প্রবন্ধ ১...
আর বাষট্টি বছরের পুরনো সেই চিঠিটা?
শ্চিমবঙ্গের জন্য টাকা আদায় করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তাঁরই জোটসঙ্গী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক হাত লড়ে গেলেন, তখন কি তাঁর ইতিহাসের কথা মনে পড়েছিল? বাষট্টি বছরের পুরনো সেই চিঠিটার কথা ১৯৪৯ সালের পয়লা ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় দেশের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে যে চিঠি লিখেছিলেন? চিঠির বয়ান আশ্চর্য রকম কড়া। ‘...আপনার সম্ভবত ধারণা হয়েছে যে আপনার সরকার এই রাজ্যকে ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য হিসেবে দিয়েছে। ...১৯৪৮-৪৯ এবং ১৯৪৯-৫০ কেন্দ্রীয় সরকার এই রাজ্যকে মোট তিন কোটি টাকা সাহায্য দিয়েছে। আর ঋণ পাঁচ কোটি টাকা। ...১৬ লক্ষ উদ্বাস্তুর জন্য দু’বছরে মাথাপিছু কুড়ি টাকা... অনেক মনে হচ্ছে? পশ্চিম পাকিস্তানের খাতে দেওয়া সাহায্যের সঙ্গে তুলনা করার পরেও?’
আজকে এই ইতিহাসের কথা তোলার কারণ শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই নয়। বরং, সেই লড়াই ইতিহাসের এক আশ্চর্য সমাপতন। ১৫ অগস্ট দিনটা শুধু ভারতের স্বাধীনতা দিবস নয়, পশ্চিমবঙ্গের জন্মদিনও বটে। দেশভাগের ফলে তৈরি হওয়া নতুন রাজ্য। সেই রাজ্যকে লড়তে হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নিজের প্রাপ্য আদায়ের জন্য। আজ যেমন কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দেরই শরিকি সরকার, সেই দিনও কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকারই ছিল। ইতিহাস সাক্ষী, সে দিন পশ্চিমবঙ্গ তার ন্যায্য পাওনা আদায় করতে পারেনি। আজ যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যের জন্য ফের কেন্দ্রের কাছে দরবার করছেন, তখন সেই সাড়ে ছয় দশকের পুরনো ইতিহাস স্মরণ করা ভাল।
সুহৃদ এবং প্রতিপক্ষ। বিধানচন্দ্র রায় ও জওহরলাল নেহরু।

নেহরু বিধানচন্দ্রকে জানিয়েছিলেন, সত্যিই কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য অনেক বেশি টাকা খরচ করেছে। এই অসমতার কারণ হিসেবে নেহরু বলেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দেশভাগের পরের দু’মাসে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট লক্ষ উদ্বাস্তু এই পারে পৌঁছন। সেই ঘটনার অভিঘাত কেন্দ্রকে কিছু করতে বাধ্য করে। যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান থেকে কখনও এক ধাক্কায় এত মানুষ পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছননি, তা-ই কেন্দ্রও কখনও সমস্যাটির তীব্রতা অনুভব করেনি। যুক্তিটি আপাতদৃষ্টিতে গ্রাহ্য। আপাতদৃষ্টিতেই। কোনও ঘটনার অভিঘাত প্রধানমন্ত্রীর আচরণকে সাময়িক ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট করতেই পারে। কিন্তু, সেই পক্ষপাত যদি সাময়িক না হয়ে পাকাপাকি হয়? যদি প্রধানমন্ত্রীর আচরণে বার বার পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে পক্ষপাত প্রকট হয়ে ওঠে?
পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে এ পারে উদ্বাস্তু আসবেই, তাকে ঠেকানোর উপায় নেই এই কথাটি মেনে নিতে কোনও কারণে জওহরলালের বিশেষ আপত্তি ছিল। দেশভাগের সাত মাসের মধ্যেই, ১৯৪৮ সালের ২২ মার্চ জওহরলাল একটি চিঠিতে বিধানচন্দ্রকে লিখেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে এ পারে চলে আসার প্রবণতাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত হবে না... অনেক উদ্বাস্তু এলে সেটা পশ্চিমবঙ্গ, এবং বৃহত্তর ভাবে ভারতের পক্ষে সামাল দেওয়া মুশকিল হবে।... উদ্বাস্তুরা যদি আসেই, তবে দেখভাল না করে উপায় নেই... কিন্তু তাঁদের এ পারে আসতে বারণ করাই ভাল।’ উদ্বাস্তুরা যেন সরকারি নিমন্ত্রণ রক্ষায় নিজেদের ভিটে ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে আসছিলেন! কী অবস্থায় পড়লে মানুষ নিজের সর্বস্ব ছেড়ে অচেনার উদ্দেশে পা বাড়ায়, সে কথা জওহরলাল জানতেন না, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। তাঁর স্বভাবত দরদি মন বাংলার উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে কেন কঠিন হয়ে থাকল, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও কেন খোঁজা হল না, তা এক রহস্য।
পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তু সমস্যার তীব্রতা বৃদ্ধি পেলেও তা যে নেহরুকে প্রভাবিত করতে পারেনি, পাঁচ মাস পরের একটি চিঠিতে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। ১৬ অগস্ট তারিখে বিধানচন্দ্রকে লেখা চিঠিতে নেহরু বলছেন, ‘...আমি আগেও বলেছিলাম, পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রচুর মানুষ এ পারে চলে এলে সেই সমস্যার কোনও সমাধান নেই... আমি এখনও মনে করি, যে ভাবেই হোক, এই উদ্বাস্তুর স্রোত রোধ করা প্রয়োজন।’ এখানে একটা প্রশ্ন বড় প্রকট হয়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গে ইচ্ছাকৃত ভাবে উদ্বাস্তু ত্রাণের যথেষ্ট ব্যবস্থা না রাখা কি পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে উদ্বাস্তুর ঢল ঠেকানোর পরিকল্পিত চাল? যাতে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা বুঝতে পারেন, ভারতে এলে জীবনধারণের ন্যূনতম সুবিধাগুলিও পাওয়া যাবে না তার জন্যই কি কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু ত্রাণের বিষয়ে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল? এই প্রশ্নটিও কোনও অজ্ঞাত কারণে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকরা তোলেননি। কংগ্রেস তো নয়ই, বামপন্থীরাও নয়।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক সেই আদি পর্বে কেমন ছিল, তার অব্যর্থ সূচক জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে বিধানচন্দ্র রায়ের চিঠি চালাচালি। জওহরলাল এক চিঠিতে বিধানচন্দ্রকে বললেন, পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা আসলে মানসিক। বিধানচন্দ্র উত্তরে বললেন, পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা অর্থনৈতিক। এই রাজ্যের মানুষের হতাশার মূল কারণ, তাঁদের খাদ্য নেই, কাজ নেই এবং বিশেষত উদ্বাস্তুদের জমি নেই। এই পত্রালাপ ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। ১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা প্রথম খাদ্য আন্দোলন আরম্ভ করেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রফি আহমেদ কিদওয়াই কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু, শত আলোচনাতেও কিছু হল না। প্রধানমন্ত্রী বিধানচন্দ্রকে চিঠি লিখে জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা মূলত রাজনৈতিক এই রাজ্যের জন্য আর খাদ্যভর্তুকি বরাদ্দ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, আড়াই বছরের আলাপ আলোচনার নিট ফল প্রধানমন্ত্রীর চোখে পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাটি বড় জোর ‘মানসিক’ থেকে ‘রাজনৈতিক’ স্তরে পৌঁছতে পারল। পশ্চিমবঙ্গের আসল সমস্যা যে ‘অর্থনীতি’ কথাটি দিল্লি বুঝেও বোঝেনি।

সমস্যাটি অবশ্য কেন্দ্রের না বোঝার নয়। কারণ, আর্থিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়াটি পরিকল্পিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আয়করের হিস্যা বণ্টনের হিসেবও পাল্টে গেল। যে যে রাজস্ব কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার ভাগ করে নিত, আয়কর তার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতার আগে দেশের মোট আয়করে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ ছিল ২০ শতাংশ, অবিভক্ত বোম্বাই প্রদেশেরও তা-ই। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই দুটি প্রদেশই দেশে আর্থিক ভাবে অগ্রগণ্য ছিল। যে ১৫ অগস্টের মধ্যরাত্রে জওহরলাল নেহরু ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসারে’ বেরিয়েছিলেন, সেই রাত্রেই এই হিসেবটি সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। আয়করে পশ্চিমবঙ্গের হিস্যা কমিয়ে করা হল ১২ শতাংশ, বোম্বাইয়ের হিস্যা বেড়ে হল ২১ শতাংশ। দু’টি প্রদেশের জনসংখ্যাই কমবেশি দুই কোটির কাছাকাছি। তা হলে, আয়কর বণ্টনে এই অসাম্য কেন? কেন্দ্র যুক্তি দিল, দেশভাগের ফলে পশ্চিমবঙ্গের আয়তন যে ভাবে কমেছে, আয়করের হিস্যাও সেই অনুপাতেই কমেছে। কিন্তু, বিপুল উদ্বাস্তু আগমনের ফলে রাজ্যের জনঘনত্ব যে দেশের মধ্যে সর্বাধিক হয়েছে এবং হবে, এই কথাটি হিসেবের মধ্যে এল না। ফলে, বাংলার প্রাপ্তির ঘরে তার প্রাপ্যের চেয়ে অনেক কম জমা পড়ল। তার ফলে, স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় দেড় দশক পরে, ১৯৬১ সালে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে আয়কর বণ্টনের যে হিসেব পাওয়া গিয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের ভাগই সবচেয়ে কম। রাজ্য থেকে প্রতি ১০০ টাকা আয়কর আদায় বাবদ রাজ্যে তার যে অংশ ফেরত এসেছে, বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে তা এই রকম: পশ্চিমবঙ্গ ১৬.২ টাকা, বোম্বাই ১৯.৪ টাকা, মাদ্রাজ ৪৮.৬ টাকা, পঞ্জাব ১০৩.৯ টাকা, বিহার ১৮২.৮ টাকা। পশ্চিমবঙ্গের টাকায় অন্য রাজ্য পুষ্ট হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ আরও মার খেল পাটজাত পণ্যের রফতানি শুল্কের বণ্টনের নতুন হিসেবে। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত হিসেব ছিল, এই শুল্কের ৬২.৫ শতাংশ পাবে উৎপাদনকারী রাজ্য, আর ৩৭.৫ শতাংশ পাবে কেন্দ্র। ১৫ অগস্ট স্থির হল, কেন্দ্র পাবে ৮০ শতাংশ, আর উৎপাদনকারী রাজ্য পাবে ২০ শতাংশ। পাট যেহেতু বাংলাতেই একচেটিয়া ভাবে উৎপন্ন হত, ফলে আর্থিক ক্ষতিও হল বাংলারই। অন্য বাণিজ্যিক পণ্যের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মটি প্রযোজ্য হল না। পাট চাষের জন্য পশ্চিমবঙ্গকে অবশ্য আরও একটি ক্ষতি সহ্য করতে হয়েছে। দেশভাগের ফলে পাট চাষের জমির বড় অংশ পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাট চাষ বাড়াতে অনুরোধ করে কাঁচা পাটের ঘাটতি মেটানোর জন্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাষিদের পাট চাষ করতে উৎসাহ দেয়। এ দিকে, ধানের বদলে পাট চাষ করলে কৃষকের ক্ষতি। সেই ক্ষতি পূরণের একটা হিসেব ছিল প্রতি মণ পাটের পরিবর্তে তিন মণ ধান। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে, এক মণ পাটের পরিবর্তে ১৯৪৮-৪৯ সালে কৃষক যে দাম পেয়েছিলেন, তা ২.৯৭ মণ ধানের তুল্য; ১৯৫২-৫৩ সালে মাত্র ১.৮১ মণ আর ১৯৫৬-৫৭ সালে ২.২৪ মণ। অর্থাৎ, এক দিকে কৃষক বঞ্চিত হয়েছেন, অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গকে ভিন রাজ্য থেকে চড়া দামে খাদ্যশস্য কিনতে হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বঞ্চনার বড় সাক্ষপ্রমাণ পঞ্চবার্ষিক যোজনাগুলি। এই রাজ্যের সঙ্গে দ্বিভাষিক বোম্বাই প্রদেশের (অর্থাৎ পরবর্তী কালের মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত) তুলনা করলেই তা স্পষ্ট হবে। প্রথম পরিকল্পনায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ১৫৪ কোটি টাকা, বোম্বাই প্রদেশের জন্য ২২৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় যোজনায় পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ ১৪৫ কোটি টাকা, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতের একত্রে (তত দিনে বোম্বাই প্রদেশ ভেঙে এই দুটি পৃথক রাজ্যের জন্ম হয়েছে) ৩৫০ কোটি টাকা। তৃতীয় যোজনায় বরাদ্দ যথাক্রমে ২৫০ কোটি টাকা এবং ৬২৫ কোটি টাকা। চতুর্থ যোজনায় ৩২২ কোটি টাকা এবং ১৩৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, স্বাধীনতার মুহূর্তে যে পশ্চিমবঙ্গ আর্থিক দিক থেকে বোম্বাই প্রদেশের সঙ্গে সম্যক ভাবে তুলনীয় ছিল, চারটি পঞ্চবার্ষিক যোজনা তাকে ঠেলে দিল পিছনের সারিতে। বস্তুত, দ্বিতীয় যোজনা থেকেই পশ্চিমবঙ্গের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ সর্বভারতীয় গড়ের তুলনায় কম ছিল। দ্বিতীয় যোজনায় মাথাপিছু ব্যয়বরাদ্দের জাতীয় গড় ছিল ৫১ টাকা, পশ্চিমবঙ্গের ৪৮ টাকা। তৃতীয় যোজনায় সংখ্যাদুটি যথাক্রমে ৯১ টাকা এবং ৮০ টাকা। চতুর্থ যোজনায় ১১৯ টাকা এবং ৬৯ টাকা।
যে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের দৌলতে পশ্চিমবঙ্গ (এবং বিহার) ভারতের শিল্প-রাজধানী হতে পারত, ১৯৫৬ সালের মাসুল সমীকরণ নীতির দৌলতে রাজ্যের সেই সুবিধাটি সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি যায়। তাতে লাভ সবচেয়ে বেশি হয় মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতের। কিন্তু, এই মাসুল সমীকরণের ভুলটির দায় বিধানচন্দ্রের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় হবে। তিনি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিশ্বাস করেছিলেন ভেবেছিলেন, তিনি অন্য রাজ্যের সুবিধার কথা চিন্তা করলে অন্য রাজ্যও পশ্চিমবঙ্গের কথা ভাববে। কেন্দ্রীয় সরকার এই রাজ্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। ভাবনাটি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হল। পশ্চিমবঙ্গ লৌহ-ইস্পাতের ক্ষেত্রে মাসুল সমীকরণ মেনে নেওয়ার পরে অন্য যে ক্ষেত্রেই এই দাবি তুলেছে, তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। পেট্রোপণ্যের মাসুল সমীকরণের দাবি মানা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে সিমেন্ট শিল্প গড়ে তোলার জন্য পণ্য মাসুলে পাঁচ টাকা ছাড় চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। বিধানচন্দ্র থেকে প্রফুল্ল সেন কোনও মুখ্যমন্ত্রীই সেই আবেদন মঞ্জুর করাতে পারেননি। মহারাষ্ট্রের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে তুলোর দাম বেশি থাকায় তা সমান করার দাবি জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, পশ্চিমবঙ্গে বস্ত্রশিল্পে মজুরির হার বম্বের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম, ফলে তুলোর দাম সমান হলে বম্বের বস্ত্রশিল্প মার খাবে!
এই প্রসঙ্গেই একটা প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন শিল্পক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়ল কেন? কেন বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কলকাতা থেকে তাদের সদর দফতর গুটিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিল? প্রশ্নটি উঠলেই জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ইত্যাদির কথা ওঠে। ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা নিশ্চয়ই অস্বীকার করার নয়, কিন্তু শুধু জঙ্গি শ্রমিক রাজনীতিই যদি শিল্পের পতনের কারণ হত, তা হলে মহারাষ্ট্রও শিল্পহীন হত। এবং, শ্রমিক আন্দোলন জঙ্গি চেহারায় পৌঁছনোর আগেই পুঁজির পলায়ন আরম্ভ হয়েছিল। এর পিছনে যে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির ভূমিকা ছিল, তা অস্বীকার করা যাবে না। এক দিকে রাজ্যটি কেন্দ্রের আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত, অন্য দিকে মাসুল সমীকরণের ফলে অতীত-সুবিধাহীন দেওয়াল লিখন পড়তে বিনিয়োগকারীদের অসুবিধা হয়নি।
প্রশ্ন হল, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকরা কেন মেনে নিলেন এই বঞ্চনা? কংগ্রেস নেতারা কেন তাঁদেরই কেন্দ্রীয় সরকারকে এই রাজ্যের প্রতি অনুকূল হতে বাধ্য করতে পারলেন না? কেন বামপন্থীরা ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-কে একটা হাস্যকর স্লোগানেই আটকে রাখলেন সেই রাজনীতিকে তার যুক্তিসঙ্গত পরিণতিতে পৌঁছে দিতে পারলেন না? প্রশ্নগুলি জরুরি। এত বছর কেটে গেল, এখনও এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হল না। কিন্তু, এই বার খুঁজতেই হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.