|
|
|
|
আত্মসমালোচনায় দীপক |
বুদ্ধ-দীপকেরও গ্রেফতার দাবি করল সরকার পক্ষ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও ঝাড়গ্রাম |
কঙ্কাল-কাণ্ডের সূত্রে এ বার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের গ্রেফতারের দাবি বিধানসভায় তুলল সরকার পক্ষ। তাদের দাবি তাঁর পরিকল্পনাতেই গোটা জেলায় সন্ত্রাস চালিয়েছে সিপিএম। যাঁকে নিয়ে এত হইচই, সেই দীপক সরকারের গলায় এখন বেনজির আত্মসমালোচনার সুর। ঝাড়গ্রামে দলের এক সভায় তিনি বলেন, “যে পদ্ধতিতে কাজ করছি, তাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। তা শোধরাতে হবে। নিজের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।”
|
ঝাড়গ্রামে কর্মিসভা সেরে
ফেরার পথে দীপক সরকার। |
প্রত্যাশিত ভাবেই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের গ্রেফতারের জের শুক্রবার এসে পড়েছিল বিধানসভার অধিবেশনে। সুশান্তবাবুর জামিন নাকচ করার জন্য আদালতকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিন বিধানসভায় বলেন, “সুশান্তবাবু যখন ওই কাজগুলি করেছিলেন, তখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীই পুলিশমন্ত্রী ছিলেন। কী ভাবে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, কী ভাবে মৃতদেহ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল, সবই পুলিশমন্ত্রী জানতেন। আর সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকের অঙ্গুলি হেলনে গোটা জেলার পুলিশ কাজ করত। সিপিএম নিজের হাতে |
|
আইন তুলে নিয়ে যে ভাবে বিরোধীদের উপরে অত্যাচার চালাত, তাতে পূর্ণ মদত দিয়েছেন তৎকালীন পুলিশমন্ত্রী এবং জেলা সম্পাদক। তাঁদের দু’জনকেই গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।” শোভনবাবুর যুক্তি, অপরাধ করার মতোই অপরাধে সহায়তাও আইনের চোখে ‘দণ্ডনীয়’।
বস্তুত, এর আগে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই বুদ্ধবাবুর গ্রেফতারি চেয়ে সরব হয়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তখন সরকার ছিল বামফ্রন্টের এবং পুলিশ দফতর ছিল বুদ্ধবাবুরই হাতে। এখন রাজ্যে শাসক দল তৃণমূল এবং মমতাই মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী। তাই বিধানসভার অন্দরে সরকারি পক্ষের এমন দাবি ভিন্ন ‘তাৎপর্য’ বহন করছে বলে শাসক শিবিরের ব্যাখ্যা।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দলে তাঁর ঘনিষ্ঠতম সহযোগী গ্রেফতার হওয়ার পরের দিনই সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ‘দোর্দণ্ড প্রতাপ’ সম্পাদক দীপকবাবুর গলায় শোনা গিয়েছে আত্মসমালোচনার সুর। সরাসরি সুশান্তবাবুর প্রসঙ্গে না-গেলেও এ দিন ঝাড়গ্রামে দলীয় সদস্যদের এক সভায় দীপকবাবু বলেছেন, “আমিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই। আমি যে পদ্ধতিতে কাজ করেছি, তাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। নিজেকে পুনর্গঠিত করতে হবে। আচার-আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যের আগে নিজের দোষ-ত্রুটি খতিয়ে দেখতে হবে।” বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহল-সহ জেলায় ঘুরে দাঁড়াতে ‘প্রতিরোধ’ তত্ত্বই প্রধানত প্রচার করতেন দীপকবাবুরা। সে দিক থেকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকের মন্তব্য নিশ্চিত ভাবেই ভিন্ন সুরে বাঁধা।
বিধানসভায় এ দিন যখন সুশান্তবাবুর প্রশ্নে সরকার পক্ষের বিধায়কেরা সরব হন, তখন অবশ্য বিরোধীরা সভায় ছিলেন না। রাজ্য জুড়ে বামপন্থী নেতা-কর্মীদের উপরে ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে এ দিনই বামফ্রন্টের সমাবেশ ছিল বিধানসভার অদূরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। সেখানে যাওয়ার আগে ওই বিষয়েই একটি মুলতবি প্রস্তাব এনেছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না-দেওয়ার প্রতিবাদে প্রথমে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ এবং তার পরে সভা থেকে ওয়াক আউট করেন বাম বিধায়কেরা। সাময়িক ভাবে বিরোধীশূন্য সভাতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকের গ্রেফতারের দাবি তোলেন শোভনবাবু। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সভায় জানান, মেদিনীপুর সিজেএম আদালতের বিচারক তাঁকে ফোন করে সুশান্তবাবুর জামিন নাকচের বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন। সুশান্তবাবু বিধায়ক, তাই আইনত স্পিকারকে বিষয়টি জানাতে হত।
বিধানসভার প্রথমার্ধ এ দিন যথেষ্ট উত্তপ্তই ছিল। বাম বিধায়কদের ওয়াক আউটের পরে তৃণমূলের তাপস রায় স্পিকারের কাছে জানতে চান, পুলিশ যাঁকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে, তাঁকে বিধানসভার বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হবে কেন? প্রসঙ্গত, তাপসবাবুর নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটিরই সদস্য সুশান্তবাবু। জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ গ্রেফতার করার পরে সুশান্তবাবু কোন যুক্তিতে সভার সদস্য থাকেন? সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, গোটা অবিভক্ত মেদিনীপুরের সর্বত্র খুন-জখম-সন্ত্রাস চালিয়েছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। সে সবেরও তদন্ত দরকার।
পরে রানি রাসমণির সমাবেশে সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিরোধী দলকে বেশি সময় দেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের যা প্রাপ্য অধিকার, সেটাই দেওয়া হচ্ছে না। যে দাবিতে আমাদের এই অবস্থান, তা নিয়ে মুলতবি প্রস্তাবের উপরে বলতে দেওয়া হল না। আমি বললাম, আমাদের মাত্র ৬১ জন বিধায়ক। ভয় পাচ্ছেন কেন? কিন্তু ওঁদের সাহস নেই!” সূর্যবাবুর আরও বক্তব্য, “সুশান্তবাবুর কী হয়েছে, না হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মামলা হচ্ছে, আইনি লড়াই হবে। কিন্তু বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করছেন কেন?” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও সমাবেশে বলেন, “মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না-দেওয়া গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরার সামিল!” |
|
|
|
|
|