স্বস্তি মুর্শিদাবাদে, শঙ্কিত নদিয়া
ঝোড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের তারটা ঝুলেই ছিল। শুক্রবার দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে আচমকাই তা খসে পড়ে। সেই সময়ে নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন পিয়ারি বেগম (৩৬) নামে গ্রামেরই এক মহিলা। বিদ্যুৎবাহী তারে জড়িয়ে ছটফট করতে থাকেন তিনি। তা দেখে ছুটে এসেছিলেন গ্রামের নুরেমা বেওয়া (৫৫)। ঘটনাস্থলেই মারা যান দু’জনেই।
ঘটনাটি মুর্শিদাবাদের স্বরমস্তিপুর গ্রামের। কান্দি ব্লকের ওই দুর্ঘটনা ছাড়া বৃষ্টি বিঘ্নিত মুর্শিদাবাদে বন্যা-পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক বলেই জেলা প্রশাসনের দাবি। বানভাসির বলি হয়েছে নদিয়ার নবদ্বীপেও। গঙ্গার পূর্বপাড়ের চরে ধান কাটতে গিয়েছিলেন স্থানীয় তিন গ্রামবাসী। সেই সময়ে আচমকা জলের তোড়ে ভেসে যান শক্তি ঘোষ (৬০)। কোলর ডাঙা গ্রামের অন্য দুই বাসিন্দা পানে উঠলেও শক্তিবাবু তলিয়ে যান। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তিলপাড়া, দেওচা ও বৈধরা বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পরিমান শুক্রবার আরও কমে গিয়েছে। বৃষ্টিও ধরেছে কিছুটা। মাসাঞ্জোর জলাধার থেকে গত দু’দিন ধরে তেমন জল ছাড়া হয়নি। ফলে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় বন্যা কবলিত এলাকার সামগ্রিকভাবে উন্নতিই হয়েছে। ব্যতিক্রম সুতি।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয়কুমার ঘোষ বলেন, “জল কমতে থাকায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে গ্রামে জল ঢোকা অনেকটাই কমেছে। কান্দি ও জঙ্গিপুর মহকুমায় পর্যাপ্ত ত্রিপল ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।” তবে জেলা প্রশাসন দাবি করলেও এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগও রয়েছে।
সেচ দফতরের কান্দি মহকুমা আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস বলেন, “বন্যা পরস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। মাসাঞ্জোর-এ জল রয়েছে বিপদ সীমার প্রায় আড়াই মিটার নীচে।” কান্দি মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “মহকুমার সব এলাকা থেকেই বন্যার জল নামতে শুরু করেছে। ফলে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আংশিক ও পুরোপুরি মিলিয়ে কান্দি মহকুমায় প্রায় দেড় হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
এ দিন তিলপাড়া থেকে ৪৫৬০ কিউসেক, দেউচা এবং বৈধরা জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়েছে যথাক্রমে ৪৪১ এবং ১৬৮১ কিউসেক। তবে, হিংলো এবং মকুটমণিপুর জলাধার থেকে ৩৮৮৩ এবং ২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে।
নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রোশমি কমল বলেন, “নাকাশিপাড়া ব্লকের বেশ কয়েক জনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়ছে। কালিগঞ্জ ব্লকে নতুন করে কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে।” জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপ্লাবিত এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতে ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নদিয়া জেলা সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার যিশু দত্ত বলেন, “শান্তিপুরের মেতিডাঙার বাঁধের ১০০ মিটার এলাকা ভেঙে গিয়েছে। ওই এলাকার বাঁধ পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। নদীতে জল বৃদ্ধির হারও অনেকটাই কমে গিয়েছে। আগে ঘণ্টায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার জল বাড়ছিল। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার থেকে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত জল বাড়ছে। নদীর জল বৃদ্ধির হার কমতে থাকায় অবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।”
শুক্রবার ঝড়ের ফলে গাঙনাপুর থানার ঘাটিগাছায় বিশলা গাছ উপড়ে রাত ৮টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা ধরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে গাছ কেটে সরানো হলে যানবাহন চালাচল স্বাভাবিক হয়।
চাকদহ ব্লকের চাঁদুরিয়া-১ পঞ্চায়েত, ২ নম্বর পঞ্চায়েত, এবং কাছরাপাড়া পঞ্চায়েতে এলাকায় শুক্রবার ভাগীরথীর জল ঢুকতে শুরু করেছে। কল্যাণী পুরসভার বন্যা কবলিত এলাকার ৩৪টি পরিবারকে, রানাঘাট-১ ব্লকের রামনগর-১ পঞ্চায়েত এলাকার বন্যাকবলিত ৭০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.