তাঁত বাঁচান, দুই শিল্পীর
আর্তি দিল্লির মণ্ডপে
বার দিল্লির পুজো মণ্ডপে বাংলার তাঁত।
শুধু তাঁতের শাড়ির মেলা নয়। দেবী ও তার সন্তানদের পরনে তাঁতবস্ত্র। কী করে তাঁতের শাড়ি বোনা হয়, মণ্ডপে রয়েছে তার লাইভ ডেমো। রয়েছে তাঁতের শাড়িতে সজ্জিত মডেলদের ক্যাট-ওয়াক-ও। ষষ্ঠী থেকে নবমী। এক এক দিন এক এক চমক মণ্ডপে। ‘তাঁত দেখুন, তাঁত কিনুন, তাঁত পরুন। বাঁচুক তাঁত শিল্প।’ দিল্লির জনকপুরিতে পাঙ্খা রোড বঙ্গ সম্মিলনীর পুজোয় এ বার এটাই থিম। উদ্দেশ্য, বাংলার তাঁত শিল্পে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার।
বিষয় ভাবনা ও প্রতিমা নির্মাণ দুই তরুণ শিল্পীর। এক জন ক্যামেলিয়া সুমন (আসল নাম সুমন বর্ধন) এবং অন্য জন বিশ্বজিৎ দাস। দু’জনেরই আদি বাড়ি বর্ধমানের ইছলাবাদে। তবে কর্মসূত্রে দীর্ঘ দিন দিল্লির বাসিন্দা তাঁরা।
পুজোয় তাঁতকে থিম করার ভাবনা মাথায় এল কী করে?
দিল্লি থেকে ফোনেই সুমন শোনালেন সেই কাহিনী। বললেন, “পুজোর আগে আমার স্ত্রী টুম্পা আচমকা জেদ ধরল, আমার ডিজাইনে তৈরি তাঁতের শাড়ি পরবে। মাথায় তো হরেক ডিজাইন খেলছে। তার থেকে একটা বেছে কম্পিউটারে সেট করে ওকে দেখিয়ে নিলেই হল। কিন্তু সেই নকশা থেকে তাঁতের শাড়ি বানাব কী করে? ছুটতে হল শান্তিপুর।”
তখন চলছিল প্রতিমা তৈরি। নিজস্ব চিত্র।
শান্তিপুরে গিয়ে নিজের নকশায় তাঁতের শাড়ি বোনাতে গিয়ে সুমনের চোখে ফুটে উঠল তাঁতিদের দুরবস্থার চিত্র। সেই গল্প শোনাচ্ছিলেন সুমন। বললেন, “ওঁদের হাতে না আছে সুতো, না রং। না শাড়ি বোনার কোনও উপকরণ! মহাজনের দেওয়া সুতো আর রং কাজে লাগিয়ে তাঁরা যে শাড়ি বোনেন, তা হাজার-দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু মজুরি হিসেবে এক জন তাঁতি পান মাত্র ৭০ টাকা। সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে তাঁতি, তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ঠিক মতো ভাতও তুলে দিতে পারেন না। মনে হল, এঁদের জন্য কিছু করা উচিত।” যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। দিল্লিতে ফিরে গিয়েই সুমন কথা বললেন পাঙ্খারোড বঙ্গ সম্মিলনীর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। ঠিক হল, পুজো মণ্ডপ ঘিরে বসবে তাঁত মেলা।
সুমন জানিয়েছেন, এ বার শান্তিপুরের মাত্র ১০ জন তাঁতিকে দিল্লির ওই মণ্ডপে নিয়ে যেতে পেরেছেন তিনি। ওই দশ জনের সঙ্গে গিয়েছে প্রায় হাজার খানেক নানা দামের, নানা ডিজাইনের তাঁতের শাড়ি। সপ্তমীর সন্ধ্যায় উচ্ছ্বসিত শোনাল সুমনের কণ্ঠ। বললেন, “দু’দিনেই প্রায় অর্ধেক শাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আমরা আগেই গোটা দিল্লি জুড়ে এই মেলার কথা প্রচার করেছিলাম। দর্শকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, এর পর থেকে তাঁতের শাড়ি কিনতে তাঁরা যেন সরাসরি তাঁতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।” বিশ্বজিৎ ও সুমনের ব্লগ এবং ওয়েবসাইটেও থাকছে তাঁতিদের ঠিকানা।
সুমনের সঙ্গে যে তাঁত শিল্পীরা দিল্লি গিয়েছেন, তাঁদের অন্যতম আনসার আলি। তিনি ফোনে বলেন, “আমাদের শান্তিপুরে এমন বেশ কয়েক জন তাঁতি রয়েছেন, যাঁদের বোনা শাড়ি মানুষকে মুগ্ধ করে। কিন্তু আমাদের হাতে যাতে উপকরণই না পৌঁছতে পারে, তার অপচেষ্টা চলছে। মহাজনদের শোষণ গুণী শিল্পীদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দিল্লির এই মেলা সেটা ঠেকাতে পারে।” অপর দুই তাঁতি মধু মণ্ডল, কালু শেখ বলেছেন, “এই হাজার শাড়ি আমরা তৈরি করেছি অন্তত ৫০-৬০ জন মিলে, নিজেদের জমিয়ে রাখা সামান্য টাকাকড়ি মিলিয়ে এসেছে মূলধন। এখানে যদি সব শাড়ি বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে আমাদের হাতে আসবে যথেষ্ট টাকা। সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ভবিষ্যতে নিজেদের শাড়ি নিজেরাই বুনে নেব।”
তাঁতিদের দিল্লি পৌঁছনোর এবং সেখানে থাকা-খাওয়া আর ফিরে আসার খরচ দিচ্ছে ওই পুজো কমিটি। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কালু দাসের কথায়, “আমরা আমাদের মতো করে তাঁতিদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের এই প্রচেষ্টা হয়তো এই শিল্পকে বাঁচানোর একটা মুখবন্ধ হিসেবে কাজ করবে।” শুধু মেলা নয়। তাঁতের শাড়ি কিনুন, স্লোগান নয়। মণ্ডপে পুজোর দিনগুলিতে থাকছে একটি স্থির চিত্রের প্রদর্শনীও। চিত্রগ্রাহক জি কৌশিকের লেন্সে ফুটে উঠেছে তাঁতিদের বিপন্নতার ছবি। সুদিন ফিরবে কি, আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁতিরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.