হারিয়ে যাওয়া আনন্দ খুঁজতেই বিকেল পার
‘ধুস! এখন আর পুজোয় সেই প্রাণটাই পাওয়া যায় না।’
‘আরে আমরা তো শাশুড়ির ভয়ে ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকতাম। ঠাকুর দেখা তো দূরে থাক।’
পঞ্চমীর বিকেলে, বিশ্বপ্রবীণ দিবসে কেতুগ্রামের শিবলুন সদগোপ সমিতির সর্বজনীন পুজো মণ্ডপে প্রবীণ বাসিন্দাদের আড্ডায় ঘুরে-ফিরে আসছিল এমন অনেক স্মৃতি।
প্রায় সাত-আট বছর ধরে ১ অক্টোবর এই গ্রামের বাসিন্দা তথা কাটোয়া কলেজের কর্মী তপোময় ঘোষের উদ্যোগেই গ্রামের প্রবীণরা জড়ো হন। তাঁর কথায়, “ওঁদের কাছ থেকে গ্রামের অনেক ইতিহাস জানতে পারে নতুন প্রজন্ম। এ বার যেমন এই পুজো কী ভাবে শুরু হল, তা জানতে পারলাম।”
শিবলুন গ্রামের সদগোপ পাড়ার পুজো শুরু হয় ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে। এ বার এই পুজো ৭৫ বছরে পা দিল। প্রবীণরা জানান, গ্রামের ‘বাবু’দের পুজোয় বাহ্মণ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তাঁরা পুজোর প্রসাদ দেওয়া তো দূরের কথা, দেবী দর্শনও করতে দিতেন না। সেই জন্য সদগোপ সম্প্রদায় ‘জেহাদ’ ঘোষণা করে বারোয়ারি পুজোর প্রচলন করে। সেই পুজো বন্ধ করতে বাবুরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
কেতুগ্রামের মণ্ডপে আড্ডায় মেতেছেন প্রবীণেরা। নিজস্ব চিত্র।
এলাকার এক প্রবীণ পূর্ণচন্দ্র ঘোষের কথায়, “এক দিকে ইংরেজদের অত্যাচার, অন্য দিকে, তাঁদের প্রতিনিধি বাবু সম্প্রদায়ের লোকজনের সামাজিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা বরাবরই প্রতিবাদ জানিয়েছি। সেখান থেকে এই পুজো শুরু হয়।” প্রবীণরা জানান, পুরোহিতকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করা হয়, যাতে তিনি এই পুজো না করেন। তৎকালীন বাবু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেবচরণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেই সময় জাতিভেদ, কুসংস্কার চরমে ছিল। সেই কারণেই সমাজ ব্যবস্থায় এত ভেদাভেদি ছিল।”
অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা তপোময় ঘোষের কথায়, “বাবু সম্প্রদায়ের একাংশ অব্রাহ্মণদের সমর্থন জানিয়েছিল। সেই কারণে গ্রামবাসীদের পক্ষেও লড়াই করা সহজ হয়েছিল।”
এলাকার বাসিন্দা দুঃখহরণ ঘোষ জানান, এক সময় এই পুজোয় যাত্রা হত। বিজয়ায় মিষ্টি বিতরণ করা হত। এখন অবশ্য আর সে সব নেই। রাজীরলোচন মণ্ডলের কথায়, “আগে কোনও রকমে পুজো হয়। এখন শ্বেত পাথরের মন্দির হয়েছে। কিন্তু সেই প্রাণটাই আর নেই।”
গ্রামের এক বধূ বাণী ঘোষ বলেন, “আগে আমরা বাড়ির ভিতরে থেকে ভোগের জোগাড় করতাম। তবু দেবী দর্শনের সুযোগ ছিল না।” চাপলা বিশ্বাসের কথায়, “আগে শাশুড়ির উপরে রাগ হত। এখন আমাদের বাড়ির বউরা বাইরে যায়, ভাল লাগে।” তাঁদের দাবি, “পুজোর আনন্দটাই এখন উধাও হয়ে গিয়েছে।”
হারিয়ে যাওয়া আনন্দ আর পুজোর প্রাণ খুঁজতে খুঁজতেই সকলে মেতে গেলেন খুনসুটিতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.