট-মেজো অফিসাররা কেন এই সুবিধাভোগীদের দলে নিজেদের উত্তীর্ণ করিবেন?
মুশ্কিল হইল, কলিকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে লালবাতি-কাঙাল লোকের সংখ্যা অত্যধিক বেশি। তাঁহাদের কাঙ্ক্ষিত বিশেষাধিকারটি আর কিছুই নয়, ট্রাফিক পুলিশের সৌজন্যে যানজট এড়াইয়া, পথচারীদের সচকিত, কখনও বা সন্ত্রস্ত করিয়া দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাইবার সুযোগ। গাড়িতে লালবাতি লাগানো থাকিলে পাড়ায়, প্রতিবেশীদের কাছে, আত্মীয়-পরিজনদের কাছেও বাড়তি মর্যাদা পাওয়া যায়। আর সঙ্গে যদি আবার ভেঁপু বাজাইবার অধিকারও মেলে, তবে তো সোনায় সোহাগা। দূর হইতেই তাহার শব্দে লোকজন জায়গা ছাড়িয়া দেয়। রাজতন্ত্র খাতায়-কলমে অবসিত হইলেও রাজপুরুষরা দিব্য বহাল রহিয়াছেন, অটুট রহিয়াছে সুবিধাভোগীদের সমীহ করার সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা। আম জনতা এখনও তাঁহাদের রাজপুরুষের মর্যাদাই দিয়া থাকে। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এ দেশে যেমন এখনও রাজপুরুষের সম্মান ও সুযোগসুবিধা পাইয়া থাকেন, তেমনই তাঁহাদের সহিত ওঠা-বসা যাঁহাদের, সেই সম্ভ্রান্ত, উচ্চবর্গীয় শাসকপ্রতিম বিশিষ্ট জনেরাও শাসকদের সহিত বিভিন্ন স্তরের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে অনুরূপ বিশেষাধিকার উপভোগ করিয়া থাকেন। কেহ-কেহ এ জন্য রীতিমত মরিয়া হইয়া ওঠেন। পুলিশ বাহিনীতেও এই সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব সংক্রামিত হইয়া থাকিবে। তাই কমিশনারের দেখাদেখি অধস্তন অফিসাররাও নিজেদের গাড়িতে লাল-বাতি লাগাইয়া ঘুরিতেছেন। এই প্রবণতাকে এখনই রুদ্ধ না করিতে পারিলে অচিরে থানার বড়-বাবু, মেজো-বাবুরাও লাল-বাতি লাগানো গাড়ি লইয়া নগর পরিভ্রমণে বাহির হইবেন। আদালত তাই সময়োচিত রায়ই দিয়াছে।
রায়টি রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর কতখানি মানিয়া চলিবে, তাহা লইয়া অবশ্য সংশয় থাকিয়াই যায়। কারণ এই প্রথম আদালত লাল-বাতির অপব্যবহার বন্ধে এমন রায় দিতেছে না। ইতিপূর্বে একাধিকবার অনুরূপ ভর্ৎসনা করা সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন লাল-বাতি নিয়ন্ত্রণে কোনও বন্দোবস্ত লয় নাই, হাত গুটাইয়া বসিয়া থাকিয়াছে। ভূত যদি সরিষার মধ্যেই থাকে, তবে ওঝা কেমন করিয়া ভূত তাড়াইবে? নিজেকে, নিজের কাজ ও পদকে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন গণ্য করিলে অন্য সকলকে সেই গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা তারস্বরে বিজ্ঞাপিত করার তাগিদও প্রবল হইয়া ওঠে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের দায় সমধিক। তাঁহাদের উচিত জনতার সহিত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ নৈকট্যে স্থিত থাকা। লালবাতি উপরমহলে গ্রহণযোগ্যতা যদি বা বাড়ায়, আমজনতা হইতে তো তাহা যোজনপ্রমাণ দূরত্ব রচনা করে? রাজনৈতিক জননেতাদের কি দূরত্বের সেই ব্যবধান অভিপ্রেত?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.