|
|
|
|
মণ্ডপে গিয়ে দেবীর মধ্যে মাকে খোঁজে রুম্পারা |
সুশান্ত বণিক • আসানসোল |
মহলায়ার ভোরে রেডিওতে চণ্ডীপাঠ শুনলেই ওরা বুঝতে পারে, পুজো এসে গিয়েছে। তার পর থেকে এক, দুই করে গুনতে থাকে আরও সাতটা দিন। অপেক্ষা করে সপ্তমীর বিকেলটার জন্য। কারণ, ওই দিন তারা সবাই এক সঙ্গে গাড়িতে করে ঠাকুর দেখতে বেরোয়। চোখ ধাঁধানো সব মণ্ডপ, আলোর বাহার দেখে চোখেমুখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় ওরা।
ওরা সবাই বার্নপুরের চেসায়ার হোমের আবাসিক। সকলেই অনাথ। কিন্তু শারিরিক প্রতিবন্ধী। অন্যান্য বারের মতো এ বারও ওই ২৮ জন আবাসিকের সেই রুটিন বদলায়নি। সোমবার, সপ্তমীর বিকেলে শিল্পাঞ্চলের পুজো মণ্ডপগুলিতে মানুষের ঢল নেমেছিল। বাঁধনহারা উৎসবে মেতেছিল ফাতি, পিঙ্কি, রুম্পা, অ্যানসিলারা।
বার্নপুরের এই হোমটির দেখভাল করে ইস্কো স্টিল প্ল্যান্ট। তাদের উদ্যোগেই বহু বছর ধরে এই হোমের আবাসিকদের ঠাকুর দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। তৈরি থাকেন শিল্পাঞ্চলের পুজোগুলির উদ্যোক্তারাও। |
|
নিজস্ব চিত্র |
আকাশের পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আর সবুজ মাঠে কাশফুল দেখলেই রুম্পা বুঝতে পারে দুর্গাপুজো এসে গিয়েছে। সে বলল, “তখন থেকেই মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। ভাবি, সপ্তমীর বিকেল কবে আসবে।” কবে এখানে এসেছিল, কে কোথা থেকে নিয়ে এসেছিল, কিছুই জানে না পিঙ্কি। শুধু জানে, এখানেই থাকতে হবে। জড়ানো শব্দে সে বলে, “আমার ধর্ম কি আমি জানি না। হোমে প্রার্থনার সময় প্রভু যিশুকেই আরাধ্য দেবতা মনে করি। তবুও দুর্গা ঠাকুরের মুখ দেখার সময় মনে হয়, মায়েরা হয়তো এ রকমই হয়।”
শিল্পাঞ্চলে এ বার একাধিক বড় মাপের মণ্ডপ হয়েছে। সেগুলির প্রায় সব ক’টিই দেখে ফেলেছে ফাতি। অন্য বন্ধুদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে মণ্ডপ ঘুরে অবাক চোখে দেখেছে সব। আলোর বাহার দেখে সশব্দে হাততালি দিয়ে হেসে উঠেছে। কখনও আবার হাতের ইশারায় মণ্ডপের উচ্চতা বোঝার চেষ্টা করেছে। এই হোমের আবাসিক অ্যানসিলা ইতোয়ারি নিজের পায়ে হাঁটতে পারে না। কিন্তু ভাল ছবি আঁকতে পারে। সম্প্রতি বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে সিঙ্গাপুরে আয়োজিত প্রতিবন্ধীদের একটি ছবির প্রদর্শনিতে তাঁরও ছবি জায়গা পেয়েছে। তার কথায়, “মহালয়ার ভোর থেকেই আমরা পুজোর আবেগে ভাসতে থাকি। এই হোমের প্রধান সিস্টার ব্রান্ডিমা জানান, এই দিনটি ওদের মেতে ওঠার দিন। সাত দিন ধরে ওরা কেবলই জানতে চায় ইস্কোর গাড়ি কখন আসবে। তাঁর কথায়, “সপ্তমীর সকাল থেকেই ওদের চোখ মুখের রঙ পাল্টে যায়। দুপুরের খাওয়া সেরেই ওদের তৈরি করে বেরিয়ে পড়ি।”
তাই বর্ষা পেরোতেই ওরা খোঁজে আকাশের বুকে সাদা মেঘ। সবুজ মাঠে কাশফুলের দেখা মিললেই বলে ওঠে, সপ্তমী আর দূরে নেই! |
|
|
|
|
|