শিল্পের রথের চাকা বসে যাওয়ার ইঙ্গিত সপ্তাহের শুরুতেই আতঙ্ক ছড়াল ভারতের শেয়ার বাজারে। এর সঙ্গে যোগ হল গ্রিসের আর্থিক সঙ্কট নিয়ে বিশ্ব বাজারে ফের নতুন করে তৈরি হওয়া আশঙ্কা। মূলত এই দু’য়ের জেরেই এক ধাক্কায় প্রায় ৩০২ পয়েন্ট খোয়ালো সেনসেক্স। ফলে, শারদোৎসবের প্রথম দিনটা কিছুটা বিষণ্ণ মুখেই কাটাল শেয়ার বাজার।
এইচএসবিসি-র সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে এ দেশে প্রায় থমকে গিয়েছে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি। শিল্পোৎপাদনের পরিমাণও (সংস্থার নিজস্ব পরিমাপ অনুযায়ী) আগের মাসের ৫৬ পয়েন্ট থেকে নেমে এসেছে ৫১.১ পয়েন্টে। ২০০৮-এর নভেম্বরের পর এক মাসের মধ্যে এতখানি পতন আর কখনও দেখা যায়নি বলে সমীক্ষাটির দাবি। শিল্পমহলও মনে করে, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে গত দেড় বছর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে ভাবে টানা সুদ বাড়িয়েছে, তার জেরে শ্লথ হতে শুরু করেছে শিল্প বৃদ্ধির হার। এইচএসবিসি-র এই সমীক্ষা তারই প্রতিফলন বলে মনে করেন বাজারে লগ্নিকারীদের বড় অংশ। তাই ঝুঁকি এড়াতে শেয়ার বেচেছেন তাঁরা।
বাজারের এই পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে গ্রিস নিয়ে নতুন করে তৈরি হওয়া জটিলতাও। গ্রিসের খসড়া বাজেট অনুযায়ী, মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সাপেক্ষে চলতি বছরে তাদের বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ৮.৫%। অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের কাছ থেকে ত্রাণ প্রকল্প পাওয়ার জন্য তা ৭.৬ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। তা ছাড়া, চলতি বছরে ৫.৫ শতাংশের পর আগামী বছরেও তাদের অর্থনীতি ২.৫% সঙ্কুচিত হবে বলে আশঙ্কা করছে আথেন্স। ফলে, তাদের সরকারি ঋণের পরিমাণ হবে জাতীয় আয়ের ১৭২.৭%। যা প্রত্যাশিত ১৬১.৮ শতাংশের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলে, এক দিকে যেমন গ্রিসের ঋণ শোধের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই সংশয় তৈরি হয়েছে ত্রাণ প্রকল্পের অর্থ হাতে পাওয়া নিয়েও। যে কারণে এ দিন বিশ্ব জুড়ে পড়েছে শেয়ার বাজার।
দেশে-বিদেশে এই জোড়া আশঙ্কার জেরেই ৩০২.৩১ পয়েন্ট খুইয়েছে সেনসেক্স। থিতু হয়েছে ১৬,১৫১.৪৫ অঙ্কে। ৯৩.৭৫ পয়েন্ট কমেছে নিফটি-ও।
বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে তাই মনে করেন ইউরোপ ও আমেরিকার সমস্যা যত দিন না মিটছে, তত দিন ভারতের বাজারও স্থিতিশীল হওয়া কঠিন। কারণ এ দেশের বাজারে মৌলিক উপাদানগুলি ভাল হলেও, ধাক্কা খেয়েছে লগ্নিকারীদের আস্থা।
|