চিকিৎসায় নোবেল ত্রয়ীর
মৃত বিজ্ঞানীকে নোবেল, বিতর্কে জড়াল কমিটি
বিশ্বের সেরা স্বীকৃতি জিতে নিল মারণ-ব্যাধির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই। কিন্তু মৃত্যুই বিতর্কিত করে তুলল সেই পুরস্কারকে।
ক্যানসার প্রতিরোধে ‘যুগান্তকারী’ আবিষ্কারের জন্য এ বছর আরও দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানীর সঙ্গে যৌথ ভাবে
নোবেল পুরস্কার পেলেন র‌্যালফ স্টাইনমান। কিন্তু সেই খবর পৌঁছল না তাঁর কাছে। কারণ, চার বছর লড়াইয়ের পরে শুক্রবার অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে মারা গিয়েছেন তিনি। যে খবর জানা ছিল না নোবেল কমিটির!
রীতি অনুযায়ী কাউকে মরণোত্তর নোবেল দেওয়া হয় না। স্টাইনমানের মৃত্যুর খবর শুনে নোবেল কমিটির মহাসচিব ইয়োরান হ্যানসন বলে ফেলেন, ‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তের কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি মারা গিয়েছেন।” কমিটি অবশ্য ‘আমরা তো আগেই জানতাম’ বলে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করে। তাতে বিতর্ক আরও দানা পাকিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ম ভেঙে তবে কি মরণোত্তর পুরস্কারই বহাল থাকবে, না নতুন নাম ঘোষণা করা হবে?
বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা কী ভাবে কাজ করে এবং গেঁটে বাত, হাঁপানি বা ক্যানসারের মতো রোগে এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে টিকা তৈরি করা যায় কি না, সে বিষয়ে সফল গবেষণার জন্য আজ স্টাইনমানের সঙ্গে ব্রুস বিউটলার এবং জুল হফম্যানকে নোবেল দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। কানাডায় জন্ম হলেও স্টাইনমানের কর্মস্থল ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিউটলারও আমেরিকার বাসিন্দা। আর হফম্যান আদতে লুক্সেমবুর্গের, বর্তমানে ফ্রান্সের বাসিন্দা।
জুল হফম্যান র‌্যালফ স্টাইনমান ব্রুস বিউটলার
নিজের গবেষণাকে নিজের উপরেই প্রয়োগ করেছিলেন স্টাইনমান। নিজের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতেই চালাচ্ছিলেন নিজের চিকিৎসা। সম্ভবত মৃত্যুকেও ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন কয়েক মাস। আজ দুপুরে এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিন নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণার পরে স্টাইনমান যে প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেছেন, সেই রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘খবরটা আনন্দের এবং দুঃখের। আজ সকালে তাঁর পরিবারের কাছে থেকে আমরা জানতে পেরেছি, ৩০ সেপ্টেম্বর স্টাইনমান মারা গিয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৬৮। চার বছর আগে অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসার ধরা পড়ে। ডেনড্রাইটিক কোষের (যে কোষ তাঁরই আবিষ্কার) উপর ভিত্তি করে নিজেরই আবিষ্কৃত এক পদ্ধতিতে নিজের চিকিৎসা করছিলেন স্টাইনমান। এতে তাঁর আয়ুও খানিকটা বেড়েছিল।’
স্টাইনমানের মৃত্যুর খবর জানায় নোবেল কমিটিও। তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, কমিটি তা হলে আগে ঘটনাটি জানত না। কারণ, যেখানে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার রীতি নেই, সেখানে স্টাইনমানের নাম ঘোষণা হয় কী করে? কমিটির মুখপাত্র স্টাইনমানের মৃত্যুর ঘটনাটি জানতেন, এমন ভাব দেখালেও পরে তা ধোপে টেকেনি। কারণ, কমিটির মহাসচিবই বলে দেন, পুরস্কারের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারণ এই ঘটনা নজিরবিহীন। আসলে পুরস্কারের খবর বিজ্ঞানীর কাছে পৌঁছতে গিয়েই নোবেল কমিটি জানতে পারে, স্টাইনমান নেই।
প্রায় সাড়ে দশ লক্ষ মার্কিন ডলারের পুরস্কার স্টাইনমান, বিউটলার ও হফম্যানের মধ্যে ভাগ হওয়ার কথা ছিল। স্টাইনমান পেতেন অর্ধেক। বাকি অর্ধেক বিউটলার ও হফম্যানের মধ্যে ভাগ হত। নোবেল কমিটির মহাসচিব হ্যানসন প্রথমে জানান, স্টাইনমানের বদলে অন্য নাম তাঁরা ঘোষণা করবেন না। মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া যে হেতু নোবেল-নীতির বিরোধী, তাই পুরস্কারের অর্থ কী ভাবে ভাগ হবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি।
স্টাইনমানের ছেলে অ্যালেক্সিস বলেন, “বাবার সারা জীবনের কাজের স্বীকৃতি এই পুরস্কার। আমরা অভিভূত।” তবে মরণোত্তর পুরস্কার নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি তিনি। প্রতিক্রিয়া জানানোর সময়ে স্টাইনমানের মৃত্যুর খবর স্বাভাবিক ভাবেই জানা ছিল না বিউটলারদেরও। বিউটলার নোবেলপ্রাপ্তির খবর পান ই-মেলে। বিশ্বাস হয়নি। ইন্টারনেট ঘাঁটতে শুরু করেন। “গুগল নিউজ-এ শেষ পর্যন্ত পেলাম খবরটা। তার পর সব জায়গায় নিজের নাম দেখলাম।” কোনও জীবাণুর আক্রমণ ঘটলে তা প্রতিরোধের বিভিন্ন স্তর রয়েছে আমাদের দেহে। সেই প্রাথমিক স্তরের একটা অংশ আবিষ্কার করেন বিউটলার-হফম্যানরা। আর স্টাইনমানের আবিষ্কার পরবর্তী স্তরের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে। সব মিলিয়ে এই ত্রয়ীর গবেষণা, আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বোঝার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনে দিয়েছে। ওই ক্ষমতা কী ভাবে সক্রিয় করা যায় এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছে। শংসাপত্রে এমনই বলেছে নোবেল কমিটি। প্রতিষেধক তৈরির গবেষণায় যা নতুন দিশা দেখিয়েছে। এবং নিজের জীবনে যা করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন র‌্যালফ স্টাইনমান। একটা পোষা হরিণও ছিল। ভাই ওর সঙ্গে খেলত। খ্যাপা ছিল খুব। না হলে কেউ কার্গিলে যায়!”
কার্গিল?
দেওয়ালে বাঁধানো একটা ছবি দেখালেন স্বচ্ছতোয়া। বালির বস্তার আড়ালে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে তাঁর খ্যাপা বর। পিছনে দাঁড়িয়ে এক সেনা।
সত্যিই যুদ্ধে গিয়েছিলেন নাকি?
অভিজিৎবাবু বললেন, “সত্যিই এটা কার্গিলের ছবি। তখন কত বয়স? কলেজে পড়ে। একদিন বলল, ‘সবাই যুদ্ধের জন্য টাকা দিচ্ছে। কিন্তু আমি যুদ্ধেই যাব।’ আমরা আটকাতে পারিনি। এক বন্ধুর সঙ্গে যুদ্ধে চলে গেল। থাকলও বহুদিন। যুদ্ধ থেকে ফিরে আবার পড়ল পাখি আর পোকামাকড় নিয়ে।”
বাবুইয়ের বাসাটা কি সৌম্যজিৎই ভেঙে এনেছিলেন?
স্বচ্ছতোয়ার মুখে ভাঙা বাসার আঁধার। খানিক নীরবতা। বললেন, “ভাঙেনি। পাখির বাসা কোনওদিন ভাঙত না। গাছের নীচে কুড়িয়ে পেয়েছিল। আমার বাড়ি তো পশু-পাখির হাসপাতাল। পা ভাঙা কাঠবিড়ালি খুঁজেপেতে নিয়ে আসত। ডানা ভাঙা পেঁচাও এনেছিল। পেঁচা খুব ভালবাসত। আর ভালবাসত চাঁদ। বিভূতিভূষণ ও জীবনানন্দ খুব প্রিয় ছিল। ডুয়ার্সের জঙ্গলে একবার হাতি তাড়া করেছিল। গাছে উঠে পড়েছিল ও। উফ, কী সাঙ্ঘাতিক!” স্বচ্ছতোয়ার চোখেমুখে রোমাঞ্চকর বিচ্ছুরণ। যেন পুজোর মণ্ডপে পাশেই বসে সৌম্যজিৎ। চাপা গর্বের সঙ্গে তিনি প্রতিবেশীকে শোনাচ্ছেন খ্যাপা বরের বীরগাথা।
আপনিও যেতেন?
যেতাম। তবে পুজোয় তেমন যাওয়া হত না। পাড়াতেই মেতে থাকতাম। গত বারও অযোধ্যা পাহাড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাওয়া হয়নি। পুজোর পরেই কাঁধে বাইনোকুলার ঝুলিয়ে চলে গেল। তখনও কি জানতাম, ও চলে যাচ্ছে চাঁদের পাশে। চাঁদই ওকে কেড়ে নিল। আমি আছি ছেলে রোদ্দুরকে নিয়ে।
সাড়ে তিন বছরের রোদ্দুরের একটা সাইকেল আছে। মৌমাছির মতো। বাবার সঙ্গে সে সাইকেল চড়ত। স্বচ্ছতোয়া বলেন, “বিশ্বকর্মার দিন ছেঁড়া নেকড়া দিয়ে সাইকেল মুছছিল। হঠাৎ বলল, মা, বাবার বাইকটাও মুছে দিই। বাবা কোথায় মা?”
বাবাকে খুব খোঁজে?
রাতে বিছানায় খোঁজে। আমাকে বলে, ‘মা, বাবার পাশবালিশটা কাউকে দেবে না। ওটা শুধু বাবার। বলো না মা, বাবা কোথায়?’ আমি বলি, যা কিছু ভাল, এই যেমন মেঘ, বৃষ্টি, গাছ, কাঠবিড়ালি, সবের মধ্যেই তোর বাবা আছে। তোর বাবা তো খুব ভাল, খুব ভাল...।
বৃষ্টি ঝরছে স্বচ্ছতোয়া নদীতে। গলার কাছে, বুকের কাছে, আটকে থাকা নুড়ি-পাথর ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারায়। ছেঁড়া সেতারের মতো শোনাচ্ছে ওর গলা। বললেন, “পাগল ছেলের কথা শুনবেন? এই তো সেদিনের কথা। সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। চারদিক ঝাপসা। দেখি, জানালার ধারে হাতটা নিয়ে একবার মুঠোটা খুলছে, একবার বন্ধ করছে। হঠাৎ আমাকে দেখে বলল, ‘মা, তুমি যে বললে বৃষ্টির মধ্যে বাবা আছে। আমি তো কত বৃষ্টি ধরলাম। কোথায় বাবা? কোথায়?”
বৃষ্টি থামছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.