|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
ফুটে ওঠেনি কোনও সামাজিক দায়বোধ |
সম্প্রতি বেঙ্গল পেন্টার্স আয়োজন করেছিল একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
বেঙ্গল পেন্টার্স দলটি তৈরি হয়েছিল ২০০৮ সালে। তার পর থেকে প্রতি বছর তাঁরা নিয়মিত প্রদর্শনী করে আসছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল তাঁদের একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। এতে অংশ নিয়েছেন আটজন চিত্রী ও একজন ভাস্কর। এঁদের মধ্যে একজন স্বশিক্ষিত। বাকি সকলেই কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের স্নাতক। ১৯৯০-এর দশকের বিভিন্ন সময়ে তাঁরা পাশ করেছেন। তার পর কেউ কেউ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। প্রত্যেকেই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শিল্পচর্চা করে আসছেন। কিন্তু এ বারের প্রদর্শনী দেখে মনে হল, তাঁদের অনেকেই ভাবনা বা আঙ্গিকে নিজস্ব কোনও পরিসর তৈরি করতে পারেননি। কোনও আদর্শগত ভিত্তি অথবা সামাজিক ও নান্দনিক দায়বোধ নেই অনেকের কাজেই।
পরিকল্পনা ও উপস্থাপনাতেও পেশাদারিত্বের একান্ত অভাব। দায়সারা ভাবে দেওয়ালে কিছু ছবি ঝুলিয়েছেন। তাতে কোনও ক্যাপশন নেই। ফলে দর্শকের পক্ষে ছবিটি সম্পূর্ণ অনুধাবন করা কঠিন হয়ে পড়ে। একটি স্মারকপত্র প্রকাশ করেছেন। তাতে প্রত্যেকের একটি করে ছবি বা ভাস্কর্য ছাপা হয়েছে। তার অনেকগুলি কাজই প্রদর্শনীতে নেই। আজকাল প্রদর্শনীর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা ক্রমশই অত্যন্ত পরিশীলিত হয়ে উঠছে সর্বত্র। সেটা না থাকলে শিল্পের জগতে টিকে থাকা মুশকিল। কী ভাবে একটি প্রদর্শনী করা উচিত নয়-- আলোচ্য প্রদর্শনীটি হচ্ছে এরই একটি দৃষ্টান্ত। এর মধ্যে দু’একজনের কাজে অবশ্য কিছু সদর্থক ভাবনার পরিচয় ছিল।
ভাস্কর স্বপন পাল বিশ্বভারতী থেকে ভাস্কর্যে স্নাতকোত্তর করেছেন। তাঁর পাঁচটি কাজ কাঠ এবং কাঠ ও ধাতুর মিশ্রমাধ্যমে করা। মানবিক অবয়বকে তিনি জঙ্গম ছন্দে বিমূর্তায়িত করেছেন। কোনও কোনও কাজে, যেমন শুধু ব্রোঞ্জের নৌকা আকৃতির মানব-মানবীর রূপায়ণে কিছু রোমান্টিক অনুভবের পরিচয়ও পাওয়া যায়। এ সমস্ত গুণাবলি সত্ত্বেও তাঁর কাজে রূপাবয়বের স্বাতন্ত্র্য ও নান্দনিক দায়বোধের অভাব রয়েছে। |
|
শিল্পী: মধুছন্দা মজুমদার |
কাশীনাথ বসুর তিনটি অ্যাক্রিলিকে আঁকা ছবিতে ভারতীয় রীতির অনুশীলন লক্ষণীয়। গণেশ এবং দুর্গা ও গণেশ বিষয়ের রচনা দুটিতে বিশেষ নান্দনিক মাত্রা এনেছে। কিন্তু তাঁর রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক ছবিটিতে সেই নান্দনিক সংহতি নেই।
কৃপাসিন্ধু ভট্টাচার্য তিনটি ছবি এঁকেছেন অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে। নিসর্গকে তিনি বিমূর্তায়িত করেছেন। চিত্রক্ষেত্রকে তিনি দ্বিমাত্রিক জ্যামিতিতে বিভাজিত করেছেন। কিন্তু গভীরতর কোনও অনুভবের স্পন্দন জাগাতে পারেননি।
সন্দীপন ভট্টাচার্য স্বশিক্ষিত শিল্পী। সরকারি স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর চারটি ছবির মধ্যে দুটি নিসর্গমূলক। একটির বিষয় মা ও শিশু। আঙ্গিক দুর্বল হওয়ার জন্য বিমূর্তায়ন পদ্ধতি কোনও অভিঘাত সৃষ্টি করেনি।
মধুছন্দা মজুমদারের চারটি ছবিই নিসর্গ থেকে বিমূর্তায়িত রচনা। তিনি কী আঁকতে চান সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। আঙ্গিকও দুর্বল।
বিপুল বিশ্বাস মণ্ডল চারটি ছবিতে পশু ও মানুষের সমন্বিত রূপাবয়বকে অভিব্যক্তিবাদী রীতিতে ভেঙে বা বিকৃত করে অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত যন্ত্রণাকে রূপায়িত করেছেন। এই আঙ্গিক বহুচর্চিত হলেও নিবিষ্ট অনুশীলনে স্বাতন্ত্র্য আনতে পারবেন।
সন্দীপ বাজপেয়ীর আটটি ড্রয়িং খুব বলিষ্ঠ না হলেও সহজবোধ্য। কিন্তু তাঁর তিনটি ডিজিটাল প্রিন্টের ছবি অকারণ জটিলতায় ভারাক্রান্ত।
বিপদভঞ্জন শিকদার ছ’টি ছবি এঁকেছেন অ্যাক্রিলিক এবং তেলরং ও অ্যাক্রিলিকের মিশ্রমাধ্যমে। সব ছবিই মানবীর মুখের অভিব্যক্তিধর্মী উপস্থাপনা, যা তাঁদের ভিতরের দুঃখ ও বিক্ষোভকে বের করে আনে। তিনিও বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। তবু ছবিতে নিবিড় কোনও মূল্যবোধের সন্ধান নেই। অভিজিৎ ভট্টাচার্যের ছবি সহজ সরল, রোমান্টিক ভাবালুতায় পূর্ণ। কোনও যুবতী উপুড় হয়ে শুয়ে আছে বিছানায় বা একটি মেয়ে হাঁটুতে মাথা রেখে বসে আছে। এ রকম তাঁর বিষয়। তাঁদের আনন্দ বা বিষাদ কোনও সামগ্রিক জীবনবোধে স্পন্দিত হতে পারে না। |
|