সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি কমিটির ‘চিফ মেন্টর’ হয়ে সম্প্রতি রাজ্যে পা রেখেছেন এন আর নারায়ণমূর্তি। এ বার তাঁর হাতে গড়া সংস্থা ইনফোসিসও জমি পেতে চলেছে।
ইনফোসিস-এর হাতে দ্রুত জমি তুলে দিতে সময় বেঁধে দিয়ে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই মতো ৩০ সেপ্টেম্বর কাজ মোটামুটি ভাবে শেষ করে ফেলেছে হিডকো। নিউ টাউনের ‘অ্যাকশন এরিয়া তিন’-এ দেশের অন্যতম বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস-এর জন্য চিহ্নিত জমি এখন সব অর্থেই প্রস্তুত। এ মাসেই সেই জমি হস্তান্তর হওয়ার কথা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাতিশালা মৌজায় যে ৫০ একর জমিতে গড়ে উঠবে ইনফোসিসের প্রকল্প, সেই মাঠ জুড়ে এখনও ধান গাছের ছড়াছড়ি। হিডকো কিনে নেওয়ার পরেও জমি পড়েছিল গত কয়েক বছর ধরে। তাই সেখানে চাষ করছিলেন স্থানীয় মানুষ। সেই ফসল তোলার আর বেশি দিন বাকি নেই। ধান উঠলেই সেই জমিতে কাজ শুরু করে দেবে ইনফোসিস।
বোর্ডে লেখা রয়েছে ‘ল্যান্ড ফর ইনফোসিস’। প্লট নম্বর থ্রি-জি/২। প্রায় দু’কিলোমিটার জমির চার ধার হলুদ-নীলে লেখা এমন অসংখ্য বোর্ডই জানান দিচ্ছে ইনফোসিসের উপস্থিতি। গোটা জমি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। জমির মাঝখান দিয়ে যে ৩৩ কেভি হাইটেনশন বিদ্যুতের লাইন চলে গিয়েছে, ইনফোসিসের অনুরোধে তা সরিয়ে নেওয়ার কাজও প্রায় শেষের মুখে। |
জমির গা-ঘেঁষা ৬ লেনের মেজর আর্টারিয়াল রোডটা গিয়ে মিশেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিখরপুরে। এখান থেকে দক্ষিণে বাসন্তী আর উত্তরে পৌঁছে যাওয়া যাবে টাকিতে। এই ৬ লেনের রাস্তাটা নিউটাউনের ধমনী। ইনফোসিসের জমি আর এই রাস্তার মাঝে তৈরি হচ্ছে একটি সার্ভিস রোড। এই রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার আগে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা কাজ শুরু দিলে জমিতে তাদের প্রবেশ করার জন্য একটি সংযোগ কৈরি করা হয়েছে। জমিতে বিদ্যুৎ আসবে কাছের একটি সাব স্টেশন থেকে। এ জন্য ১১ কেভি বিদ্যুতের লাইন তৈরি।
নির্মাণ কাজের জন্য যে জল লাগবে, সে জন্য একটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। হিডকো জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও জলের জন্য ইনফোসিস আবেদন করলে তা সরবরাহ করতে বেশি সময় লাগবে না। জমির জল বের করার জন্য একটি নিকাশি খাল কাটার কাজ চলছে পুজোর মধ্যেই।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর ইনফোসিসের হাতে জমি তুলে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেছিল হিডকো। ৫০ একর জমির দাম ঠিক হয় ৭৫ কোটি টাকা। এর ২৫% অর্থ দিয়ে জমি ‘বুকিং’ করে ইনফোসিস। হিডকোর তৎকালীন চেয়ারম্যান গৌতম দেব সে দিন ঘোষণা করেছিলেন, ৬ মাসের মধ্যে জমির যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার পরেই ইনফোসিসের কাছ থেকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা নেওয়া হবে। কিন্তু অঙ্গীকারপত্র সইয়ের পরে বছর ঘুরতে চলল। এই সময়ের মধ্যে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ও পালাবদলের ফলে কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ে। জল-বিদ্যুৎ-রাস্তা-সহ পরিকাঠামোর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ইনফোসিস। শেষ পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রী সময় বেঁধে দেওয়ার পরে সেই কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি হিডকোর। পরিকাঠামো-সহ সেই জমি এখন স্রেফ ইনফোসিসের হাতে তুলে দেওয়ার অপেক্ষায়।
জমিটি ২০০৫ সালে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিল হিডকো। সংস্থার দাবি, জমির মালিকানা নিয়ে পারিবারিক বিরোধের কারণে কয়েকটি চেক এখনও বিলি করা যায়নি। তবে সেটা মাত্র কয়েক একর জমি। ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে বলে স্থানীয় মানুষ জমিতে চাষের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু জমি হস্তান্তরের আগে এই নিয়ে যাতে কোনও বিরোধ না বাধে, সেটা ভেবে এ বছর মাঠভর্তি ধানের ক্ষতিপূরণও দিয়েছে হিডকো। সব প্রস্তুতি শেষ হলেও ইনফোসিস জমি নেবে কবে? রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী বলেন, “ওদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। আশা করছি তাড়াতাড়িই হবে।” |