|
|
|
|
তাঁদের মণ্ডপেই বেশি ভিড়, দাবি করছেন আয়োজকেরা |
নীলোৎপল রায়চৌধুরী • জামুড়িয়া |
মায়াপুরের মন্দির থেকে জৈন মন্দির। কাল্পনিক মন্দির থেকে গির্জা। নেপালের পশুপতি মন্দিরের অনতি দূরে অভিজাত প্রাসাদ। এ যেন থিমের প্রতিযোগিতায় নেমেছে জামুড়িয়া ও পাণ্ডবেশ্বরের সর্বজনীন পুজোগুলি।
১৯৪৪ সালে ছোটেলাল কেশরী সিংহ শ্রী দুর্গা সেবা সমিতি সর্বজনীন পুজো প্রচলন করেন। আগে সামনে শ্মশান ছিল। সেখানে অবশ্য এখন প্রাথমিক স্কুল তৈরি হয়েছে। আগে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বর্ধমানের মহারাজা। প্রথম বছর পুজোর পরেই জামুড়িয়া বাজার এলাকার বাসিন্দাদের সহায়তায় পার্বতী মন্দির গড়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী বিসর্জন দেওয়া যাবে না। রবিবার মন্দিরের সামনে হাট বসে। এর ফলে ওই দু’দিনের মধ্যে কোনও দিন বিজয়া দশমী পড়লে প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন নিজেদের মতো করে ঠিক করে নেয় পুজো কমিটি। এই ঐতিহ্যপূর্ণ সর্বজনীনে আছে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য। আয়োজকেরা জানান, প্রথম বছর পুজোর আগে মণ্ডপের কাছে একটি বেল গাছ বেড়ে উঠতে শুরু করে। প্রথম বছর থেকে ষষ্ঠীর দিন পুজো হয় বেলগাছে। আয়োজক সংস্থার তরফে বিশ্বনাথ যাদব বলেন, “প্রতিমা নিরঞ্জনই আকর্ষণ। ওই দিন মহাবীর আখড়ার কুশলীরা শিল্প প্রদর্শন করেন। বিকেল ৩টে থেকে উৎসব শুরু হয়ে যায়। বাসিন্দাদের চাহিদাতেই বৃহস্পতিবার বা রবিবার দশমী হলে, পরের দিন নিরঞ্জনের আয়োজন করি আমরা।” বিসর্জনের সময়ে মহাবীর আখড়ার কলা প্রদর্শন দেখতে বহু মানুষের ভিড় হয়। কেন্দা ফুটবল মাঠ সর্বজনীন এ বার মায়াপুরের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হয়েছে। দৃশ্যায়নে রয়েছে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে নৌকায় দেবীর আগমন। ইস্ট কেন্দা কোলিয়ারি সর্বজনীনের বয়স ৩৪ বছর। এ বার নেপালের পশুপতি মন্দিরের আদলে ফুটে ওঠা মণ্ডপ নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। পুজো কমিটির সম্পাদক তথা এলাকার তৃণমূল নেতা তারাশঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, মায়ের আগমনের দৃশ্য দেখতে ষষ্ঠীতে ঢল নেমেছিল মানুষের। এই পুজোর অনতিদূরেই নিউ কেন্দা কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপ। ৩৩তম বর্ষে অভিজাত প্রাসাদের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। পরাশিয়া জনকল্যাণ সমিতির মণ্ডপ তৈরি হয়েছে জৈন মন্দিরের অনুকরণে। আয়োজকদের দাবি, ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে মানুষ তাঁদের মণ্ডপেই বেশি সময় ব্যয় করছেন।
পাণ্ডবেশ্বর বাজার এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদায় শুরু হওয়া বিধান স্মৃতি পাঠাগার সর্বজনীন পুজো এ বার ৪২ বছরে পা দিল। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে নির্মিত মণ্ডপে সাবেক প্রতিমা। উদ্যোক্তারা জানান, আগে এই পুজোর জন্য মূর্তি তৈরি করতেন যামিনী পাল। পরে তাঁর ছেলে চন্দন পাল এই মূর্তি গড়েছেন। গত পাঁচ বছর ধরে কাটোয়ার শিল্পী জীবন ভাস্করের হাতে তৈরি মূর্তি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা জিতেন চট্টোপাধ্যায় জানান, পাণ্ডবেশ্বর গ্রামে তিনটে পারিবারিক পুজো হয়। বহু মানুষই সেখানকার পুজোয় যোগ দিতে পারতেন না। পুষ্পাঞ্জলী দিতে যেতে হত দুই কিলোমিটার দূরে ডলুরবাঁধ কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপে। বাজার এলাকার মানুষজনের চাহিদাতেই তাই এই পুজো চালু হয়।
খোট্টাডিহি কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপ এ বার কাল্পনিক মন্দিরের আদলে। আয়োজক সংস্থার সদস্য দীনেশ ভার্মা জানান, চমৎকার আলোকসজ্জার মধ্যে দেবীর আগমন দেখতে বহু দর্শনার্থী জড়ো হচ্ছেন। এ বার পুজোর প্রথম বর্ষে থিমের দৌড়ে সামিল হয়েছে পাণ্ডবেশ্বর হরিজন সর্বজনীনও। মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে তাদের মণ্ডপ। পাণ্ডবেশ্বর কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপেও দেখা গিয়েছে মানুষের লম্বা লাইন। গির্জার আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছেন উদ্যোক্তারা। |
নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|