দু’টি জাহাজে ধাক্কা লেগেছিল কিছু কাল আগেই। বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই এ বার খিদিরপুর ডকের কাছেই ধাক্কা লাগল তিন-তিনটি জাহাজের মধ্যে। ২০১০ সালের নভেম্বরে দু’টি জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের কাছে হুগলি পয়েন্টে। বন্দর সূত্রের খবর, দু’টি জাহাজে সংঘর্ষ ঘটে মাঝেমধ্যেই। তবে তিনটি জাহাজে ধাক্কা লাগার নজির খুব বেশি নেই।
খিদিরপুর ডক থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের দিকে যাবে বলে সোমবার সকালে ডকের ঠিক বাইরে নোঙর করা ছিল চারটি জাহাজ। জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করছিল তারা। কিন্তু সেই জোয়ার এসে পড়তেই ঘটল বিপত্তি। জলের ধাক্কায় দুলে উঠল সব ক’টি জাহাজই। এবং সেই দোলন এমনই যে, একটি জাহাজ ধাক্কা মারল অন্য দু’টি জাহাজকে। সেই সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হল একটি জাহাজের ডেকের উপরে থাকা ক্রেন। ঘষা খেয়ে দাগ পড়ে গেল অন্য জাহাজের বাঁ দিকে।
কেন এ ভাবে সংঘর্ষ হল? ধাক্কা লেগে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও অত কাছাকাছি জাহাজ নোঙর করা হয়েছিলই বা কেন?
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বন্দরের চেয়ারম্যান মদনলাল মীনা বলেন, “কেন এমন ঘটল, ঠিক বুঝতে পারছি না। শোনা যাচ্ছে, যে-জাহাজটি ধাক্কা মেরেছে, সেটির স্টিয়ারিং বিকল হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তবে দুর্ঘটনায় জড়িত কোনও জাহাজেরই তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।” দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে এ দিনই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বন্দরের চেয়ারম্যান। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে অপরাধী জাহাজের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের শাস্তি হবে বলেও জানানো হয়েছে। |
ক্ষতিগ্রস্ত এম ভি এশিয়ান লিডার। নিজস্ব চিত্র |
প্রায় ১১ মাস আগে, গত ২৩ নভেম্বর সকালে ডায়মন্ড হারবারের কাছে হুগলি পয়েন্টে ‘এমভি টাইগার স্প্রিং’ নামে কন্টেনার বোঝাই একটি জাহাজকে ধাক্কা মেরেছিল ‘এমভি গ্রিন ভ্যালি’ নামে অন্য একটি জাহাজ। ধাক্কা খেয়ে নদীতে হেলে যায় টাইগার স্প্রিং। ওই জাহাজ থেকে ২২০টি কন্টেনার নামানোর জন্য সিঙ্গাপুর থেকে বড় ক্রেন আনাতে হয়েছিল। দুর্ঘটনার প্রায় এক মাস পরে টাইগার স্প্রিংকে ফের ভাসানো হয়।
এ দিনের দুর্ঘটনায় জড়িত তিনটি জাহাজই বিদেশি। ‘এশিয়ান লিডার’ নামে যে-জাহাজটি অন্যদের ধাক্কা মেরেছে, সেটি গাড়ি বহন করে। ক্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘ম্যান্ডেনা’ নামে একটি জাহাজের। তৃতীয় জাহাজটির নাম ‘সাইতেন ভয়েজার’। ‘এশিয়ান লিডার’-এর ধাক্কায় ওই জাহাজের বাঁ দিকের গা ঘষে গিয়েছে। বন্দরকর্তারা জানান, ‘ম্যান্ডেনা’ আর ‘সাইতেন ভয়েজার’ তখনও নোঙরে বাঁধা ছিল। কিন্তু ‘এশিয়ান লিডার’কে নোঙর থেকে খুলে দেওয়া হয়েছিল তার একটু আগেই। জাহাজটি নিয়ম অনুসারে পিছন দিকে যাচ্ছিল সমুদ্রের দিকে রওনা দেওয়ার জন্য তৈরি হতে। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাহাজটি দুর্ঘটনা ঘটায়।
বন্দরের চেয়ারম্যান জানান, দুর্ঘটনার পরে প্রয়োজনীয় মেরামতির জন্য তিনটি জাহাজকেই আবার ডকের মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর আশা, “মঙ্গলবার তিনটি জাহাজই বেরিয়ে যেতে পারবে।” |