ক্ষোভ বাসিন্দাদের
পরিষেবা ডুমুরের ফুল
পুনর্বাসনের সময় দেওয়া হয়েছিল একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ৩০ বছর কেটে গিয়েছে, আজও বাস্তবায়িত হয়নি একটি প্রতিশ্রুতিও। পাশাপাশি ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবাও মেলে না। আবর্জনা সাফাই থেকে আবাসনের মেরামতি সব কাজই করতে হয় নিজেদের উদ্যোগে। এমনই অভিযোগ হাওড়ার ডুমুরজলা হাউসিং কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের।
আশির দশকের গোড়ার দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু তৈরির সময় শিবপুর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা যেমন, ক্ষেত্র ব্যানার্জি লেন, সীতানাথ ব্যানার্জি লেন, কাজীপাড়া ইত্যাদির বহু জমি ও বাড়ি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার, হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা ও এইচআরবিসি। যে সব বাড়ি ভাঙা হয়েছিল সেখানকার বাসিন্দা পরিবারগুলির সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী পুনর্বাসন প্রকল্পে ডুমুরজলা আবাসনে এক কামরা, দুই কামরা ও তিন কামরার ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা ফ্ল্যাট নিতে চাননি তাঁদের এককালীন টাকা দেওয়া হয়েছিল। আর যাঁরা ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে চুক্তিপত্রে বলা হয়েছিল ৪০ বছর ধরে ফ্ল্যাটের ভাড়া দিতে হবে। ভাড়া নির্ধারিত হবে ফ্ল্যাটের আয়তন অনুযায়ী। ৪০ বছর পরে ফ্ল্যাটের মালিকানা তুলে দেওয়া হবে বাসিন্দার হাতে। তবে কেউ যদি আগেই সব টাকা এক সঙ্গে মিটিয়ে দিতে চান তারও সুবিধা থাকবে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজ্যের অন্যতম বড় এই পুর্নবাসন প্রকল্পে স্কুল, কমিউনিটি হল, ব্যাঙ্ক, সুপার মার্কেট তৈরি সহ বিভিন্ন উন্নত পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার একটিরও কাজ হয়নি।
পুনর্বাসনের পর থেকে কোনও মেরামতি না হওয়ায় অধিকাংশ আবাসনেরই হতশ্রী অবস্থা। কোথাও ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ে, কোথাও আবার বারান্দার ছাদ ভেঙে পড়েছে। আবাসনের দেওয়ালে গজিয়েছে আগাছা। অগত্যা নিজেদের খরচেই কিছু বাসিন্দা তাঁদের ফ্ল্যাটের মেরামতি করিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও রয়েছে সমস্যা। এক বাসিন্দা সুজিত ঘোষ বলেন, “মেরামতির জন্য অনেক সময় বাড়ির নকশার প্রয়োজন হলেও তা পাওয়ার উপায় নেই। এইচআইটিকে বলেও আজও বাড়ির নকশা পাওয়া যায়নি।” আর এক বাসিন্দা শৈলেন্দ্রনাথ কুণ্ডু বলেন, “এমনই ভগ্নপ্রায় অবস্থা যে, অধিকাংশ আবাসনেরই চার তলার ছাদগুলিকে দেখলে মনে হবে আলাদা করে বসানো হয়েছে। প্রয়োজনে তুলে নেওয়া যাবে।” কোনও কোনও বিল্ডিং আবার এক দিকে হেলে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে বহুবার এইচআইটি কে জানিয়েও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের।
পানীয় জলের সমস্যাও মারাত্মক। পদ্মপুকুর জলের লাইন থেকে রাস্তার ধারের আবাসনগুলিতে পর্যাপ্ত জল পাওয়া গেলেও বাকি আশি শতাংশ আবাসনে পানীয় জল পাওয়াই যায় না। বাসিন্দাদের কথায়, এক প্রকার বাধ্য হয়েই রাতের অন্ধকারে জলের মূল পাইপ লাইন থেকে মোটর লাগিয়ে জল চুরি করে রিজারভার ভর্তি করতে হয়। না হলে রাস্তার কলই ভরসা। সমস্যা রয়েছে বর্ষাকালেও। ভারী বৃষ্টি হলেই আবাসনের এক তলায় জল ঢুকে যায়। রাস্তায়ও এক কোমর জল জমে যায়। বাসিন্দা বিদিশা বসু বলেন, “বর্ষায় ঘরে জল ঢুকে রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায়ও বেরোনো যায় না।”
রাস্তাঘাটের অবস্থাও বেহাল। বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘ দিন পিচ না হওয়ায় অধিকাংশ রাস্তাই এবড়োখেবড়ো। রাতে রাস্তাগুলিতে আলো জ্বলে না। বাসিন্দা প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “অন্ধকার রাস্তায় চলাফেরা করা বিপজ্জনক। নিরাপত্তার সমস্যা হয়ে যায়।” সম্প্রতি আবাসনটিতে গিয়ে দেখা গেল রাস্তার ধারের কয়েকটি ভ্যাট থেকে আবর্জনা উপচে পড়েছে রাস্তায়। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় অধিকাংশ আবাসনের পিছনের নিকাশি নালায় সারা বছরই জমে থাকে নোংরা জল। একটি সুপার মার্কেট থাকলেও তা জবরদখল হয়ে গিয়েছে।
ডুমুরজলা আবাসনে প্রায় ১১ হাজার বাসিন্দা বসবাস করেন। তাঁদের ক্ষোভ, নতুন সেতু তৈরির সময় শহরের উন্নয়নের কথা ভেবেই তাঁরা জমি, বাড়ি ছেড়ে এই আবাসনে এসেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁদের আবাসনে কোনও উন্নয়নের আলো জ্বলল না। হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি) এবং হাওড়া পুরসভা কেউই আবাসিকদের পরিষেবার দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। যদিও আবাসনটি হাওড়া পুরসভার ৪২ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেকেরই রয়েছে ভোটাধিকার। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ইতিমধ্যেই যে সব আবাসিক ৪০ বছরের টাকা একসঙ্গে শোধ করে দিয়েছেন তাঁদের নামে এইচআইটি ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দিলেও পুরসভা থেকে মিউটেশন করা যাচ্ছে না। এক বাসিন্দা অশোক আদিত্য বলেন, “রেজিস্ট্রির পরে মিউটেশন করতে গিয়েও পারলাম না। পুরসভা বলছে, এই জমি এখনও জলা হিসেবেই নথিভুক্ত রয়েছে। তাই মিউটেশন সম্ভব নয়। এখন আমরা কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না।”
এইচআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার শিখরেশ দত্ত বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী আবাসন মেরামতির দায়িত্ব আবাসিকদের। তবে কিছু আবাসিক ভাড়াই দেন না। এটা ঠিক, ওখানে এখনও অনেক সমস্যাই রয়েছে। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কাজও হয়নি। তবে কিছু সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” নাগরিক পরিষেবার বিষয়ে তিনি বলেন, “পুরসভা তো আবাসিকদের থেকে ট্যাক্স নিয়ে তাঁদের ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা দিতে পারেন। কিন্তু কেন ওঁরা কিছু করছেন না তা বলতে পারব না।”
মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “এইচআইটি কমপ্লেক্সে পুরসভার কিছু করার নেই। তবে বাসিন্দারা এবং এইচআইটি কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে দেখা হবে।”
কিন্তু দীর্ঘ ৩০ বছরেও যে আবাসনে কোনও উন্নয়নমূলক কাজই হয়নি, সেখানে নতুন রূপে আদৌ আর কোনও কাজ হবে কি না সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন আবাসিকদের কাছে।

ছবি: রণজিৎ নন্দী


হাওড়া পুরসভার তৈরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত যাত্রী ছাউনিটির পিছনের বোর্ডটি খোয়া গিয়েছে।
হাওড়ার জেলাশাসকের দফতরের সামনের আইল্যান্ডটির কাস্ট আয়রনের রেলিংয়ের একাংশ চুরি হয়ে
গিয়েছে। পুলিশে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত সংস্থাকে জায়গাগুলি সারিয়ে দেওয়ার
নির্দেশ দিয়েছেন হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল। ছবি: রণজিৎ নন্দী।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.