|
|
|
|
|
এই বাজারে খুব সজাগ
থাকুন লগ্নির ব্যাপারে
অমিতাভ গুহ সরকার |
|
অস্থিরতা কমার কোনওই লক্ষণ নেই। শেয়ার বাজার নেমেই চলেছে। লাফিয়ে উঠছে-পড়ছে সোনা রুপোর দাম। খাদ্যপণ্যের বাজার দর লাগাম ছাড়া। বাড়ছে ঋণের উপর সুদের হার। এক নাগাড়ে নেমে চলেছে মিউচুয়াল ইউনিটের ন্যাভ। সব মিলিয়ে দিশেহারা মধ্যবিত্ত। কবে অবস্থার পরিবর্তন হবে, তারও কোনও ইঙ্গিত নেই।
একটার পর একটা বাঁধ ভাঙছে শেয়ার বাজারে। ১৬ হাজারকেও ধরে রাখতে পারেনি সেনসেক্স। বিশ্ব অর্থনীতির যা পরিস্থিতি, তাতে সূচক যে আরও পড়বে না তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। ফলে বহু শেয়ারের দাম লোভনীয় জায়গায় পৌঁছলেও সাহস করে সওদা করতে পারছেন না অনেকেই। তবে সূচক এক নাগাড়ে পড়লেও, সব শিল্পের শেয়ার একই অনুপাতে নামেনি। সব থেকে বেশি মেদ ঝরেছে তথ্যপ্রযুক্তি এবং ব্যাঙ্কিং শেয়ারের। একই বাজারে আবার পতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে কিছু শেয়ার। এই তালিকায় স্থান পাবে বজাজ অটো, হিরো হোন্ডা, ভারতী, আইটিসি, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, ক্যাস্ট্রল, এম অ্যান্ড এম ইত্যাদির মতো কিছু শেয়ার। হেভিওয়েটদের মধ্যে ভাল রকম পতন হয়েছে ইনফোসিস, টিসিএস, স্টেট ব্যাঙ্ক, টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি শেয়ারের। এই সব শেয়ারই থাকে বেশিরভাগ লগ্নিকারীর পোর্টফোলিওতে। ফলে ভাল রকম নেমেছে প্রত্যেকের লগ্নির মোট বাজার দর। দাম নেমেই চলেছে মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ শেয়ারগুলির। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক আতঙ্কের পরিবেশ।
এক নাগাড়ে বাড়ার পর সোনার দরে সামান্য সংশোধন দেখা দিয়েছিল গত সপ্তাহে। নেমেছিল রুপোর দরও। শুক্রবার অবশ্য আবার বেড়েছে ধাতু দু’টির দাম। ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের বাইরে অনেকেই এখন লগ্নি করছেন এই দু’টিতে। শেয়ার ও ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়ালের জগতে এখন ‘নো এন্ট্রি’। সময়টা ঠিক মনে করে এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে ছেড়েছে ‘এসবিআই গোল্ড ফান্ড’ নামে একটি স্বর্ণ প্রকল্প। এতে সংগৃহীত অর্থ লগ্নি হবে এসবিআই গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড প্রকল্পে। প্রকল্পটির বড় সুবিধা হল ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট না থাকলেও লগ্নি করা যাবে এই স্বর্ণ প্রকল্পে। ন্যূনতম লগ্নি মাত্র ৫০০০ টাকা। লগ্নি করা যাবে এসআইপি পদ্ধতিতেও। ন্যূনতম মাসিক কিস্তি এ ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ অতি অল্প লগ্নিতেও পরোক্ষ ভাবে স্বাদ মেটানো যাবে সোনা ক্রয়ের। ইস্যু খোলা থাকবে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
বর্তমান বাজারে শেয়ার বিক্রির অর্থ লোকসান মেনে নেওয়া। এই বাজারে খারাপ শেয়ার হাতে থাকলে তা বিক্রি করে ভাল শেয়ারে লগ্নির কথা ভাবা যেতে পারে। লগ্নিযোগ্য তহবিল থাকলে প্রতিটি পতনে ২টি, ৫টি করে ভাল শেয়ার সংগ্রহ করা অর্থাৎ এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করা যেতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির পরিকল্পনা থাকলে ঋণ নির্ভর অর্থাৎ ডেট ফান্ড বা ব্যালান্সড ফান্ডে লগ্নি করা এই বাজারে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এসআইপি অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে ভাল সুবিন্যস্ত মিউচুয়াল প্রকল্পে। প্রতিটি পতনে অল্প অল্প করে লগ্নি করা যায় সোনাতেও। অর্থাৎ খুবই সজাগ থাকতে হবে এই বাজারে। সময়টা যেন খুব খারাপ রাস্তায় বাসে ভ্রমণের মতো। অনবরত ঝাঁকুনির কারণে অপনাকে খুব শক্ত করে ধরে বসে থাকতে হবে। এরই মধ্যে যখনই একটু ভাল রাস্তা আসবে কাজ সারতে হবে চটজলদি।
বর্তমান বাজারে প্রবীণ নাগরিকদের খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ এখন ভাল। ছোট এবং মাঝারি মেয়াদে সঞ্চয়ে সুদ বাড়িয়েছে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক। এই বাজারে ঋণ এড়াতে পারলে ভাল। কারণ সুদ চড়া। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে চেষ্টা করুন সুদহীন মেয়াদের মধ্যেই ধারের টাকা শোধ করতে। ব্যাঙ্কের তুলনায় বেশি সুদে আমানত সংগ্রহের পথে নেমেছে অনেক সংস্থা। ভাল মতো যাচাই করে এগুলিতে টাকা রাখার সিদ্ধান্ত নিন। বাড়ি ও গাড়ি ঋণে যাঁরা চড়া সুদ গুনছেন, তাঁরা ব্যাঙ্ক আমানত ভাঙিয়ে বা মেয়াদ শেষে অন্য সূত্র থেকে অর্থাগম হলে, তা দিয়ে ঋণের বোঝা কিছুটা কমিয়ে সুদ বাবদ খরচ কমানোর কথা ভাবতে পারেন। |
|
|
|
|
|