সাবধান, ঝড় উঠেছে সূর্যে!
কিন্তু সে আর নতুন কথা কী? সূর্যের ভিতর ছোটবড় ঝড় তো লেগেই থাকে। তবু সৌর ঝড় নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের আবিষ্কৃত তথ্য চিন্তায় ফেলে দিয়েছে গোটা বিজ্ঞানীমহলকে। বিপদের মুখে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি। ক্ষতি হতে পারে মহাকাশচারীদের, এমনকী, বিমানযাত্রীদেরও। যার জেরে বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে আমাদের গ্রহের অর্থনীতি।
হঠাৎ কী এমন হল, যা নিয়ে এত উদ্বেগ?
পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন কণার স্তর। নাম ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’। এমনিতেই এই স্তরের বিকিরণ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশচারীদের বাঁচাতে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়। সৌর ঝড় এই স্তরের ক্ষতি করার সেই ক্ষমতা বহু গুণ বাড়িয়ে দেবে। সম্প্রতি ‘স্পেস ওয়েদার’ নামের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য। |
সূর্যের মধ্যে এখন বিক্রিয়ার হার তুঙ্গে। ১১ বছরের সৌর চক্র শেষ। আর এই মুহূর্তে সূর্যের তেজস্ক্রিয় বিকিরণের হার এতটাই বেশি হয়ে উঠছে যে প্রতি মুহূর্তে বাড়িয়ে চলেছে ওই স্তরের ক্ষমতা। মুখ্য গবেষক উরি স্প্রিটসের মতে, সৌর ঝড় বিশাল আকার ধারণ করলে ভ্যান অ্যালেনের ভিতরের স্তরের বিকিরণের মাত্রা ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ কৃত্রিম উপগ্রহ নষ্ট হয়ে যেতে পারে কয়েক বছরের মধ্যেই।
ভ্যান অ্যালেন স্তরের দুটি অংশ রয়েছে। বাইরের স্তরটি ইলেকট্রন কণায় তৈরি। আর ভিতরের স্তরটি প্রোটন ও ইলেকট্রন কণার মিশ্রণ। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, সৌর ঝড়ের প্রভাব শুধুমাত্র বাইরের ইলেকট্রন স্তরটিতেই পড়তে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, ‘সুপার স্টর্ম’-এর হাত থেকে না-ও বাঁচতে পারে ভিতরের স্তরটি। এর ফলে পৃথিবীর কাছাকাছি অংশেও বিকিরণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে বিপজ্জনক ভাবে।
স্প্রিটসের হুঁশিয়ারি, বিপদ মোটেই সাময়িক নয়। তাঁর দাবি, “ভ্যান অ্যালেনের ভিতরের স্তরের এই তীব্র বিকিরণ স্থায়ী হবে আগামী এক দশক। সৌর ঝড় কমে যাওয়ার বহু বছর পরেও এর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে।” তা হলে কি হঠাৎ করেই এক দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে পৃথিবীর পাঠানো উপগ্রহগুলো? না। এক ধাক্কায় সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে না বলেই আশা স্প্রিটসের। হাতে রয়েছে কয়েক বছর। তবে বিপদের আঁচ পেলেও বিপদ থেকে বাঁচার নিশ্চিত উপায় জানা নেই বিজ্ঞানীদের। স্প্রিটসের স্পষ্ট জবাব, “বলা খুবই কঠিন।” তবে এখনই আশা ছাড়ছে না স্প্রিটস ও তাবৎ বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। |