|
|
|
|
কড়াই-হাতলে তৈরি প্রতিমা, মণ্ডপে বালুচরি |
সুব্রত সীট • দুর্গাপুর |
‘স্ক্র্যাপ’। এই একটি শব্দ নিয়ে মাথা ব্যথার অন্ত নেই কোথাও। এর থেকে রেহাই পাওয়ার রাস্তা একটাই। নতুন করে কী ভাবে তা কাজে লাগানো যায় তা খুঁজে বের করা। দুর্গাপুরের ডিপিএল বি জোন আদিবেদী পুজো কমিটি সেই কথাটিই বলতে চায় দর্শনার্থীদের। কমিটির সম্পাদক উমাপদ দাসের কথায়, “বিভিন্ন পরিত্যক্ত সামগ্রী পরিবেশের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সে সব কাজে লাগিয়েই এ বার দেবীর প্রতিমা গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”
ডিপিএল বি জোন আদিবেদীর প্রতিমা ও মণ্ডপ রূপায়ণের দায়িত্ব পালন করেছেন শহরের পরিচিত শিল্পী সোমনাথ অধিকারী। স্ক্র্যাপ, দশাবতার তাস, বিষ্ণুপুরের বালুচরি শাড়ি ও খাগড়ার কাঁসার বাসন ব্যবহার করে তিনি নিজস্ব চিন্তা ভাবনার বাস্তব রূপ দিচ্ছেন মাস খানেক ধরে। শিল্পী জানিয়েছেন, এ বারের থিম, ‘দশাবতারের আঙিনায় ‘ভাঙা’ দিয়ে গড়া দেবী দুর্গা’। প্রতিমা গড়া হয়েছে সাইকেল-মোটরবাইকের যন্ত্রাংশ, কড়াই, দরজার হাতল, দুধের ক্যান প্রভৃতি ব্যবহার করে। তার উপরে থাকছে ডাকের সাজ। মণ্ডপ গড়তে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫০টি বিশাল আকৃতির দশাবতার তাস, খাগড়ার কাঁসার বাসন, বিষ্ণুপুরের বালুচরি শাড়ি। মণ্ডপের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে টেরাকোটার তৈরি ৬ ফুট উচ্চতার দু’টি হাতি। ফাইবারের তৈরি ২০টি হাতি রাখা হয়েছে ভিতরেও। পুজোর উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এ বার তাঁদের পুজোর ৬৫ তম বর্ষ। দুর্গাপুরে দূষণ দস্যুর হাত কত শক্ত, এর আগে থিম হিসাবে তা তুলে ধরে শহরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তাঁরা। এ বার স্ক্র্যাপ দিয়ে মণ্ডপ গড়েও তেমনই সাড়া পাবেন বলে তাঁদের আশা। |
|
ডিপিএল বি-জোন আদিবেদী পুজোর প্রতিমা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
সে অর্থে হয়তো বিগ বাজেটের পুজো নয়। তবে স্বকীয়তায় শহরের বড় পুজোগুলির পাশে জায়গা করে নিয়েছে বেশ কিছু পুজো। যেমন জয়দেব সর্বজনীন। পিছিয়ে নেই শ্যামপুর আদিবেদী বা ডিসিএল আদিবেদীর পুজোও। ছিমছাম মণ্ডপ আর সাবেকিয়ানা সম্বল করে বড় মণ্ডপগুলির সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে দর্শক টানছে এই পুজোগুলিও।
ইস্পাত নগরীতে বরাবরের মতোই এ বারও জাঁকজমক করেই পুজো করছে জয়দেব সর্বজনীন পুজো কমিটি। এ বার তাঁরা গড়েছেন ডিজনি ওয়ার্ল্ড। গড়ে তোলা হয়েছে সেই বিখ্যাত গুহামুখ। মণ্ডপের আনাচে কানাচে উঁকি মারছে মিকির দল। আজকের সমস্যা সঙ্কুল জীবনে মণ্ডপে এসে কিছুক্ষণের জন্য খুদেদের পাশাপাশি বড়রাও হয়তো হারিয়ে যাবেন মিকি-মিনির রাজ্যে, এমনই ভেবেছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক দীপ্তেশ দেবনাথ জানিয়েছেন, এ বার পুজোর ৪৮ তম বর্ষ। তাঁর দাবি, গত কয়েক বছরে শহরের অন্যতম সেরা থিম পুজোর স্বীকৃতি পেয়েছেন তাঁরা।
শ্যামপুর আদিবেদী পুজো ৫০ বছরে পা দিল। বিগত কয়েক বছরের মতো এ বারও কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়া হয়েছে। গত বছর তাঁরা ফোম দিয়ে মণ্ডপ গড়েছিলেন। এ বার অবশ্য তাঁদের মণ্ডপ গড়ে উঠেছে চট দিয়ে। পুজো কমিটির পক্ষে সজল ঘোষাল, সুধাময় রায়’রা জানিয়েছেন, দুর্গাপুরে দূষণ বেড়ে গিয়েছে গত কয়েক বছরে। তাই তাঁরা এ বার চট দিয়ে মণ্ডপ গড়ে সচেতনতা গড়তে চাইছেন। মণ্ডপ তৈরি করেছেন শ্যামপুরের শিল্পী পঙ্কজ পাল। প্রতিমা এসেছে বেনাচিতি থেকে। প্রতিমায় বিশেষত্ব দিয়েই বাজিমাত করতে চাইছেন তাঁরা। ডিসিএল আদিবেদী পুজোর এ বার ৪৩ তম বর্ষ। মণ্ডপ ও প্রতিমা সাবেক। তবে আলোকসজ্জার উপর জোর দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সংস্থার আধিকারিক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার খুদেদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের হাতে কিছু উপহার তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
অশোক অ্যাভিনিউ-এ বান্ধব সমাজের পুজোর এ বছর ৫০ তম বর্ষ। শুধু খড় দিয়েই প্রতিমা গড়েছেন তাঁরা। ব্যবহার করা হয়নি কোনও রং। |
|
|
|
|
|