পায়ে পায়ে মণ্ডপে

মণ্ডপে মণ্ডপে সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা দেখলাম। কিন্তু মণ্ডপ থেকে বেরোলেই কোথাও কোথাও চূড়ান্ত অপরিষ্কার। অর্থাৎ, পরিবেশের সঙ্গে ব্যাপারটা মানানসই হচ্ছে না। এটা চোখকে খুব পীড়া দেয়। আবার অনেক সময়ে পুজো শেষ হয়ে গেলেও বহু দিন ধরে মণ্ডপের জায়গাটা পরিত্যক্ত জিনিসে ঠাসা থাকে। এ নিয়ে একটু ভাবা উচিত। তবে একটা ব্যাপার এ বার খুব ভাল লেগেছে, হিন্দি গানের পরিবর্তে বেশির ভাগ জায়গাতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে পেয়েছি।
 

প্রতি বারের মতো এ বারও ঠাকুর দেখাটা উপভোগ করেছি। মনে হল, আমাদের শিল্পবোধ ক্রমশ পরিণত হচ্ছে। কোথাও ভাঁড়ের মণ্ডপ দেখেছি, আবার এ বার দেখলাম কাচের স্বর্গ। অসাধারণ। বয়সের সঙ্গে জীবনবোধ যে পরিণত হয়ে ওঠে, সে ব্যাপারটা খুব সুন্দর ফুটে উঠেছে। গত কাল যা ছিল, আজ তা নেই। আবার আজ যা আছে, কাল তা থাকবে না। সময়ের সঙ্গে সবই পাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ঠাকুর দেখার ভিতরে রয়ে যাচ্ছে অনেকগুলি স্মৃতিচিহ্ন।
 

দারুণ মজা পেয়েছি। নিজে উদ্যোগী হয়ে যে পুজোগুলো হয়তো দেখাই হয়ে উঠত না না, সেগুলোও বিচারক হওয়ার কল্যাণে দেখা হয়ে গেল। এ বার ষষ্ঠীতেই এত মানুষ ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন, এটা কোনও বছর দেখিনি।

 

এ বার হাওড়ায় গিয়েছিলাম। যেটা খুব ভাল লাগল, সকলেরই থিম-ভাবনায় প্রকৃতি-সচেতনতা আছে। আসলে শহরটা এত অপরিকল্পিত এবং নোংরা যে, এত দিনে বোধহয় একটা সচেতনতা এল। এটা খুব ভাল ব্যাপার। দর্শকদের মধ্যে শতকরা দু’ভাগেরও যদি এই প্রকৃতি সংরক্ষণের সচেতনতা আসে, তা হলে আশার কথা।
 

এর আগে কখনও ঠাকুর দেখতে হাওড়ায় যাইনি। দারুণ অভিজ্ঞতা হল। মনে হল, হাওড়াবাসী সব দিক থেকেই বঞ্চিত। ওখানে জল নেই, রাস্তা খারাপ, বর্ষায় জমা জল নামতে চায় না। তা ছাড়া, শহরটায় দূষণমাত্রাও বেশি। তা সত্ত্বেও হাওড়ার মানুষ যে পরিবেশ-সচেতন, তার প্রমাণ, ওখানে যে পাঁচটি ঠাকুর দেখেছি, তার মধ্যে চারটিরই থিম হল পরিবেশ।
 

আমার ব্যক্তিগত ভাবে ঐতিহ্যের পুজোই বেশি ভাল লাগে। আমি উত্তরে ঘুরেছি এ বার। আমার সব চেয়ে বেশি ভাল লেগেছিল টালা বারোয়ারি। নলিন সরকার স্ট্রিটও ভাল, ওইটুকু জায়গার মধ্যে যে ভাবে তাঁরা ভাবনাটা ফুটিয়ে তোলেন, সেটা দেখার মতো।

 

শিল্প-ভাবনার দিক থেকে এত উঁচু মানে পৌঁছে গিয়েছে এখনকার থিম-পুজো যে, ভাবাই যায় না। তার সঙ্গে আছে মণ্ডপ আর প্রতিমার বৈচিত্র। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা।
 

পুজোর চার দিনের জন্য সারা বছর যে পরিশ্রম করেন শিল্পীরা, উদ্যোক্তারা তা আমাকে অবাক করে। ভাবি, শিল্পের একটা ভাবনাকে রূপ দেওয়ার জন্য মানুষ কী না করতে পারে। সেই সঙ্গে মানুষের সেই সৃষ্টি দেখার জন্য কলকাতার যে উদ্দীপনা, সেটাও আমাকে ভাবায়। কে বলে, বাঙালি অলস?
 

আমি এ বার হাওড়ায় গিয়েছিলাম। যেটা সব চেয়ে ভাল লাগল তা হল, ওঁদের পরিমিতিবোধ। তা ছাড়া, নানা অজানা লোকশিল্পকেও ওঁরা যে ভাবে মণ্ডপে তুলে নিয়ে এসেছেন, সেটাও দেখার মতো।

 
তিনটে জিনিস আমার খুব ভাল লেগেছে। এক, সকলেই পরিবেশ সচেতনতার কথা মাথায় রেখেছেন। বিশ্ব উষ্ণায়নের এই সময়ে পুজোর মধ্য দিয়ে মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা গেলে তো ভালই। দুই, অনেক লুপ্তপ্রায় লোকশিল্প মণ্ডপে মণ্ডপে পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছে। তিন, হাওড়ায় কলকাতার থেকে অনেক কম বাজেটের পুজো হলেও তাঁরা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.