ভারত তার যে মেধাশক্তিকে বিদেশে পুঁজি করতে চায়, তার মান নিয়েই প্রশ্ন তুললেন এন আর নারায়ণমূর্তি।
বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই আইআইটি-র ছাত্রদের মান নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এমেরিটাস নারায়ণমূর্তি। বলেছেন, আইআইটির ছাত্রদের মান ইদানীং খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই কোচিং-সেন্টারের ভূত তাড়াতে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ধাঁচে বদল তো বটেই, আইআইটিতে শিক্ষকদের নিয়োগ এবং তাঁদের বার্ষিক মূল্যায়নের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, কেন্দ্র এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক।
নিউ ইয়র্কে ‘প্যান আইআইটি’ বৈঠকে নারায়ণমূর্তি কাল বলেন, “আইআইটি-তে যে ধরনের ছাত্ররা এখন পড়তে ঢুকছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই খুবই নিম্ন মানের। গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়েছে। এখনকার যে সব কোচিং সেন্টার এদের তৈরি করে, তাদের ধন্যবাদ।” সঙ্গে সঙ্গে হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা হলঘর। নারায়ণমূর্তির আরও অভিযোগ, বর্তমানে যে সব ছাত্রছাত্রীরা আইআইটিতে পড়তে ঢুকছে, তাদের মধ্যে প্রথম দিকের ২০ শতাংশ ভাল। বিশ্বের বাকি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তবু তাদের তুলনা টানা যায়। বাকি আশি শতাংশই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।
গোটা বক্তৃতায় মূলত কোচিং সেন্টারগুলোকেই দুষেছেন নারায়ণমূর্তি। বলেছেন, “কোচিং ক্লাসগুলো কিছু গতে ধরা প্রশ্ন তুলে দেয় ছাত্রছাত্রীদের হাতে। সেগুলোর সাহায্যে কোনও মতে জয়েন্ট এন্ট্রাস পাশ করে আইআইটিতে ভর্তি হলেই তো সব শেষ হয়ে যায় না। এর পর উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে পড়তে বা আমেরিকায় চাকরি করতে গেলে পদে পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে দেশের আইআইটি ছাত্রদের। সে জন্য আইআইটিতে ঢোকার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন প্রয়োজন।” সেই সঙ্গেই ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্ররা ইংরেজি বলায় সাবলীল নন বলে অভিযোগ তুলেছেন ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর ক্ষোভ, রাজনৈতিক নেতাদের ‘ইংরেজি বিরোধী’ মনোভাবের জন্যই ছাত্রছাত্রীরা এই ভাষাটা ঠিকঠাক বলতে পারে না। এই বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য পুরোপুরি একমত নন আইআইটি খড়্গপুরের উপ-অধিকর্তা অরুণ কুমার মজুমদার। তাঁর কথায়, “মৌলিক বিষয়টা খুঁটিয়ে না পড়ে শুধুমাত্র কোচিং ক্লাসে বাছাই প্রশ্নোত্তর পড়ে কিছু পড়ুয়া তো আইআইটিতে আসছেই। পরবর্তী সময়ে তাঁদের কিছুটা সমস্যাও হচ্ছে। তবে এ জন্য সামগ্রিক ভাবে আইআইটি-র মানের অবনমন হচ্ছে, এটা বলার যৌক্তিকতা বুঝতে পারছি না।”
নারায়ণমূর্তির কথার রেশ ধরেই অরুণবাবু জানিয়েছেন, আইআইটি-তে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া ঢেলে সাজতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্র উদ্যোগী হয়েছে। তাঁর কথায়, “বিষয়টি এখন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের বিবেচনাধীন।” ইনফোসিসের চেয়ারম্যান এমেরিটাস শুধু ভর্তির প্রক্রিয়ায় বদল আনতে বলেছেন তা-ই নয়। তাঁর পরামর্শ, শিক্ষকদের নিয়োগে পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে প্রাক্তনীদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য আইআইটির গভর্নিং কাউন্সিল-এ আরও বেশি করে তাঁদের অংশগ্রহণের কথাও বলেছেন। আর জানিয়েছেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে গবেষণায় মন দিতে হবে। স্নাতক স্তর থেকেই গবেষণার বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন নারায়ণমূর্তি। তাঁর কথায়, “আইআইটির গবেষণা প্রকল্পে টাকা লগ্নি করার সংস্থা তৈরি করতে ভারত সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।” |